উপেক্ষা করে নয়, প্রশ্নের উত্তর না দিলে রাজ্যের লড়াই নিয়েই প্রশ্ন উঠবে

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এ রাজ্যে একদম শুরুর দিন থেকেই সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এই লড়াই প্রশংসিত হয়েছে সর্বস্তরে৷ বিরোধী শিবিরও উচ্চকন্ঠে অভিনন্দন জানিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর এই লড়াইকে৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসার জোয়ার দেখা গিয়েছে৷ রাজ্যের শাসক দলের তরফেও একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছিলো, যেখানে দেখা গিয়েছে, গোটা শহর নিদ্রিত, আর মুখ্যমন্ত্রী একা পাঁচিলের ওপর দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন রাজ্যবাসীকে, যাতে রাজ্যে হঠাৎ করোনাভাইরাস না ঢুকতে পারে৷

এর পরই যে কোনও কারনেই হোক পরিস্থিতি একটু বদলে যেতে শুরু করলো৷ মনে হচ্ছে, সুর-টা একটু হলেও কেটে যাচ্ছে৷ এতটাই বদলালো যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত গত ৬ এপ্রিল বলতে হলো, “একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেল করোনা নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে”৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে৷ এই কাজ করছে একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেল”৷

মুখ্যমন্ত্রী সেদিন বলেননি, কোন রাজনৈতিক দলের আইটি সেল ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে৷ তবে মোটামুটি সবাই জানেন, মুখ্যমন্ত্রী তোপ দেগেছিলেন বিজেপি’র আইটি সেল এবং সেই সেলের চেয়ারম্যান অমিত মালব্যকে লক্ষ্য করেই৷ এটা ঠিক অমিত মালব্য নিয়ম করে রোজ দু’বেলা পরের পর টুইট করে বাংলার সরকারকে ‘শূলে চড়িয়ে’ চলেছেন৷ কখনও বলছেন, করোনা-যুদ্ধে কার্যত হেরে বসে আছে বাংলা৷ আক্রান্ত-মৃতের তথ্য গোপন করা হচ্ছে, এ রাজ্যের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আতঙ্কের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন, কারন তাদের PPE নেই৷ কখনও বলছেন এ রাজ্যে তবলিগি-জামাত ফেরত প্রতিনিধির সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ মালব্য বলেছেন, সরকার ও কলকাতা পুরসভার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় মৃতের সংখ্যায় হেরফের হচ্ছে৷ এ ধরনের অজস্র টুইটে রাজ্যকে কাঠগড়ায় তুলেই চলেছেন৷ এই টুইট-বার্তা বিশ্বাস করার লোকের অভাব নেই রাজ্যে৷ এসব টুইট দেখে রাজ্যবাসীরও একটা ধারনা হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত-মৃতের যে সংখ্যা সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে সাধারন মানুষের নিজস্ব যোগাযোগে ও সূত্রে পাওয়া তথ্যের বোধহয় হেরফের হচ্ছে৷ এর ফলে রাজ্য সরকারের বলিষ্ঠ লড়াই নিয়ে প্রশ্নও তৈরি হচ্ছে৷

ফলে, করোনা-যুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিক, সাহসী এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ কিছুটা হলেও লঘু হয়ে পড়ছে৷ আর এই কাজটাই ওই আইটি সেল করতে চাইছে৷

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্যই বলেছেন, “এ রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে৷ এই কাজ করছে একটি রাজনৈতিক দলের আইটি সেল”৷ কিন্তু এইটুকুই কি যথেষ্ট?

জনমানসে যে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, তা দূর করতে হলে এ ধরনের প্রতিটি টুইটের পূর্ণাঙ্গ উত্তর দেওয়া প্রয়োজন ৷ প্রকৃত তথ্য প্রকাশ্যে এনে ওই সব টুইটের বিশ্বাসযোগ্যতা শূন্য করে দেওয়া দরকার৷ অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর, এই অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া বা উপেক্ষা করা হলে সাধারন মানুষের মধ্যেও তো একরাশ প্রশ্ন ভিড় করছে৷
রাজ্য সরকার দ্রুত এগিয়ে এসে সব প্রশ্নের উত্তর দিক, না হলে করোনা-আতঙ্ক রাজ্যবাসীর ঘাড়ে যে চেপে বসছে !

Previous articleবিনামূল্যে রান্নার গ্যাস দেবে কেন্দ্রীয় সরকার! কারা, কীভাবে পাবে জেনে নিন
Next articleমর্মান্তিক! খাবার নেই, ‘অসহায়’ মা ৫ সন্তানকে ছুঁড়ে দিলো গঙ্গায়