নিজেকে আর গৃহবন্দি রাখতে পারলেন না। সুপার সাইক্লোন আমফানের তাণ্ডব এবং তার ধ্বংসলীলা দেখে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। রুদ্রমূর্তি ধারণ করে গোটা রাজ্যজুড়ে যে ধ্বংসস্তূপ বানিয়েছে আমফান, তার অনেকটা অংশই তাঁর সংসদীয় এলাকার মধ্যে পড়ে। যেখানে গৃহহীন কয়েক লক্ষ মানুষ। মাথার উপর আকাশ ভেঙে পড়েছে। চারিদিকে শুধু হাহাকার। বিদ্যুৎ নেই। জল নেই। খাবার নেই। যোগাযোগ নেই। পোশাক নেই। কার্যত “নেই” রাজ্য তৈরি হওয়া এলাকায় তাঁর সহ নাগরিকদের জন্য, আশীর্বাদে তিনি অভিনেত্রী থেকে নেত্রী হয়েছেন, শিল্পী থেকে সাংসদ হয়েছেন, আমফানের দাপটে আজ তাঁরা বড় অসহায়। তাই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ তথা টলিউডের শীর্ষ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী।
আমফানের রাতে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে যখন জানালেন, “সর্বনাশ” হয়ে গিয়েছে। সব “ধ্বংস” হয়ে গিয়েছে। “শেষ” হয়ে গিয়েছে, এবং “সর্বনাশ” , “ধ্বংস”, “শেষ” হয়ে যাওয়ার মধ্যে তাঁর সংসদীয় এলাকার বারুইপুরে-সোনারপুর-ভাঙড়ের মতো এলাকাগুলির নামও রয়েছে, তখন আর নিজেকে ঘরে রাখতে পারলেন না মিমি। খোঁজ খবর নিতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করতে পারলেন না, তখন আর পিছনে ফিরে তাকানো নয়, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গৃহবন্দি দশা কাটিয়ে রাস্তায় নামলেন সাংসদ। বিপর্যয় মোকাবিলার রূপরেখা তৈরি করতে স্থানীয় প্রশাসন ও নেতৃত্বের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে চলে এলেন মিমি।
প্রায় দু’মাস আগে সেই যে লন্ডন থেকে ফিরে নিজেকে ঘরবন্দি করেছিলেন, সেইসব বিধি ভেঙে দুর্দিনে-দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দৌড়ে বেড়ালেন বারুইপুর-সোনারপুর-ভাঙরের মহকুমা শাসক-বিডিও-পুলিশ প্রশাসনের দফতরগুলিতে। পরিস্থিতি সামাল দিতে একের পর এক বৈঠক করলেন সাংসদ মিমি।
যখন একের পর এক এলাকা থেকে হাহাকারের খবর কানে আসছে, তখনই চোখ ছলছল করছে মিমির। শুধু বৈঠক করে নয়, আমফানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এলাকাগুলিতে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন সাংসদ মিমি। ত্রাণ থেকে শুরু করে ত্রিপল, তুলে দেন অসহায় মানুষের হাতে।
সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জানালেন, “মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে কথা হয়েছে। এলাকার বিধায়কদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি রাতে ঘুমোতে পারিনি। যখন আমার মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে, আর মানুষের মাথায় ছাদ নেই, তখন আমি একজন জন প্রতিনিধি হিসেবে ঘরে বসে থাকতে পারিনা। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। কোথায় কী হয়েছে খোঁজ নিয়েছি। আমফান বিধ্বস্ত এলাকাগুলো আমি ঘুরে দেখছি। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াবোই। এই বিপর্যয় ঠিক কাটিয়ে উঠবো”।
এরপর মিমি সকলকে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন, একসঙ্গে কাজ করে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার। করোনার মধ্যে এমন বিপর্যয় তিনি ভাবতেই পারছেন না। তাই রাজনীতির ঊর্ধে উঠে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার অনুরোধ করেন যাদবপুরের সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রীর উদাহরণ টেনে বলেন, উনি ৬৫ বছর বয়সে একা লড়াই করছেন। সকলের মুখ্যমন্ত্রীর পাশে থাকা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন মিমি। তিনি মনে করেন, করোনা-আমফান মিলিয়ে এখন বাংলার যা পরিস্থিতি, তাতে কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
পাশাপাশি, সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি পোস্ট করেন মিমি।
সেখানে আমফান পরবর্তী সময়ে বিধ্বস্ত বাংলা নিয়ে যারা উদাসীনদের, তাদেরকে পরোক্ষে সমালোচনা করেন তিনি।
যাদবপুরের তৃণমূল সাংসদ ফেসবুকে লেখেন, “ভেসে গেল আমার শহর, ভেসে গেল কত স্বপ্ন… চলে গেল কত জীবন, আর তোমরা বললে কই কিছু হয়নি তো!!”
জলমগ্ন কলেজ স্ট্রিটে ভাসমান বই, বোধনের অনেক আগেই বিসর্জন গিয়েছে কুমোরটুলির দুর্গাপ্রতিমা। বিধ্বস্ত শহরের বিভিন্ন এলাকার ছবি তুলে ধরেছেন সাংসদ। মনে করিয়ে দিয়েছেন যে এই কঠিন সময়ে বাংলার পাশে থাকা খুব দরকার। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও অনেকে বাংলার এই করুণ পরিণতি নিয়ে বড়ই উদাসীন। তারই বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সাংসদ-অভিনেত্রী মিমি।
সব মিলিয়ে সেলিব্রিটি হলেও তিনি যে নিজের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্তব্যে অবিচল, সেকথা করোনা আবহে আমফান বিপর্যস্ত বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে ফের একবার বুঝিয়ে দিলেন মিমি চক্রবর্তী।
