Friday, November 14, 2025
কুণাল ঘোষ

অবশেষে মায়ের মরদেহের পাশে পৌঁছেছেন মধুদা।

মঙ্গলবার সন্ধে থেকে নানাভাবে চেষ্টা চলছিল।

শেষপর্যন্ত বুধবার পড়ন্ত বিকেলে প্রয়াত মা পারুলবালা মন্ডলের মরদেহের পাশে পৌঁছলেন মাওবাদী অভিযোগে বন্দি মধুসূদন মন্ডল।

হলদিয়ার দুর্গাচকের বাড়িতে।

এই পোস্ট যখন করছি, তখন সেখানে প্রবল বৃষ্টি চলছে। বৃষ্টি থামলে শ্মশান যাবেন তাঁরা। দাহ শেষের পর মধুদা ফিরবেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে।

মঙ্গলবার ছিল জটিল পরিস্থিতি।
ইএসআই হাসপাতাল চিকিৎসার সূত্রে তাঁর মাকে পাঠিয়েছিল কলকাতার এক নার্সিংহোমে। সেখানেই তিনি মারা যান।

মধুদা প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। তিনি খবর পাননি।

মধুদার স্ত্রী, কন্যা ও পুত্র শুভম দুর্গাচকের বাড়িতে। সেখানেই ফোনে দুঃসংবাদ পেয়েছে। কিন্তু তারা করবে কী?

সন্ধে থেকেই চেষ্টা শুরু।
মরদেহ রাখতে হবে।
মধুদাকে বার করতে হবে।

শুভমের ফোন পাওয়ার পর যাঁদের সাহায্য চেয়েছি, সকলেই সহযোগিতা করেছেন।
মন্ত্রী সুজিত বসু ওই নার্সিংহোমেই মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করিয়েছেন।
সিনিয়র সাংবাদিক কণাদ দাশগুপ্ত কথা বলে কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের সঙ্গে। এই লকডাউন পরিস্থিতিতে রাতারাতি কোর্টে যাওয়া কঠিন। জেল কর্তৃপক্ষই বিশেষ অনুমতি দিক মধুদাকে।

সেইমত সকালে মধুদার ছেলে শুভম হলদিয়া থেকে বাবাকে ছাড়ার আবেদন নিয়ে পৌঁছয় প্রেসিডেন্সি জেলে।
দূর থেকে আসা এক সদ্য যুবা এহেন বিষয়ে হাজির হলে মসৃণভাবে সব যোগাযোগ নাও হতে পারে। তাই কথামত পৌঁছে গিয়েছিলাম জেলগেটে। এক মিনিট সময়নষ্ট হয়নি। ধন্যবাদ জেলের দুই সিনিয়র কর্মী ও সুপারকে। আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুনের কাগজপত্র তৈরিতে সময় নেয়নি।

সমস্যা হল পুলিশবাহিনী নিয়ে।
কলকাতা পুলিশ আমফান পরবর্তী কাজে ব্যস্ত।
শেষে খবর গেল পূর্ব মেদিনীপুর পুলিশে।
সেখান থেকে বাহিনী এসে নিয়ে গিয়েছে মধুদাকে।
ওদিকে নার্সিংহোম থেকে দেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছেছে মধুদার ছেলে।
বৃষ্টি থামলে শেষকৃত্য।

শুভম ফোনে জানালো,” বাবা পৌঁছেছে। সব ঠিক আছে।”

আর ফোনটি নিয়ে মধুদা স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে বললেন,” মা চলে গেলেন। খুব খারাপ লাগছে। অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। শেষে থেমে গেলেন। কিন্তু একটা কথা আমাদের জোরে বলতে হবে, প্রচার করতে হবে: এই যে দেশজুড়ে করোনার দায়টা গরীবের উপর চাপানো হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। বড়লোকরা এটা ছড়ালো। প্লেনে করে এসে ঘুরে বেড়ালো। কেউ দেখল না। আর তিন ঘন্টার নোটিসে পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অভিশাপ চাপিয়ে দেওয়া হল। এগুলো একটু লিখবেন।”

যত বলি,” আজ এখন এসব থাক, বাড়িতে সময় দিন;” মধুদা তত বলে যাচ্ছেন,” যাদের দেশের থেকে বিদেশ ভালো লাগে, তাদের জন্যে প্লেন আর অবাধ ঘোরাঘুরির সময়; যারা দেশটাকেই তৈরি করছে তাদের জন্যে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে মৃত্যু!!”

একটু থেমে বললেন,” আমার মাও শ্রমিক ছিল। ছেলেবেলা থেকে কষ্ট করেছে। সৎ মায়ের কাছে মানুষ। একঝুড়ি গোবর আনলে তারপর খেতে পেত। সেই মায়ের পেট থেকে আমার জন্ম। মায়ের মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়েও তাই এই কথাগুলোই বলে যাব।”

পুনশ্চ: আমি মাওবাদী নই। বরং বিরোধী। কিন্তু আমার জেলজীবনে আলাপ হওয়া কিছু মানুষকে, কিছু মানুষের ভাবনাচিন্তাকে এবং কিছু মানুষের ভালোবাসাকে ভুলিনি। ভুলতে চাই না। কুণাল ঘোষ অকৃতজ্ঞ নয়।

 

Related articles

সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানি! গ্রেফতার RG Kar আন্দোলনের ‘বিপ্লবী’ ডাক্তার

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাতে সরকারি হাসপাতালে নাবালিকা রোগীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে। ঘটনায় গ্রেফতার বারাসাত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের...

আন্দুল রোডে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড! ভস্মীভূত দুই স্পঞ্জ কারখানা 

রাতের হাওড়ায় ভয়াবহ আগুনে কার্যত ছারখার হয়ে গেল আন্দুল রোডের পাশে হাঁসখালি পোল এলাকার দুটি স্পঞ্জ তৈরির কারখানা।...

সোনারপুরে শুরু হচ্ছে প্রবীণদের জন্য বিনামূল্যে নিউমোনিয়া ও ফ্লু টিকাকরণ কর্মসূচি

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে রাজ্যজুড়ে। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এই রোগ অনেক সময় প্রাণঘাতী...

প্রকাশিত হল আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি

প্রকাশিত হল আগামী বছরের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির আইসিএসই এবং আইএসসি পরীক্ষার সময়সূচি। কাউন্সিলের তরফে এদিন বিজ্ঞপ্তি জারি...
Exit mobile version