প্রিয় মিঠুনদা, বাংলার মানুষ আবার ফিরে পেতে চাইছে প্রিয় গৌরাঙ্গকে, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী। রানা রেজ। মিঠুন চক্রবর্তী থেকে মিঠুনদা।

হেদুয়া চত্বর, স্কটিশ চার্চ কলেজ, নকশাল অন্দোলন, মুম্বই, কলকাতা, উটি, সাফল্য, সফল ব্যবসায়ী।

মিঠুন মানে মুম্বইয়ের বুকে বাংলার দাদাগিরি। মিঠুন মানে কালো ছেলের হিম্মতের কাছে সাদাদের হার। কে বলে বর্ণবৈষম্য আমাদের দেশে নেই! আলবৎ আছে।

আবার মিঠুন মানে নিজেকেই নিজের কন্ট্রাডিক্ট করা। যিনি একসময়ে রাজনীতিতে নামতে চাননি। তিনিই সাংসদ। ছাড়লেন একরাশ অভিমান-অভিযোগ নিয়ে। নিজেকে সরিয়ে কেটে দিলেন বেঙ্গল কানেকশন। ফের নাগপুরে সঙ্ঘের ভবনে এবং আলোচনায়!

১৯৭৬-এর ‘মৃগয়া’ যদি শুরুয়াৎ হয়, তবে ৪৫ বছর পেরিয়ে গেল অভিনয় জীবন। তবু তাঁকে অস্বীকার করতে পারে না কেউই।

মিঠুন আজও চির কৃতজ্ঞ জিনত আমনের কাছে। গায়ের রঙ কালো ছিল বলে কোনও নায়িকা তাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে চাইতেন না। জিনাত, বলেছিলেন সুযোগ পেলে আমি মিঠুনের সঙ্গে অভিনয় করব। কালো-সাদার বর্ণ বৈষম্য সেদিন থেকে ঘুরতে শুরু করেছিল। তারপর ইন্ডাস্ট্রি দেখেছে বাঙালি বাচ্চার কেরামতি।

কী করে ভুলবেন মিঠুন ১৯৮৯ সাল। বিশ্ব রেকর্ড। এক বছরে ১৯টি ছবি রিলিজ। সব ক’টিতে তিনি লিড রোল। মিঠুনকে নাকি আটকে রাখবে! ধুস… ৩৫০-এর বেশি ছবির অভিনেতা!

মিঠুন মানে দিশানির বাবা। একশো আকাশ মাথায় করে বড় করে তোলা। বুকের পাঁজরে ব্যথা অনুভব করা। ‘আমার মেয়ে’ বলে বন্ধ ঘরের দরজায় তৃপ্তির নিঃশ্বাস নেওয়া। চোখের জল তুলে রেখেছেন ডোলি সাজানোর দিনের অপেক্ষায়?

মিঠুন চক্রবর্তী মানে সেই বাঙালিবাবু, যিনি জীবনের ৪১ বছর কাটিয়ে দিলেন যোগীতাবালীর সঙ্গে। কত ঝড় ঝাপ্টা, বোঝা না বোঝা, মান-অভিমান, যে সম্পর্ক হেলেনা থেকে শ্রীদেবীর অতীতকে ভুলিয়ে দিয়েছে মন থেকে।

মিঠুনদা মানে বাংলার ছেলে। থ্যালাসেমিয়া থেকে ফুটবল, সমাজসেবায় না নেই। সে এক সময় গিয়েছে। বাংলার বুকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন। ক্লান্তিহীন, নিদ্রাহীন…

স্কটিশের ছেলের অসাধারণ স্মৃতি শক্তি। পাঁচ পাতার স্ক্রিপ্ট, টানা ডায়ালগ। পাঁচ মিনিট চোখ বুলিয়ে সোজা ক্যামেরার সামনে। একবারের জন্য হোঁচট খেলেন না! চমকে যেতেন পরিচালক থেকে স্পট বয়।

মিঠুন মানে মহাক্ষয়ের বাবা, নমশির বাবা। মহাক্ষয় নেমে পড়েছে জীবন যুদ্ধে। লড়াই চলছে। মিঠুন কিন্তু একবারও ফোন তুলে অনুরোধ পাঠাননি মহাক্ষয় মানে মিমোর জন্য।

আর ফিল্মি যুদ্ধে নেমে পড়েছে ছোট নমশি। ঠিক যেন স্কটিশের মিঠুন। সেই ঝাঁকরা চুল, গভীর চোখ, গালে হালকা আধুনিক দাড়িতে ‘ব্যাড বয়’। পরিচালক রাজকুমার সন্তোষী। প্রথম পরিচালক রাজকুমার মানে ভাগ্যের ব্যাপার। সেটা ১৯৮৯-৯০। সুপার স্টার মিঠুন। হাতে ক’টা ছবি আছে নিজেই জানেন না। কোন ছবির শুটিং সেটাও জানেন না। শুধু এক সেট থেকে আর এক সেট। এক স্টুডিও থেকে আর এক স্টুডিও। এই সময় রাজকুমার এসেছিলেন ‘ঘায়েল’ ছবি নিয়ে। সই সাবুদ শেষ। হঠাৎ দিন কয়েক পরে গ্রেট ধর্মেন্দ্রর ফোন। ছবিটা যদি বড় ছেলে সানির জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। মিঠুন দ্বিতীয়বার ভাবেননি। ঘায়েলের ইতিহাস মানুষের জানা আছে। রাজকুমার বলেছিলেন, আজ হল না মিঠুন, তোমার সঙ্গে আমি ছবি করবই। না ছবি হয়নি মিঠুন-রাজকুমারের। কিন্তু ভোলেননি সে ওয়াদা। পুত্র নমশিকে লঞ্চ করে মিঠুনকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন ৩১ বছর পর!

মিঠুন যেমন অবলীলায় বলতে পারেন নায়ক অনেকেই, কিন্তু মহানায়ক একজনই। উত্তমে অসম্ভব শ্রদ্ধা। নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতা হওয়ার টার্নওভারেও তিনি অনবদ্য। মিঠুন শুধু নাচতে জানেন, এসব বদনাম ঘুচিয়ে জীবনের সেকেন্ড ইনিংসে দাদাগিরি চলছে।

মিঠুন আজ ৭০। শুভ জন্মদিন মহাগুরু। ভাল থাকবেন। জানি, কোভিড পরিস্থিতি আর সুশান্তর মৃত্যু আপনাকে নাড়া দিয়ে গিয়েছে। তাই এবার কোনও জন্মদিন পালন নয়। তবু বলব, অলক্ষ্যে নয়। ফিরে আসুন বাংলায়, বাংলার মাটিতে। একবার চোখ মেলে দেখুন। এখনও মানুষ গৌরাঙ্গকেই ফিরে পেতে চাইছে, আপন করে নিতে চাইছে। শুধু আপনার হাত বাড়ানোর অপেক্ষায়!

Previous articleবেসরকারি স্কুলগুলির অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি রাহুলের
Next articleফের উড়ে গেল পুরীর মন্দিরের ধ্বজা, অশনি সংকেতের আশঙ্কা স্থানীয়দের