শুভ্রজিৎ, লক্ষ্মী সাউয়ের পর অশোক রুইদাস। হাসপাতালের রেফারের চক্রে পড়ে সোমবার ফের প্রাণ গেল আরও এক তরতাজা যুবকের। জয়নগরের বাসিন্দা ওই যুবক অশোক রুইদাসকে মেডিক্যালে ভর্তিই নিল না। হাসপাতাল চত্বরেই বাবা-মায়ের সামনেই মৃত্যু হলো বছর ২৬-এর যুবকের। রোগী ফেরানো যাবে না, সরকারের এই নির্দেশিকা যে খাতায় কলমেই বেঁচে রয়েছে, বারবার তার প্রমাণ মিলছে। তবু চেতনা ফিরছে না প্রশাসনের

দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরে একটি ছোট সংস্থায় কাজ করত অশোক রুইদাস। সপ্তাহ দুয়েক আগে সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। ভর্তি করা হয় দক্ষিণ বারাসতের এক বেসরকারি হাসপাতালে। দীর্ঘ প্রায় ১৪দিন চিকিৎসা চলার পর পরিস্থিতি খারাপ হলে তাকে আজ, সোমবার সকালে কলকাতায় আনা হয়। প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভর্তি নেওয়া হয়নি। অগত্যা অশোককে নিয়ে বাবা-মা যান শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালে। সেখানেও ভর্তি করা হয়নি। তখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেন দেওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকেন অশোকের অভিভাবকরা। কিন্তু ভর্তি না করেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে ভর্তি করা হয়নি। শেষে স্ট্রেচারেই মারা যায় অশোক।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হাসপাতাল ভর্তি না করায় যে যুবক মারা গেল, তার দেহের পোস্ট মর্টেম করার জন্য চরম ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় তারপর। কোথা থেকে যেন বউবাজার থানার পুলিশ কর্মীরা চলে আসেন। তাঁরা দেহ নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। মৃতের বাবা পরিষ্কার ভাষায় জানান, ছেলে মোটেই করোনা আক্রান্ত ছিল না। তাই দেহ দেব না। বাঁচাতে পারলাম না ছেলেকে, দেহ দেব কেন? মৃত অশোকের বাবা সব চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রাইভেট অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে ছেলেকে জয়নগরে নিয়ে চলে যান।

দিনভর বিধায়ক খুন নিয়ে নেতানেত্রীদের রাজনৈতিক চাপান-উতোরের খামতি নেই। কিন্তু একবারের জন্যেও অশোক রুইদাস কিংবা লক্ষ্মী সাউয়ের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে একটি কথাও বলেননি কোনও রাজনৈতিক নেতা। ক্ষুব্ধ মানুষ বলছেন, এ যেন বাম জমানার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার রেপ্লিকা দেখছি!
