করোনা : কারও চলছে পৌষমাস, কারোর আবার সর্বনাশ

সুভাষ দত্ত পরিবেশবিদ

করোনা দেখালো, এখন কারও চলছে পৌষমাস, কারোর আবার সর্বনাশ৷
করোনা সার্বিকভাবে সর্বনাশের ভ্রুকুটি দেখালেও এখন আর পৌষমাসের দিকটা চেপে রাখা যাচ্ছে না। পৌষের কম্বল জড়িয়ে অনেকেই আমাদের সাথে এখন খেলছে।

পুরসভায় একসময় একটা রসিকতা খুবই চালু ছিল। যেমন, কর্মীরা দেরি করে অফিসে এসে সেটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান। অর্থাৎ দু’বার দেরি করেন না৷ ডবল এফেক্ট। করোনায় বর্তমানে জনগণও এই দুই বিরূপ প্রভাবের শিকার।

যে কোনো জিনিস কিনতে গেলে এখন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে, সময় লাগছে বেশি। তার সঙ্গে প্রত্যেকটা জিনিস বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। অর্থ ও সময় দুটোতেই বাড়তি খরচ হচ্ছে। এই বাড়তি প্রাপ্তি মেক-আপ করতে কারবারিরা দু’টি জিনিস কম করছে। ওজনে দিচ্ছে কম আর তার সঙ্গে জিনিসের গুণগত মানও নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুটো যোগ সমান দুই বিয়োগ। এখানেও ম্যাচ ড্র।

অনেক বছর আগে আমাদের গোপালদা একটা জম্পেশ কোট গায়ে দিয়ে এক শীতে এসে হাজির। জিজ্ঞাসায় বললেন, “দুইশো টাকায় ধর্মতলা থেকে কিনছি্‌।” ২০০০ টাকার কোট ২০০ তে মানে ? “এটা মরা সাহেবের কোট। কবরখানা থেকে পাওয়া”, একথা শোনার পরে উনি কোট পরাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। জনগনের অবস্থাও এখন অনেকটা তাই।

ভাবছি, হঠাৎ মাস্ক ও গ্লাভসের এতো সাপ্লাই হচ্ছে কোথা থেকে এবং কি করে? বুঝতে অসুবিধা নেই, যে মরা সাহেবের কোটের মতন ব্যবহারের পর ওগুলো পরিষ্কার (?) করে আবার তা বাজারে আসছে। এক নম্বরের দু’নম্বরি জিনিস। অনেক চেষ্টা করে দিন কয়েক আগে একটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার জোগাড় করা গেল৷ কিন্তু তা ব্যবহার করতে পারলাম না। কেরোসিনের মতন গন্ধ পেয়ে আর হাতে ঢাললাম না। শিশির ওপরে লেবেলটা ভাল করে পড়লাম। উৎপাদনকারীর নাম লেখা আছে, BIO-Care Organics, ঠিকানাটা অসম্পূর্ণ৷ শেষে উল্লেখ আছে হরিয়ানা, তৈরি হয়েছে মার্চ ২০২০ তে। আমরা কিনেছি এপ্রিলের ২১-২২ তারিখে। তারও আগে দোকানে ওটা এসেছে। একটু খটকা লাগলো, এত তাড়াতাড়ি পণ্যটা হরিয়ানা থেকে হাওড়া পৌঁছাল কি করে। এতো দেখছি রাজধানির থেকেও দ্রুত গতি।

এবার একটু নেটে সার্চ করলাম। দেখা গেল BIO-Care Organics Pvt. Ltd নামে একটি সংস্থা রয়েছে বটে, যার ঠিকানা হরিয়ানা নয়, পাটনা৷ বুঝলাম নামের মূল অংশটা ধার করা এবং অসম্পূর্ণ ঠিকানাটা নির্ভেজাল ভাবেই জাল। আরও একটা জিনিস লক্ষ করলাম কেরোসিন মার্কা হ্যান্ড- স্যানিটাইজারের বোতলে কোন license নম্বর নেই ও expiary date টাও উধাও। পরে শুনলাম যে পান-বিড়ির দোকানেও নাকি এই স্বাস্থ্য-রক্ষাকারী জিনিসগুলো বিক্রি হচ্ছে।

পলিটিক্যাল দাদাদের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় এখন চলছে স্যানিটাইজেশান। আমি কিন্তু ভাবছি অন্য কথা। আর্সেনিক দূষণের মামলায় একটা রিপোর্ট আদালতে পেশ হয়েছিল, তাতে জেনেছিলাম যে আর্সেনিক-মুক্ত জল বলে আর্সেনিক-যুক্ত জলই সরবরাহ হচ্ছে। এটাও রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, জনগণ ভাবছেন যে তারা শুদ্ধ জল পান করছেন, কিন্তু আর্সেনিক-যুক্ত জলই তারা খাচ্ছেন। এই স্যানিটাইজেশান দেখে আমার মতন বোকা লোকটা একটু ঘাবড়েই গেল৷ সে ভাবতে বসলো যা দিয়ে এবং যে ভাবে শুদ্ধিকরন করা হচ্ছে সেটা ও সেই পদ্ধতিটা আদৌ শুদ্ধ তো?

তাই বলছি, হচ্ছে টা কি? সামাজিক মাধ্যম এখন খুবই সক্রিয়। প্রশাসন অর্থাৎ সরকার এই মাধ্যমের ওপর কড়া নজরদারি করে বলে শুনেছি। একটু বেচাল দেখলেই পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। আশা করছি যে সরকারের চোখে অথবা কানে আমার এই প্রতিবেদনটি পৌঁছবে এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুষ্টু জিনিসের বিরুদ্ধে ওঁরা ব্যবস্থা নেবে।

সবশেষে যেটা বলতে চাইছি তা হচ্ছে বেশি দাম ও কম ওজন, সমাজ এখন মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে৷ কিন্তু তাই বলে করোনার হাত থেকে বাঁচতে গিয়ে আমরা আবার অন্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছি না তো ? কেউ কি একটু নজর দেবেন?

ছবি :
১। সঠিক হ্যান্ড-সানিটাইজার
২। জাল হ্যান্ড-স্যানিটাইজার

Previous articleকরোনার প্রতিষেধক কবে পাওয়া যাবে! জানালেন বিল গেটস
Next articleমমতার কড়া চিঠির ধাক্কায় রাজ্যপালের ব্যাকফুট-ট্যুইট