মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই রসিকতা আর কতোদিন সহ্য করতে হবে!!!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

রোজ সকালে উঠে নিজের গায়ে চিমটি কেটে দেখি জ্বর হয়নি তো? কেশে দেখার চেষ্টা করি কাশি হয়নি তো? করোনা হয়নি তো? পথে ঘাটে ঘুরি। খবর সংগ্রহ করতে। আমাদের জন্য অবশ্য সরকারের ভাবতে ভারি বয়েই গিয়েছে!

আমার স্ত্রী স্বাস্থ্যকর্মী। সব ছুটি বাতিল। রোজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সঙ্গী আমি। নূন্যতম গাড়ি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা পর্যন্ত অনুভব করেনি আপনার সরকার। কিন্তু ওরা ঢাল-তরোয়ালবিহীন নিধিরাম সর্দার! দেওয়া হয়েছে শুধু হ্যান্ড গ্লাভস, আর ততোধিক পাতি সার্জিক্যাল মাস্ক। ব্যাস। বলছে পেশেন্ট দেখ। কে আক্রান্ত, কে নয়, কিছুই জানা নেই। হলে পরে দেখা যাবে? তাতে তুমি যদি আক্রান্ত হও, যাবে কোয়ারান্টাইনে। হাসপাতালের পাশেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। কী আশ্চর্য! প্রথমে কয়েকজন পুলিশ। এখন সেটাও নেই। গড়ের মাঠ। সকাল হলেই রাস্তায় ভিড়। কী হচ্ছে না, বাজার হচ্ছে। সংখ্যালঘু এলাকায় একটু যান। ওখানে জীবন চলছে একই গতিতে। তবু বাড়ি ফিরে টিভিতে দেখছি ‘ফাইট করোনা ফাইট। আমরা করব জয়!’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাথাটা বিগড়ে গেল যখন দেখলাম আমাদের দেশে কিট নেই, র‍্যান্ডম পরীক্ষা দূর অস্ত। আর আপনার সরকার দু’দফায় সার্জিক্যাল কিটস পাঠাল সার্বিয়াতে। সব মিলিয়ে ৬৫টন। আর আমার স্ত্রীর মতো যারা স্বাস্থ্যকর্মী তাঁদের কিট কে দেবেন প্রধানমন্ত্রী? তাঁদের জীবনের বুঝি মূল্য নেই? নাকি তাঁরা সব বানের জলে ভেসে এসেছে? মানুষ বাড়িতে বসে থাকবে আর ওরা লড়াই করবে ময়দানে। কিন্তু ওদের জন্য কি করতে পেরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? শুধু বিকেল পাঁচটায় ঘন্টা বাজানো, থালা বাজানো বা শাঁখ বাজানো? কর্তব্য শেষ?ন্যূনতম সুরক্ষাটুকু দিতে পারেননি। আর সার্বিয়াতে পাঠাচ্ছেন সার্জিক্যাল কিট?

রোজ সকালে উঠে ভাবি করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপনি কী কী করছেন তা দফায় দফায় জানাবেন। গঠনমূলক কিছু। প্রথমে দেখলাম ‘জনতা কারফিউ’। থালা, ঘটি বাজানো, আর এবার আলো নিভিয়ে ৯ মিনিটের দিয়া জ্বালানো। তাতে ভারতবাসীর কী লাভ হবে জানাবেন? কিসের একতা? কিসের সংহতি। লড়াই করার অস্ত্র দিচ্ছেন না আর কথার ছলোনায় ভোলানোর চেষ্টা! কিল মারার গোঁসাই!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
১.দেশে মাস্ক নেই। যেগুলো মুখে লাগানো হচ্ছে তাতে কাজ হয় না। এন-৯৫ মাস্ক নেই। কোথাও যদি পাওয়া যায় দাম ৩৫০টাকা!

২. হ্যান্ড গ্লাভস নেই। কোথাও পাওয়া গেলে জোড়া ১০০টাকা!

৩. স্যানিটাইজার নেই। ডাক্তাররা বানিয়ে নিতে বলছেন। কিন্তু অ্যাল্কোহল নেই বাজারে। আর পেলেও ৭০% অ্যাল্কোহল সাধারণ মানুষ কীভাবে বুঝবেন? বানাতে পারবেন?

