Thursday, August 21, 2025
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী, লন্ডনের বাসিন্দা

আজ প্রথম হাততালির শব্দ কোনও আনন্দ ছড়াল না। ভিজিয়ে দিল আমার চোখ, বাষ্প জমাট বাধছে গলার কাছে। বুকের ভিতর কিছু করতে না পারার অসহ্য যন্ত্রণা। একশো, হাজার —জানি না? কত-কত নার্স, ডাক্তার, দিন-রাত এক করে, সংসার ভুলে, মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে এক কঠিন লড়াইয়ে বদ্ধপরিকর। পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলার জন্য। আজ তাঁরাই আমাদের ঈশ্বর। তোমাদের স্যালুট।

আজ প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই দেশের আকাশ আমার নীরব সঙ্গী। আমার ছোট্ট মন(আমার কন্যা) আর কৌশিক(আমার স্বামী)- এর সাথে ইংল্যান্ডে এসেছি। ২০১৫-সালের মে মাসে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে মনে হয়েছিল— আমার শৈশবে দেখা সেই ক্যালেন্ডারের পাতা— যেখানে নীল আকাশ, সাদা মেঘ, দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ মাঠ, রঙবেরঙের ফুল ছিল- আজ তারা যেন সব জীবন্ত হয়ে আমায় নতুন করে নতুন স্বপ্নে ভাসিয়ে দিল। আর আমি খুঁজে পেলাম জীবনের আরেক অধ্যায়।

দু’মাস আগেও যেমন ছিল ছবিটা

শান্ত শহর, হাসিখুশি দেশ , পথচলতি অচেনা মানুষ এর “হাই” বলে একগাল হাসি আমার আপন শহর, আপনজনদের থেকে দূরে থাকার বুকের টন টন করে ওঠা ব্যথাটাকে অনেকটাই কমিয়ে দিত। কিন্তু আজ, এ কী হল? আজ নীল আকাশে মন খারাপের ছায়া। বাগানে টবের জন্য কেউ আজ ফুলের চারা কিনব বলে সুপারমলে ছুটছি না। বসন্ত এসে গেছে বলে নিরুদ্দেশের যাওয়ার প্ল্যান করছি না। আমার মেয়ের মতো সমস্ত শিশুরা আজ কাচের জানালায় মুখ দেখছে। একটা শব্দ এক রাতে যেন বড়ো করে দিল ওদের— করোনা আতঙ্ক। প্রধাণমন্ত্রীর কথামত ‘বার্থ ডে’ গানের সাথে হাত পরিষ্কার রাখছে। এক্সারসাইজ করছে। আর তার সাথে আমার বারবার চোখ চলে যাচ্ছে নিউজ পেপারে, পাতায়। আজ প্রায় এই দেশের আঠারো হাজার মানুষ অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর। প্রায় এক হাজার উনিশ জন চিরকালের জন্য হারিয়ে গেল। তাদের কি আজ যাওয়ার ছিল ?

এখনকার লন্ডন

এই শহরের কত বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে রোজ চলার পথে দেখতাম। আর অবাক হতাম তাঁদের অফুরান প্রাণশক্তি দেখে। মনে মনে শ্রদ্ধা হত। একগাল আভিজাত্য হাসিতে দেখা হবে তো তোমাদের সাথে আবার?
কত মানুষ তার কাছের মানুষকে হারালো। কত মানুষ আজ কর্মহীন। তবু বাঁচার জন্য লড়াই চলছে। গভর্নমেন্ট থেকে অনেক ভালো কিছু ব্যবস্থা করে চলেছে। যেমন প্রতি শহরে নতুন হাসপাতাল। ১১১— রিং করলেই ডাক্তার আর পুলিস নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স আসছে। বয়স্কদের আর কর্মহীন মানুষদের অর্থ আর খাবারের বন্দোবস্ত।
আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি সেই ভোরের, যেখানে পাখির কাকলি জানাবে তোমার মেয়ে আবার স্কুল যাবে। অপরাহ্ন অপেক্ষমান বন্ধুর আশায়, গোধূলি দেখাবে আশার আলো। কৌশিক অফিস থেকে ফিরেই ল্যাপটপ খুলে চা নিয়ে বসবে।

আমাকে আর খালি ব্যাগ নিয়ে ফিরতে হবে না স্টোর থেকে। অ্যাম্বুলেন্সের বারবার-ঘণ্টায় বুক কেঁপে উঠবে না। ফুলের রঙে রঙিন হয়ে উঠবে জীবন। বদ্ধ জানালা খুলে ঘরে আসবে আশার আলো। ঘুমন্ত শহর আবার বাঁচুক রাজার মেজাজ নিয়ে। আবার সুস্থ হয়ে বাঁচব সবাই একসাথে।
রবিঠাকুর আজ বড় মনে পড়ছে তোমার কথা। তুমি শিখিয়েছিলে, “ বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা, বিপদে আমি না যেন করি ভয়” ।

Related articles

নিরপেক্ষতা, মর্যাদা, আলোচনা: উপরাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নে সুদর্শন রেড্ডির শপথ

আমার জীবন জনগণের সেবায় নিয়োজিত। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে একজন আইনের ছাত্র হিসেবে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রথা,...

“ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ম্যাচটা নিজেকে প্রমাণ করার ছিল”: জবি জাস্টিন

ইস্টবেঙ্গল (Eastbengal) তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল। একটা সুযোগ খুঁজছিলেন নিজেকে প্রমাণ করার। ডুরান্ডের (Durand Cup) সেমিফাইনালেই প্রাক্তন দল ইস্টবেঙ্গলের...

অভিষেকের পেপটকেই ইস্টবেঙ্গল বধ DHFC-র: ফাঁস করলেন মানস ভট্টাচার্য

প্রথমবার ডুরান্ড খেলতে নেমেই বাজিমাতের পথে ডায়মন্ড হারবার এফসি। আর দলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) পেপটকেই (pep...

আমন্ত্রণ আসেনি: শুক্রবার কী করবেন দিলীপ ঘোষ, অকপট, অভিমানী

কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি। যে দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বঙ্গে বিজেপির উত্থান, শুভেন্দু-সুকান্ত জমানায় সেই দিলীপকেই...
Exit mobile version