এ যেন সিনেমার চিত্রনাট্য! টানা ৭২ দিন বিমানবন্দরে আটকে ফুটবলার

ভাবতে পারেন? একদিন, দুদিন নয়, টানা ৭২ দিন তিনি বিমানবন্দরে বন্দি। হ্যাঁ, এটাই বাস্তব । আজ সেই কাহিনীই শোনাবো আপনাদের । যা শুনলে সিনেমার চিত্রনাট্যও লজ্জা পাবে!
লকডাউনের জেরে বহু মানুষ দুর্ভোগের শিকার। তবে ঘানার ফুটবলার র‌্যান্ডি জুয়ান মুলারের ভোগান্তিও কম হয়নি। ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার মুম্বই বিমানবন্দরে বন্দি থাকলেন টানা ৭২ দিন।
জানা গিয়েছে, ওআরপিসি স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে খেলার জন্য ভারতে এসেছিলেন মুলার। গত বছর নভেম্বর মাসে ছমাসের ভিসা নিয়ে এদেশে এসেছিলেন। এর পর ২১ মার্চ তিনি বাড়ি যাওয়ার জন্য বিমানবন্দরে যান। তার পর থেকে সেখানেই বন্দি। গত বুধবার বান্দ্রার একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁকে।
মহারাষ্ট্রের পর্যটন ও পরিবেশ মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে তাঁর দুর্দশার কথা জানার পর তাঁকে উদ্ধারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর চাউর হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় । কীভাবে কাটল এই ৭২ দিন? মুলার বলছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মী ও স্টাফদের সহায়তায় দিন কাটছিল তাঁর। বিমানবন্দরের শৌচালয়ে স্নান, জামা কাপড় ধুয়েছেন তিনি। কোনওদিন সিঙ্গারা, কোনওদিন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া ফ্রায়েড রাইস খেয়ে দিন কাটছিল মুলারের। কখনও বাগানে ঘুরতেন। কখনও আবার বই পড়েছেন। এভাবেই ৭২ দিন কাটিয়েছেন তিনি।
ঘানার যুব ফুটবলার জানিয়েছেন, ভারতে প্রতি ম্যাচ থেকে ৩ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা থাকলেও নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। যেকারণে হাতে টাকা ফুরিয়ে আসতেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু লকডাউনের জন্য মুম্বইয়ে আটকে পড়েন। বিমানবন্দরেরই ৭২ দিন কাটান। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাঁকে রাখতে না চাইলেও পরে থাকতে ও খেতে দেয়।
তিনি জানিয়েছেন , ”ছমাসের ভিসা ছিল আমার। একা ম্যাচ খেললে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও ম্যাচ খেলতে পারিনি। এদিকে, এখানে এসে থাকা খাওয়া বাবদ দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। হাতে টাকা ছিল না। তাই দেশে ফেরার সিদ্ধা্ন্ত নিই। কিন্তু এর পর লকডাউন শুরু হয়ে যায়। আমাকে বিমানবন্দরে যেতে বলে মুম্বই পুলিশ । সেখানে অবশ্য আমার জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না। প্রথমে সিআইএসএফ আমাকে বিমানবন্দরে থাকতে দিতে রাজি ছিল না। কিন্তু আমারও কিছু করার ছিল না। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে খেতে দিত। কিছু টাকাও দিত। এর পর যাত্রীদের থেকে বই পাই। সেগুলো পড়ে আর বিমানবন্দরে ঘুরে দিন কাটে। নিজেকে বোঝাতে থাকি, এই দুঃসময় একদিন কেটে যাবে। একজন যাত্রী আমাকে ‘বি ইয়োর ওউন থেরাপিস্ট’  বই দেন। ওটা পড়ে কিছুটা অনুপ্রেরণা পাই। হতাশা দূর করার চেষ্টা করি।
এর পর একদিন নিজের অবস্থার কথা লিখে টুইট করি। আদিত্য ঠাকরে আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।

Previous articleমধুচন্দ্রিমায় গিয়ে আড়াই মাস হিমাচলে আটকে দম্পতি ! দেখুন তারপর কী হল…
Next articleপেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে শুরু হবে বাণিজ্য, সবুজ সংকেত রাজ্যের