Thursday, August 28, 2025

করোনাযুদ্ধে সাংবাদিকদের বিমানীতি পুনর্বিবেচনা করুক রাজ্য সরকার

শুক্রবার বিকেলে শুনেছি চলতি করোনাযুদ্ধে সাংবাদিকদেরও বিমার আওতায় আনছে রাজ্য সরকার। এটাও শুনেছি, এই সুবিধা শুধু সরকারি পরিচয়পত্র থাকা সাংবাদিকদের জন্য। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা নির্দিষ্টভাবে জানি না। এ বিষয়ে আমার বক্তব্য আছে। সাংবাদিকদের জন্য সরকারের সহানুভূতিকে স্বাগত জানিয়েও সেগুলি পেশ করছি এই পেশায় থাকা সবার জন্য। সরকারের কাছেও বিবেচনার জন্য পেশ করব।

1) সরকারি পরিচয়পত্র যাঁদের আছে, তাঁরা সরকারি বিমার সুবিধা পান, আপত্তি নেই।

2) কিন্তু সরকারি পরিচয়পত্র ছাড়াও যাঁরা সংবাদমাধ্যমে কাজ করেন, এমনকি রিপোর্টিংয়েও কাজ করেন, তাঁদের কী হবে?

3) সরকারি পরিচয়পত্র থাকলেই সাংবাদিক, বাকিরা নন, এটা ভাবার কারণ কী? সরকারি পরিচয়পত্র শুধু বিশেষ কয়েকটি সরকারি বা জরুরি জায়গায় ঢোকার ছাড়পত্র, বিশেষত সরকারি জায়গায়। তার সঙ্গে সামগ্রিক সাংবাদিকতার মূল পরিচয়ের সম্পর্ক নেই। “সরকার স্বীকৃত সাংবাদিক” , এই ধারণাটাই ভুল।

4) যাঁদের সরকারি পরিচয়পত্র আছে, তার বাইরেও বহু রিপোর্টার আছেন। সাব এডিটররা সাংবাদিক নন, এটা কবে ঠিক হল? নিউজ ডেস্ক মিডিয়া হাউসের মেরুদন্ড। এর বাইরে আরও একাধিক বিভাগ আছে, যাঁরা না থাকলে শুধু সরকারি পরিচয়পত্রধারীরা কিছুই করতে পারবেন না। তাঁদেরও তো কাজ করতে হচ্ছে। যেমন: ডিটিপি, লেআউট শিল্পী, প্রডাকশন, মেশিন, সার্কুলেশন বা চ্যানেলের ক্ষেত্রে এডিট, অ্যাঙ্কর, প্রডিউসার, পিসিআর রুম, ডিস্ট্রিবিউশন, গাড়ির চালক ইত্যাদি। এরা ছাড়া কাগজ বা চ্যানেল হবে?? এরা অফিসের জন্য বেরোচ্ছেন না? অফিস করছেন না? সরকারকে কারা কী বোঝাচ্ছে?

5) একজন সরকারি পরিচয়পত্রধারী সাংবাদিক বিমার আওতায়। কিন্তু তিনি যদি জীবাণুবাহী হয়ে অফিসে ঢুকে বাকিদের বারোটা বাজান, তার দায়িত্ব কে নেবে ? সরকারের যে বা যাঁরা নীতি ঠিক করেছেন, তাঁরা এটা ভেবেছেন তো?

6) সব সরকারি পরিচয়পত্রধারীরাই এখন সক্রিয়ভাবে ময়দানে কাজ করছেন, কে বলল? তালিকা ধরে ধরে এগোলে কিন্তু বিশ্রী বিতর্ক বাড়বে।

7) সরকারি পরিচয়পত্র যাদের নেই, তাঁরা বঞ্চিত হবেন কেন? কলকাতা ও সব জেলা মিলিয়ে সংখ্যাটা যথেষ্ট।

8) এখন পোর্টাল বা ডিজিটাল মিডিয়া চুটিয়ে কাজ করছে। বহু ক্ষেত্রে তথাকথিত মূলস্রোতের বহু কাগজ, চ্যানেলের থেকেও এগিয়ে। তাদের কর্মীরা বঞ্চিত হবেন কেন? এদের সরকারি স্বীকৃতির সুষ্ঠু ব্যবস্থা দরকার। এতে অনেক চক্র থেকে বাধা আসবে, নিশ্চিত। কিন্তু সরকারকে ব্যবস্থা তো নিতে হবে। সরকার নিজে আজকের যুগে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছেন, আর ডিজিটাল মিডিয়ার প্রশ্নে চোখ বুজে থাকলে সেটা ঠিক হবে না।

9) করোনা বিপদে সাংবাদিকদের বিমার কথা ভাবা ভালো। কিন্তু যখন এই কদিন আগেও একাধিক হাউস থেকে ঢালাও ছাঁটাই হল, তখন তাদের বিপদে পাশে থাকতে কিছু করা হয়েছে কি? কোন বিপদটা বেশি বড়? শুধু আজ যারা সরকারের মুখের সামনে বসে খবর করছে, তাদের সাময়িক নিরাপত্তার মোড়ক দেওয়ার নীতি কি সরকারের পদক্ষেপ হিসেবে খুব গ্রহণযোগ্য? সরকার যেসব কাগজ বা চ্যানেলকে কারণে অকারণে এই কঠিন দিনেও ঢালাও বিজ্ঞাপন দিয়ে চলেছে, তাদের নির্দেশ দিক কর্মীদের বিমা করাতে। তার বদলে নিজেরা বিমা করতে গিয়ে বৈষম্যমূলক নীতি নিচ্ছে কেন?

10) সাংবাদিকদের জন্য সরকার ভাবছেন, এটা খুবই ইতিবাচক। কিন্তু তার মধ্যে পেশাটি বিভাজিত হয়ে গেলে সকলে সরকারকে ধন্যবাদ দিতে পারবে না। আবার বলছি, সরকারি পরিচয়পত্র বিশেষ কিছু জায়গায় কাজের সুবিধার্থে ঢোকার ছাড়পত্র। তার সঙ্গে সামগ্রিক সাংবাদিকতার মূল পরিচয়ের সম্পর্ক নেই। ফলে, যদি ওই পরিচয়পত্রের উপর ভিত্তি করে সরকার সাংবাদিকদের সংখ্যা ভাবেন, এই ধারণাটাই 100% ভুল। বাকিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মানবিক হবে না।

আমি আশা করি, বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচিত হবে।

এখনকার তথাকথিত মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমে যে সিনিয়র সাংবাদিকরা আছেন, তাঁদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে সরকারকে সঠিকভাবে গোটা পরিস্থিতিটা তথ্যসহ বোঝান।

Related articles

সাত লুকের ‘বহুরূপ’ সোহমের, চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমকে দিলেন অভিনেতা

যা কখনও হয়নি তা এখন হবে, এবার হবে। সেলিব্রেটিদের রিল - রিয়েলের আলাদা রূপ আর লুক নিয়ে কম...

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...
Exit mobile version