লাস্যময়ী নারীর ফাঁদ! চিনা রাষ্ট্রদূত কেন সরাসরি নাক গলাচ্ছেন নেপালের রাজনীতিতে?

কাঠমান্ডুর চিনা দূতাবাসই কি নেপালের রাজনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে? গত কয়েকদিন ধরে চিনা রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়াংকি যেভাবে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলিকে ক্ষমতায় রাখার জন্য নজিরবিহীন তৎপরতা চালাচ্ছেন তাতে নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চিনের সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে আর কোনও সংশয়ই নেই। বেজিংয়ের শি জিনপিং প্রশাসন নেপালের ভারতবিরোধী প্রধানমন্ত্রী ওলিকে ক্ষমতায় রেখে দিতে মরিয়া। তাই চিনা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে তারা নেপালের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। মজার বিষয় হল, ভারতের বিরুদ্ধে লাগাতার বিদ্বেষমূলক কথা বলে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিতে একঘরে হয়েছেন ওলি। দলের গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির ৪৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩০ জনই ওলির অপসারণ চান। চিনের দালাল ওলি কিছুদিন আগে মন্তব্য করেছিলেন, ভারত তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। দিল্লি থেকে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ওলির এই বক্তব্য খারিজ করে দিয়েছে নেপালের শাসক দলই। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা পুষ্পকমল দহল বা প্রচণ্ড এক বৈঠকে ওলিকে বলেন, ভারত নয়, অামিই আপনার পদত্যাগ চাই। কারণ আপনি স্বৈরাচারীর মত সরকার চালাচ্ছেন। আপনার ভারতবিরোধী মন্তব্য ও অবস্থান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দুদিক থেকেই ভুল। প্রচণ্ডর এই বক্তব্যকে সমর্থন করে ওলির ইস্তফা দাবি করেন দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধবকুমার নেপাল ও ঝালানাথ খানালও। ওলির উপর ইস্তফার চাপ বাড়তেই প্রত্যক্ষভাবে আসরে অবতীর্ণ হয়েছেন নেপালের চিনা রাষ্ট্রদূত হোউ ইয়াংকি। তিনি ওলি বিরোধী শিবিরকে ঠাণ্ডা করতে ব্যক্তিগতভাবে নেপালের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। কথা বলেন প্রচণ্ডর সঙ্গেও। ওলিকে প্রধানমন্ত্রী পদে রেখে দেওয়ার বিষয়ে সমাধানসূত্র খুঁজতে ইয়াংকি বৈঠক করেছেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যাদেবী ভাণ্ডারী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাধবকুমার নেপালের সঙ্গে। বলা হচ্ছে, চিনা রাষ্ট্রদূতের সক্রিয়তার কারণেই নাকি ওলির পদত্যাগের দাবিতে ডাকা নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠক তিন তিনবার পিছিয়ে গিয়েছে। সর্বশেষ বৈঠকের দিন ধার্য হয়েছে বুধবার। তার মধ্যেই চিনের দালাল ওলির পক্ষে সমর্থন জোগাড়ে নেমে পড়েছেন চিনা রাষ্ট্রদূত। বেজিং কোনওভাবেই চায় না চিনের বন্ধু ওলি নেপালের ক্ষমতা হারান এবং নতুন করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ হয়। তাই নজিরবিহীনভাবে নেপালের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে ওলির অপসারণ ঠেকাতে মরিয়া চিনা কমিউনিস্ট পার্টি।

নেপালের প্রধানমন্ত্রী ওলিকে পুতুলের মত ভারতবিরোধী কাজে ব্যবহারের পিছনে চিনের মোক্ষম অস্ত্র হোউ ইয়াংকি। নামেই তিনি চিনের রাষ্ট্রদূত, আসলে নেপালের ক্ষমতার অলিন্দে অবারিতদ্বার এই সুন্দরী লাস্যময়ী নারীর। শোনা যায়, এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নেপালি পোশাকে ইয়াংকির নাচ দেখে নাকি মুগ্ধ হয়ে যান ওলি। তারপর থেকেই তাঁদের পরিচয় গভীর হয়। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, নেপালের সেনাপ্রধান পূর্ণচন্দ্র থাপার সঙ্গেও গভীর হৃদ্যতা চিনা রাষ্ট্রদূতের। এবছর নববর্ষে নেপালবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশেষ পোজ দিয়ে ছবি তুলে তা পোস্ট করেন ইয়াংকি। ছবিসহ সেই পোস্ট ভাইরাল। শোনা যাচ্ছে, এই মহিলার পরামর্শেই নাকি ভারতকে উত্যক্ত করার কৌশল নিয়েছেন ওলি। চিনা রাষ্ট্রদূতের পরামর্শ মেনেই নাকি ভারতের তিনটি জায়গা যুক্ত করে নেপালের বিতর্কিত নতুন মানচিত্র অানে ওলি সরকার এবং সেই প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশ করিয়ে নেয়। এই মহিলার প্ররোচনাতেই নাকি চিনের হাতে নেপালের বহু ভূখণ্ড চলে গেলেও প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। এখন তাই ওলির বিপদে তাঁকে বাঁচাতে অপারেশন শুরু করেছেন এই চিনা রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করেই। আর এই চিত্রনাট্যের পিছনে একদিকে যেমন চিনের তীব্র ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে আছে ভবিষ্যতে নেপালকে পুরোপুরি কবজা করে নেওয়ার ফাঁদ।

Previous articleআক্রান্তদের মনোবল বাড়াতে কলকাতায় এলেন ৩০ ‘করোনা- জয়ী’
Next articleমোহভঙ্গ! তৃণমূলেই ফিরতে চান বিপ্লব মিত্র