মোদি-রাজনাথে সমন্বয়ের অভাব ! জল্পনা তুঙ্গে

চাণক্য চৌধুরি

লাদাখের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হঠাৎ শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী লেহ-তে পৌঁছানোর পরই স্পষ্ট হলো কেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সেনাপ্রধান এম এম নারভনে’র এদিনের প্রস্তাবিত লাদাখ সফর বাতিল করা হয়েছে৷ এবং একইসঙ্গে ইঙ্গিত মিলছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সমন্বয় বা কো-অর্ডিনেশন ইদানিং সুস্থ জায়গায় নেই৷

বৃহস্পতিবার বেলার দিকে দিল্লি থেকে প্রথম জানা যায়, সীমান্তের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার লাদাখ যাবেন সেনাপ্রধান এম এম নারভনেকে সঙ্গে নিয়ে৷ সেই মতো দুই শীর্ষকর্তা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন৷

এটা নিশ্চিত, ততক্ষণে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর শুক্রবারের সীমান্ত সফরের কর্মসূচি স্থির হয়ে গিয়েছিলো৷ কিন্তু এত বড় কথাটা জানতেন না দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং দেশের সেনাপ্রধান৷ জানা থাকলে, ওই একই দিনে তাঁরা আলাদাভাবে লাদাখ যাওয়ার ঘোষণাই করতেন না৷ আর এটা হয়েছে পুরোপুরি সমন্বয়ের অভাবেই৷ যে মুহুর্তে প্রধানমন্ত্রীর কানে যায়, তাঁর সীমান্ত সফরের দিনেই রাজনাথ- নারভনে লাদাখ সফরের ঘোষণা করেছেন, তখনই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দু’জনের কাছেই বার্তা যায় সফর স্থগিত করার৷ ওই বার্তা মেনে বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানো হয় রাজনাথ সিংয়ের প্রস্তাবিত লাদাখ সফর আপাতত স্থগিত করা হলো৷ দেশের সেনাপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের শুক্রবারের সফর হচ্ছে না৷ গত ৫ মে থেকে দুই প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত বিবাদ নতুন করে শুরু হওয়ার পর এটাই ছিল প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাবিত প্রথম সফর। কিন্তু হঠাৎই বাতিল করা হয় এই সফর৷ সফর বাতিল করার কথা জানানো হলেও ঠিক কী কারণে সফর স্থগিত, তা বৃহস্পতিবার সরকারিভাবে বলা হয়নি৷ কারন হিসেবে শুধু বলা হয়, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর লাদাখ সফর পুনর্নির্ধারিত হবে। এ ঘটনায় রাজধানীতে জল্পনা তৈরি হয়েছে৷ একাধিক অসমর্থিত সূত্রে খবর ভেসে ওঠে, প্রতিরক্ষামন্ত্রক থেকে সরতে হতে পারে রাজনাথ সিংকে৷ দিনকয়েকের মধ্যেই না’কি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রদবদল করবেন প্রধানমন্ত্রী৷ সে কারনেই রাজনাথকে সীমান্তে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী যেদিন নিজে যাচ্ছেন সীমান্তে, সেদিনই রাজনাথ আলাদাভাবে সীমান্তে যাওয়ার ঘোষণা করবেন, এতখানি মূর্খ কোনও মন্ত্রীই নন৷ প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচি নিশ্চিতভাবেই গোপনীয়, কিন্তু এতটাও গোপনীয় নয়, যা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা সেনাপ্রধানও জানতে পারবেন না৷

শুক্রবার সকালে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী নিজেই পৌঁছে গিয়েছেন চিন সীমান্তে৷ বলা হচ্ছে,
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ‘বার্তা’ দিতেই না’কি লাদাখে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি৷ সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়াতে সাতসকালেই সীমান্তে পৌঁছেছেন মোদি। এই মুহূর্তে সীমান্তের পরিস্থিতি কেমন আছে তা নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। শুনেছেন সেনার কথা৷ একইসঙ্গে সামরিক হাসপাতালে আহত সেনা জওয়ানদের সঙ্গে দেখাও করেছেন মোদি৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। এবং তখনই ফাঁস হয় রাজনাথের সীমান্ত-সফর বাতিল হওয়ার রহস্য ৷

সীমান্তে যখন যুদ্ধের আবহ, তখন সেনাদের মনোবল বাড়াতে হাজারবার প্রধানমন্ত্রী লেহ-লাদাখ যেতে পারেন৷
কিন্তু তাঁর এই গুরুত্বপূর্ন সফরের কথা কয়েকঘন্টা আগেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বা দেশের সেনাপ্রধান জানবেন না, এটা কিছুতেই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারেনা৷

আপাতত এই জল্পনাই এখন দেশজুড়ে ৷

Previous articleকড়া প্রশাসন: মাস্ক নিয়ে রাজ্যে নয়া বিধি জারি
Next articleপ্যাসেঞ্জার ট্রেন বেসরকারি হাতে, রেল দফতর ঘেরাওয়ের ডাক কর্মী সংগঠনের