রেফার হয়রানি রুখতে কোরোনা রোগীদের জন্য বিশেষ ব্লক: দাবি, ‘MCKRDA’-এর

রেফার চক্রে পড়ে হয়রান হতে হচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের। চিকিৎসার অভাবে হচ্ছে মৃত্যু। একের পর এক এমনই অভিযোগ উঠে আসছে। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি চেয়ে সরকারের কাছে কতকগুলি দাবি রাখল ‘মেডিক্যাল কলেজ রেসিডেন্ট ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন'(MCKRDA)।

মঙ্গলবার এই সংগঠনের তরফে কতকগুলি দাবি পেশ করা হয়। এই দাবি গুলি হল..

১) অবিলম্বে প্রতিটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের ( secondary and tertiary level) হাসপাতালে শুধুমাত্র কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্লক খুলতে হবে। যাতে করোনা উপসর্গযুক্ত বা করোনা পজিটিভ রোগীদের এই হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে হয়রানির শিকার না হতে হয়।

২) প্রতিটি মেডিকেল কলেজ সহ তৃতীয় স্তরের (Tertiary level) সরকারি হাসপাতালে গুরুতর ভাবে অসুস্থ কোভিড রোগীদের জন্য (ডাক্তারি পরিভাষায় Level III, IV) সিসিউ বেড ও অন্যান্য আয়োজন সহ বিশেষ কোভিড ব্লকের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দের নিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি ( Infection Control Committee) তৈরি করে সেই কমিটির তত্ত্বাবধানে এ ‘নন কোভিড উইং’ এ করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগী দের চিকিৎসা স্বাভাবিক রাখতে হবে।

৩) কোভিড রোগীদের ভর্তি ও রেফারেল প্রক্রিয়ার জটিলতা হ্রাস করতে হবে, স্বাস্থ্যভবন ও প্রতিটি হাসপাতালের মধ্যে সমন্বয় যথাযথ হতে হবে। স্বাস্থ্যভবন এ ২৪x৭ কন্ট্রোল রুম খুলে কোভিড ও কোভিড সাসপেক্ট (যাদের পরীক্ষা এখনো হয়নি বা রিপোর্ট পাওয়া যায় নি) রোগীরা কোথায় যাবেন তার যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। রোগী স্থানান্তরের জন্য অক্সিজেন যুক্ত এম্বুল্যান্স এর ব্যবস্থা এই কন্ট্রোল রুম থেকে করতে হবে।

যথেচ্ছ রেফার করা যাবে না, করতে হলে রোগীর তাৎক্ষণিক ভাবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা করে, স্বাস্থ্যভবনের কন্ট্রোল রুম কে জানিয়ে, কন্ট্রোল রুম এর মাধ্যমে রেফার করতে হবে।

৪) মেডিকেল কলেজের মত হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগ কে কার্যত অকেজো করে রাখা হয়েছে, ফলে খারাপ রোগী হঠাৎ এসে পড়লে তার চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অবিলম্বে প্রোটোকল মেনে রোগীদের আপতকালীন চিকিৎসার সেট আপ চালু করতে হবে।

৫) করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগীদের চিকিৎসা কেবল নোটিশ দিয়ে দায়সারা ভাবে করলে চলবে না, যথাযথ প্রোটোকল মেনে নন-কোভিড উইং আলাদা করে প্রতিটি রোগীর চিকিৎসা সুনিশ্চিত করতে হবে। নাহলে কিন্তু এই রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়া অবস্থায় যদি কোভিড আক্রান্ত হন তাহলে তাদের বাঁচানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে।

৬) ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা কে কাজে লাগিয়ে একদম কমিউনিটি স্তর থেকে উপসর্গ ভিত্তিক ভাবে কো মর্বিডিটি ও বয়সভিত্তিক ভাবে ভাগ করে কোভিড রোগীদের ট্রায়াজ করতে হবে। স্বাস্থ্যভবনের কন্ট্রোল রুমের মনিটরিং এ ও সরকারি নির্দেশিকা মেনে রোগীদের উপসর্গ, শারীরিক অবস্থা বিচার করে যে হাসপাতালে যে রোগীর চিকিৎসা হওয়া উচিত তা যাতে হয় নিশ্চিত করতে হবে।

৭) বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিং হোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কোভিড টেস্টিং যাতে বৈধভাবে হয় তা সুনিশ্চিত করতে হবে। সেই টেস্ট কোন পদ্ধতি তে করা হচ্ছে এবং তার ফলাফল বাধ্যতামূলক ভাবে স্বাস্থ্য দপ্তর কে নিয়মিত রিপোর্ট করতে হবে। (যেমন টিবি, পোলিও পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটা কেস পজিটিভ হলে তা সরকার কে জানাতে হয় অতি দ্রুত তেমন ভাবে)। যে সমস্ত হাসপাতালে ‘তাৎক্ষণিক কিট’ টেস্ট করে পজিটিভ রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তাদের দ্রুত সেই রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনের কন্ট্রোল রুমে জানিয়ে, রোগীর প্রাথমিক চিকিৎসা করে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে রোগীকে প্রয়োজনীয় অন্য জায়গায় পাঠানোর যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) প্রতিটি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রুপ ডি কর্মচারী, ওয়ার্ড বয় এর উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের সুরক্ষা ও উপযুক্ত মাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। এবং তাদের কাজে লাগিয়ে রোগীদের ভর্তি করে যাতে দ্রুত ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা যায়, রোগীদের রক্তপরীক্ষা, X-ray থেকে শুরু করে প্রতিটি ইনভেস্টিগেশন যাতে দ্রুত ও হয়রানিমুক্ত ভাবে হয় সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব নিতে হবে।

৯) কোভিড এর মোকাবিলা করার জন্য অবিলম্বে নতুন পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হবে। ভেন্টিলেটর এর সংখ্যা বাড়াতে হবে, হাই ফ্লো অক্সিজেন লাইন তৈরি করতে হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রক এর ওয়েবসাইটে রোজ যে ফাঁকা বেডের সংখ্যা দেখানো হচ্ছে তার প্রকৃত অবস্থা কি তা প্রকাশ করতে হবে।

পুরনো পরিকাঠামো দিয়ে এত রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি কোরোনার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। এই বিষয়টি তুলে ধরেই দাবিগুলি জানিয়েছে সংগঠন।

Previous articleরাজ্যে হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি, বুধবার রাষ্ট্রপতিকে বলবে তৃণমূল
Next articleরাত পোহালে মাধ্যমিকের ফল বেরোলেও মার্কশিট দেওয়া হবে ২২ জুলাই