৪. কিট নেই। স্বাস্থ্যকর্মীদের বলা হচ্ছে ট্রান্সপারেন্ট রেনকোর্ট পড়তে! ভাবুন কোথায় রয়েছি! স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ শেষ করে ডিস্টেরিলাইজড হওয়া বাধ্যতামূলক। হাসপাতাল ভাবছেই না! ওই অবস্থায় বাড়িতে ফিরছেন কারওর সঙ্গে!

৫. যেখানে সামান্য জ্বর হলেই আতঙ্ক, সেখানে জ্বর আর সর্দি-কাশি হলে কোনও টেস্টই হচ্ছে না। ডাক্তাররা অধিকাংশ জায়গায় দেখছেন না। আর সেটা যখন ধরা পড়ছে, তখন অনেক দেরি, কিংবা আরও অনেকে সংক্রামিত।

৬. নতুন আতঙ্ক নিজামুদ্দিন। এ তো সর্ষের মধ্যে ভূত। কোথায় মানুষগুলো গেছে, অর্ধেকের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদের গোঁড়াতেই না আটকে এখন ৯মিনিটের ঘর অন্ধকার করার রসিকতা কেন? আপনার দেশের উদ্দেশে ভাষণে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, পোশাক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা, নিজামুদ্দিন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ, মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি আক্রান্ত মানে অশনিসঙ্কেত, ১৫ তারিখের পর লক ডাউন তুললে আদৌ করোনা রোখা যাবে কিনা সে নিয়ে আলোচনা নেই। আপনি শুধু ঘন্টা বাজাচ্ছেন, আলো নেভাচ্ছেন, একবার টেলি কনফারেন্স করছেন ক্রিকেটারদের সঙ্গে, তো ফের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলি তারকাদের সঙ্গে। লড়াই করার এই প্রাথমিক শর্তগুলো যদি না করেন, তবে ফাঁপা আওয়াজ করে দেশবাসীকে কেন ঠকাচ্ছেন?

৭. তার সঙ্গে শুরু হয়েছে এ রাজ্যে করোনায় মৃতদের সংখ্যা চাপার খেলা। যেভাবে আগে ডেঙ্গুতে দেখেছি। হাসপাতালগুলোতে তো এখন বিভীষিকা। কেউ করোনা আক্রান্ত হলেও মুখে কুলুপ। কেউ মারা গেলেও কুলুপ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মৃতের সংখ্যা একরকম বলছেন, আর তারপরেই মুখ্যসচিব কমিয়ে বলছেন। মনে হচ্ছে, ডাক্তার সুকুমার মুখোপাধ্যায়দের তুলনায় মুখ্যাসচিব রাজীব সিনহা বড় ডাক্তার। তিনি নবান্নে কেন, চেম্বার খুলে বসুন ধর্মতলায়। প্রচুর পেশেন্ট পাবেন।

ওই গায়কের গানের ওই লাইনগুলো বড্ড মনে পড়ে যাচ্ছে। “হাসপাতালের বেডে টিবি রোগীর সাথে/ খেলা করে শুয়োরের বাচ্ছা/ তবু রেডিওটা টিভিটার সাথে সুর ধরে/ সারে জাঁহাসে আচ্ছা!!!… মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই ‘শুয়োরের বাচ্চা’র সঙ্গে আজ, এখন, এই মুহূর্তে আমার বড্ড মিল। বরং ওরা দেদার আনন্দে আছে। ওরা খেতে পাচ্ছে না বলে কত লোকের বুক ফাটছে। অথচ ওদের করোনা আতঙ্ক নেই। আর আমি মরছি, দুবেলা মরছি, রোজ মরছি। আমার মরায় আপনার অবশ্য কী যায় আসে!

Previous articleবড় খবর: মৃতদেহ থেকে ছড়ায় না করোনাভাইরাস, জানাল স্বাস্থ্য দফতর
Next articleআইসোলেশন ওয়ার্ডের অভিজ্ঞতা কেমন? জানালেন মনামী