
ছবিগুলোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

ঘর ধ্বংস। মৃতদেহ ভাসছে। গাছের সারি উৎপাটিত। পাখির ঝাঁক মৃত। বন্যপ্রাণ বিক্ষত। কলেজ স্ট্রিটে বই ভাসছে। কুমোরটুলিতে কাঠামো লন্ডভন্ড। ক্ষেতে শস্য জলের তলায়। রাজপথ আটকে সবুজের শব। ত্রাণশিবিরে সব হারানোর কান্না।

সুন্দরবন আর উপকূলের মানুষ বলতেই পারেন, এমন ধ্বংস আমরা দেখে অভ্যস্ত।
হে কলকাতাবাসী, আজ মহানগরীতে ঝড়ের গর্জন টিভি, মোবাইল, নেট, টিভি সিরিয়ালের জীবন শুষে নিয়েছে বলে কামড়টা এখন একটু বেশি লাগছে!

চোখের জল ভেজা সেই কটাক্ষ হজম করা আমাদের প্রাপ্য।
আর তার মধ্যেও দায়িত্ব লড়াইতে ফেরার।

একদিকে করোনার বিপদ, দূরত্ব রাখার বার্তা।
অন্যদিকে আমফানের ধ্বংসলীলার পর হাতে হাত মিলিয়ে উদ্ধার, ত্রাণের প্রস্তুতি।

জাতীয় সংবাদমাধ্যম বিস্মিত করল বাংলার এই চূড়ান্ত বিপর্যয়কে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে। এই ক্ষতের মধ্যেও এটা মনে রাখা ভালো। তা সে আজ প্রধানমন্ত্রীর সফরকে যতবারই দেখাক না কেন।

রাজনীতি নয়; মন খুলে ধন্যবাদ দেব মুখ্যমন্ত্রী আর রাজ্য প্রশাসনকে; আগাম ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যথাসম্ভব লড়াই দেওয়ার জন্যে।

ধন্যবাদ দেব প্রধানমন্ত্রীকে, বহুবিলম্বিত টুইটে বাংলা নিয়ে মুখ খুললেও, আসার জন্য, দেখার জন্য, আপৎকালীন সাহায্য ঘোষণার জন্য। আশা করা যায় কেন্দ্র তার যথাযথ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা ও দুজনের বৈঠক আশাবাদী করেছে; মোটের উপর একসঙ্গে লড়াইটা হবে। রাজ্যের পাশে কেন্দ্র থাকবে।

আর, এখন যে সব এলাকা জলবন্দি, পানীয়জল আর বিদ্যুতের ঘাটতি, যোগাযোগবিচ্ছিন্ন, সেগুলিতে স্বাভাবিকতা ফেরাতে স্থানীয় প্রশাসনগুলি কাজের গতি বাড়াক।

এবং এর মধ্যেও মনে রাখতেই হবে, করোনার ছোবল কিন্তু অব্যাহত।
সুন্দরবন নিয়ে ধারাবাহিক লিখছি, দুর্দশার কথা লিখছি কদিন হল। তার মধ্যেই খবর পাচ্ছি জল উপচানো নদী ধরে গ্রামের উঠোনে কুমীর। বিধ্বস্ত জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্রামের সীমা থেকে গজরাচ্ছে বাঘ।
আর শহরে অদৃশ্য করোনা গ্রাস করছে রোজ, আরও বেশি মানুষকে।
বাংলা সত্যিই আজ কঠিন যুদ্ধে।
এবং এই যুদ্ধ আমাদের জিততে হবেই।
রাজনীতি আর বাকিটা পরে হবে, আসুন সব নিয়ম মেনেও সাধ্যমত নামি।
সবটাই সরকারের দায় আর আমরা শুধু ফেস বুকে পর্যবেক্ষণ জানাবো, এটা হয় না। করোনাযুদ্ধেও অনেকেই নানাভাবে লড়ছেন। এখন লড়াইয়ের প্রয়োজনটা আরও বেড়েছে।
বাংলা এই ক্ষত সামলে ঘুরে দাঁড়াবেই।