পুলিশের জালে বিকাশের স্ত্রী-পুত্র: এবার কি তাদের পালা?

জয়িতা মৌলিক

এনকাউন্টারে খতম বিকাশ দুবে। এবার কি তার স্ত্রী-পুত্র একই হাল হবে? পুলিশের জালে ধরা পড়েছে বিকাশের স্ত্রী রিচা দুবে। পুলিশ সূত্র খবর, রিচাকে অপরাধীকে আশ্রয় দেওয়া ও তার সঙ্গে সংযোগ রাখার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সন্ধেয় তার কৃষ্ণ নগরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে এসটিএফের-একটি দল। গ্রেফতার করা হয় বিকাশ রিচার ছেলে এবং তার এবারের পরিচারককেও। কৃষ্ণনগরের যে বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, সে বাড়ির সামনে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রেখেছিল রিচা। তার যোগ করে ছিল নিজের মোবাইলের। ফলে ঘরের ভিতরে থেকেই বাইরের সমস্ত গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সে। এই কারণে দোসরা জুলাই ঘটনার পরে দুবার পুলিশ ওই বাড়িতে গেলেও রিচাদের পায়নি। অভিযোগ, পুলিশ হত্যাতেও হাত ছিল রিচার।

কে এই রিচা? কানপুরে বিকাশের সঙ্গে থাকত সে। কিন্তু ২ জুলাই পুলিশ হত্যার পর থেকে ফেরার সেও। লোকে বলে রিচাই বিকাশের স্ত্রী। সে নিজেও একসময় দল পরিচালনা করত। রিচার সঙ্গে বিকাশের পরিচয় ১৯৯৭ সালের নাগাদ। তখন কানপুরে নিজের পিসির বাড়িতে পড়তে গিয়েছিল বিকাশ। সেই পাড়াতেই থাকতেন বায়ুসেনার কর্মরত এইচপি নিগম। তাঁর মেয়ে সোনু। সোনু প্রায়ই আসত বিকাশের পিসির বাড়ি। আর সেখানেই তাকে ভাল লেগে যায় মাফিয়ার। তবে তখন অবশ্য বিকাশ অপরাধ জগতে ততটা হাত পাকায়নি। সোনুকে কাছে পেতে সহজ রাস্তা নিয়েছিল বিকাশ। সোনুর ভাই জ্ঞানেন্দ্র সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সে। ফলে ধীরে ধীরে অবাধ যাতায়াত শুরু হয় জ্ঞানেন্দ্র বাড়িতে। সম্পর্ক গভীর হয় রিচার সঙ্গে। কিছুদিন পরে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সে। কিন্তু বিকাশ দুবে আর সোনু নিগম। এই জাতিভেদের কারণেই সোনু বাবা বিয়েতে রাজি হননি।
সেই সময় অবশ্য বিকাশ ছোটখাটো দাদা হয়ে উঠেছে। তাই প্রেমিকাকে বিয়ে করতে তার বাবার মাথায় বন্দুক ঠেকাতেও আটকায়নি তার। কিন্তু বায়ুসেনার কর্মী নেহাত পিস্তল দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার লোক নন। মেয়েকে বাড়িতে বন্দি করে ফেলেন তিনি। বন্ধ হয় বিকাশে যাতায়াত। সেই কারণে বাড়ি থেকে পালাতে হয় বিকাশ আর রিচাকে। বিয়ে করে তারা।
আর বিয়ের পরেই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। অপরাধ জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে রিচার। বকলমে দল চালাতে শুরু করে সে। সেই কাজে সঙ্গে ছিল তার ভাই। কারণ সেও ততদিনে বিকাশের ডানহাত হয়ে উঠেছে।
বিকাশ তখন জেলে সেই অবস্থায় ভাই-বোন মিলে শুধু দল চালানো নয়, সোনুর নামে বিকাশ যা যা সম্পত্তি কিনেছিল সেগুলি বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে। জেলে বসে প্রতিটা খবর পৌঁছে যেত বিকাশের কাছে। সেইসময় বিকাশকে ছেড়ে বাপের বাড়ি পালিয়ে যায় রিচা। জেল থেকে বেরোনোর পর সোজা সেখানে হাজির হয় বিকাশ। ক্রমাগত হুমকির ফলে ফের বিকাশের ঘরে ফিরে আসতে বাধ্য হয় রিচা। ফের একসঙ্গে থাকা শুরু। সরাসরি যুক্ত না থাকলেও, পুলিশ সূত্রে খবর, বিকাশের অনুপস্থিতিতে কিংবা অন্দরমহলে থেকেও দল পরিচালনা করত রিচা।

পুলিশ হত্যার পর থেকে সেই রিচাও ফেরার ছিল। ধরা পড়লেও তার সঙ্গিনীকে পায়নি কেউ। এখানে অনেকে প্রশ্ন তোলেন তাহলে কি দল এবং ঘর বাঁচাতেই ধরা দিয়েছিল বিকাশ। যদি এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সে এখন আর নেই। পুলিশের জালে ধরা পড়ে রিচা আর ছেলে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এদেরও কি এনকাউনটার হয়ে যাবে? কারণ বিকাশের দল যোগাযোগ রাজনীতির পরিচয় সবকিছুরই তথ্য রয়েছে রিচার কাছে।

Previous article” সৌরশক্তি একবিংশ শতাব্দীতে শক্তির প্রধান মাধ্যম হতে চলেছে “: মোদি  
Next articleসাত নম্বর বিয়েতেই বাধা! ১৭ সন্তানের পিতা দিদারুলের ঠাঁই হল শ্রীঘরে