শিরোনামে ম্যাথু স্যামুয়েল,’তহেলকা স্টিং’ মামলায় জয়া জেটলি-সহ ৩জনের কারাদণ্ড

সেই তহেলকা-কাণ্ড ফের ভেসে উঠলো৷ সামনে এলো বাংলায় এক পরিচিত নাম, ম্যাথু স্যামুয়েল৷

তহেলকা-কাণ্ড মানে ২০০১ সালে ফাঁস হওয়া রাজনীতিকদের ঘুষ নেওয়ার ফুটেজ। সেটাই এ দেশের রাজনীতির আঙ্গিনায় প্রথম স্টিং অপারেশন৷ ‘তহেলকা ডট কম’ নামে এক নিউজ পোর্টাল করেছিলো এই
স্টিং অপারেশন৷ নাম ছিলো ‘অপারেশন ওয়েস্টেন্ড।’ ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে গোপন ক্যামেরা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের অন্দরমহলে পৌঁছে গিয়েছিলেন এ রাজ্যে ‘বিখ্যাত’ হয়ে ওঠা সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল। এই ম্যাথু স্যামুয়েল-ই বাংলার কিছু তৃণমূল নেতামন্ত্রীদের কাছে গিয়ে নারদ ফুটেজ তুলেছিলেন৷ দেখিয়েছিলেন এ রাজ্যের কিছু নেতা-মন্ত্রীর মোটা টাকা ঘুষ খাওয়ার ফুটেজ৷ নারদ-কাণ্ড নামে পরিচিত ওই ঘুষকাণ্ডের এখন CBI তদন্ত করছে৷

জাতীয় রাজনীতি সেদিন টগবগ করে ফুটতে শুরু করে তহেলকা- ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পর৷
জর্জ ফার্নান্ডেজ তখন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, জয়া জেটলি তাঁর ছায়াসঙ্গী।জয়া-জর্জের বিশেষ বন্ধুত্বের কথা সবাই জানে৷ CBI আদালত বৃহস্পতিবার জয়া জেটলি-সহ ৩ জনকে সশ্রম কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করেছে৷ যে যে ধারায় জয়া জেটলিদের দোষী সাব্যস্ত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম সেনাবাহিনীর জন্য “সোলার ইমেজার”কেনার
বরাতে ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করা এবং
“সোলার ইমেজার” কেনার বরাত নিয়ে দুর্নীতি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ৩ জনকে। এই মামলায় দিল্লির স্পেশাল CBI কোর্ট বৃহস্পতিবার সাজা ঘোষণা করলো৷ CBI বিশেষ আদালতের বিচারক বীরেন্দ্র ভাট সমতা পার্টির প্রধান তথা তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্ন্ডাডেজের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী জয়া জেটলিকে ৪ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। জয়া জেটলির সঙ্গেই সমতা পার্টির আর এক নেতা গোপাল পাচেরওয়াল এবং অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর জেনারেল এসপি মুরগাই-কেও ৪ বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি দেওয়া হয়েছে৷ সাজাপ্রাপ্ত ৩ জনকে একইসঙ্গে ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানাও করেছে CBI আদালত। সাজা পাওয়া ৩ জনকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

তহেলকার সেই ফুটেজে দেখা গিয়েছিল ২ লক্ষ নগদ টাকা নিচ্ছেন জয়া জেটলি। মুরগাইকে দেখা গিয়েছিল ২০ হাজার টাকা নিতে। চুক্তি ছিল এমন, এই টাকার বিনিময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রক যে “সোলার ইমেজার” কিনবে তার বরাত যিনি টাকা দিচ্ছেন তাঁর কোম্পানিকে দিতে হবে। পুরোটাই ছিল সাজানো। দুর্নীতি ধরার ফাঁদ। যে ভাবে এখানে নারদ অপারেশন করা হয়েছিল।

ম্যাথু স্যামুয়েলের করা স্টিং অপারেশন বা তহেলকার কাহিনী ছিলো এই রকম, ২০০০ সালের ২৫ ডিসেম্বর বিকেলবেলায় দিল্লির একটি নামী হোটেলে মুরগাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন ম্যাথু স্যামুয়েল। মুরগাইয়ের কাছে তাঁকে নিয়ে যান সুরেন্দ্র কুমার সুরেখা নামের এক ব্যক্তি। পরে তিনি এই মামলায় রাজসাক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন। মুরগাইয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়, তাঁকে ২০ হাজার টাকা তখনই দেওয়া হবে। তার বিনিময়ে মুরগাই জয়া জেটলির সঙ্গে ম্যাথুর দেখা করার তারিখ ঠিক করে দেবেন। টাকা নিয়ে তারিখ ফাইনাল করতে নামেন মুরগাই। জয়ার কাছে প্রথমে না গিয়ে সমতা পার্টির নেতা গোপাল পাচেরওয়ালের কাছে যান৷ তারপর জয়ার কাছে পৌঁছে যান ম্যাথু। তাঁকে ২ লক্ষ টাকা দেন ম্যাথু। ২০ বছর আগে ২ লক্ষ টাকার মূল্য ছিল অনেক। সব মিলিয়ে ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ফুটেজ ধরা পড়েছিল ম্যাথু স্যামুয়েলের তহেলকা কাণ্ডে।
বঙ্গ- রাজনীতিতেও এই তহেলকা নিয়ে প্রচার হয়েছিল। জর্জ-জয়ার কার্টুন এঁকে বাম-কংগ্রেস প্রচার করেছিলো৷ এদিকে এই রায়ের পর রাজ্য রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে নারদ-কাণ্ড৷

Previous articleবুমরাহ এখন অনেক পিছনে, লাফিয়ে উঠে এলেন স্টুয়ার্ট ব্রড  
Next articleইস্টবেঙ্গলের নতুন কোচ