নিজামউদ্দিনে ধর্মীয় সমাবেশের সিদ্ধান্ত কার ছিল, জানতে চাইলেন উদ্বিগ্ন মমতা

দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে তবলিগি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশ এবং তার পরে বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে কয়েক হাজার লোকের থেকে যাওয়াকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশেই। মরকজ থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফিরে গিয়ে ইতিমধ্যেই অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকেই করোনা সংক্রামিত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন এবং চিকিৎসা চলছে। শুধু ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে নয়, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিয়ে জমায়েত করেছিল তবলিগ।
দিল্লির সেই ঘটনা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘ঘৃণার রাজনীতি করছে বিজেপি, বাংলার কথা বলতে লজ্জা করে না!’ তাঁর অভিযোগ, দিল্লির হিংসা থেকে নজর ঘোরাতে করোনা-ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত প্রচার করছে কেন্দ্র। তিনি বলেন,  ‘‌দিল্লিতে তবলিগি জামাত–এর উদ্যোগে ধর্মীয় জমায়েত হওয়ার খবর আমাদের আগে জানানো হয়নি। ১৩ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, দেশে করোনা নেই। আমরা আগে জানতে পারলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এখনও বলছি, যাঁরা মিশে ছিলেন তাঁরা সরকারকে রিপোর্ট করুন, তাহলে তাঁদের কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। বিদেশ থেকে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করার দায়িত্ব বিদেশ দফতরের । তবুও আমরা খবর পেয়ে সহযোগিতা করছি।
কিন্তু যে দিন দিল্লির মরকজ নিজামউদ্দিনে জমায়েত হয়েছিল, করোনাকে তখনও দেশের সরকার মহামারি হিসেবে দেখছিল না বলে জানিয়েছেন মমতা।
গোটা বিশ্ব যখন করোনা সংক্রমণের ত্রাসে কাঁপতে শুরু করেছে এবং জমায়েত এড়াতে যখন স্কুল-কলেজ, অফিস-কাছারি বন্ধ করে দেওয়া শুরু হয়েছে, সেই সময়ে কোন বুদ্ধিতে ওই রকম একটা জমায়েত তবলিগ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল।
যাঁরা গিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের খুঁজে বার করার চেষ্টা করছে এবং ইতিমধ্যেই তাঁদের অনেককে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা যাতে নিজে থেকেই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, সে আহ্বানও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্যকে সতর্ক করেছে। মরকজ থেকে কারা ফিরেছেন, দ্রুত খুঁজে বার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনগুলিকে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারও মরকজফেরতদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারই জানান যে, কেন্দ্রের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য সরকার সক্রিয় হয়েছে । মঙ্গলবারের মধ্যেই ৫৪ জনকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন যে, বাঁকুড়া, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষি‌ণ ২৪ পরগনায় আরও কয়েক জনের খোঁজ মিলেছে এবং তাঁদেরও কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে বেশি চাঞ্চল্য তৈরি যেন না করা হয়, সতর্কবার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে নিজামউদ্দিনে যাঁরা গিয়েছিলেন, তাঁদের নিজেদেরই পুলিশকে গিয়ে সে কথা জানানো উচিত বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মন্তব্য করেছেন। তবে নিজামউদ্দিনের জমায়েত নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করার চেষ্টার বিরুদ্ধে ফের সতর্কবার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা নিয়ে জাতের নামে বজ্জাতি করে লাভ নেই।’’
জেলায় জেলায় বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় ঠিক করে লকডাউন বিধি মেনে চলা হচ্ছে না বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন অসন্তোষও প্রকাশ করেন। অনেকেই হাটেবাজারে যাচ্ছেন বা রাস্তায় বেরিয়ে আড্ডা মারছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাজারে বা দোকানে গেলেও কেউ যেন ঠাসাঠাসি করে ভিড় না জমায়, প্রত্যেকে যেন পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব বহাল রাখেন— সে বিষয়ে এ দিন তিনি ফের সতর্ক করেন। আর ঘরে থাকতে অসুবিধা হলেও এখন ঘরেই থাকতে হবে, সে কথাও মনে করিয়ে দেন। আগামী দু’সপ্তাহ করোনা মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান।

Previous articleকেঁদে ফেললেন হিনা!!!
Next articleBREAKING : এ বছর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবাই পরের ক্লাসে উত্তীর্ণ, ঘোষণা রাজ্য সরকারের