Wednesday, December 3, 2025

এই সোমপুরা পরিবারই নির্মাণ করছে অযোধ্যার রাম মন্দির

Date:

Share post:

গুজরাটের ভাবনগরের পালিতানা টাউনের বনেদি বাসিন্দা সোমপুরা পরিবার৷

দেশে বেশ কয়েকটি বিড়লা মন্দির গড়েছিলেন চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। সেই সূত্রেই শিল্পপতি ঘনশ্যামদাস বিড়লার সঙ্গে ঘণিষ্ঠতা৷ জিডি বিড়লাই একদিন চন্দ্রকান্ত সোমপুরাকে রাম মন্দির নির্মাণের ভার নিতে বলেছিলেন। আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ প্রধান থাকা অশোক সিংঘলের সঙ্গে। তার পর কেটে গেছে এতগুলো বছর। আজ সেই সোমপুরা পরিবারের নকশাতেই নির্মিত হচ্ছে অযোধ্যার রাম মন্দির।
দেশ ও বিদেশে ২০০টির বেশি বিখ্যাত মন্দির নির্মাণ করেছেন সোমপুরারা। গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরকে রূপ দিয়েছে। পরিবারের দাবি, ওই মন্দির নির্মাণের প্রশিক্ষণ নাকি দিয়েছিলেন খোদ বিশ্বকর্মা।

৩০ বছর আগে প্রথমবার অযোধ্যার রাম জন্মভূমিতে গেছিলেন ৭৭ বছরের চন্দ্রকান্ত। তিনিই আজ সোমপুরা পরিবারের কর্তা। যেদিন প্রথম ওখানে গিয়েছিলেন, তখনও ‘‌বিতর্কিত’‌ ভূখণ্ডে ছিল বাবরি মসজিদ। গর্ভগৃহে পরিমাপের যন্ত্র নিয়ে ঢোকার অনুমতি ছিল না। তাই পা ফেলে ফেলে মাপ নিয়েছিলেন চন্দ্রকান্ত। তার পরেই ওখানেই এক কোনে বসে পেনসিলে এঁকে নেন নকশা। পরে সেই ‘রাফ’ স্কেচ দেখে শুরু করেন চূড়ান্ত নকশা তৈরির কাজ৷ ৩০ বছর আগের কথা৷
বুধবার টিভিতে বসেই চন্দ্রকান্ত দেখলেন ভূমিপুজো। বয়স হয়েছে। এই সংক্রমণ- আবহে অযোধ্যায় যেতে পারেননি চন্দ্রকান্ত। তবে ৫০ বছরের ছেলে আশিস অযোধ্যাতেই আছেন। মন্দির নির্মাণের বরাত পেয়েছে লারসেন এবং টাবরো সংস্থা। তাদের সঙ্গেই নির্মাণের কাজ দেখছেন আশিস সোমপুরা।

কাজ শিখতে নাকি কোনও প্রশিক্ষণ নিতে হয় না এই পরিবারের ছেলেদের। কোনও স্কুলেও যেতে হয় না। বংশ পরম্পরায় শিখে নেন নকশা তৈরি করার কাজ।
আশিসের প্রপিতামহ, চন্দ্রকান্তের পিতামহ প্রভাশঙ্কর, গুজরাটের সোমনাথ মন্দিরের নকশা করেছিলেন। ১৯৫১ সালে সেই মন্দির উদ্বোধন করেন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ। পরে পদ্মশ্রী খেতাবে ভূষিত হন প্রভাশঙ্কর। ছেলে বলবন্ত রাই বদ্রিনাথ মন্দির সংস্কার করে ফিরছিলেন। পথে দুর্ঘটনায় মারা যান। তখন বয়স ছিল ৫১।
‘সোম’ মানে চাঁদ, ‘পুরা’ অর্থ নগর৷ তাই নিজেদের ‘‌চাঁদের বাসিন্দা’‌ বলে মনে করেন এই পরিবার৷ এই পরিবারই সংস্কারের কাজ করে মথুরার কৃষ্ণ মন্দিরের। ওখানেই প্রথমবার চন্দ্রকান্তকে সাহায্য করেছিলেন ছেলে আশিস। পালিতানার শেত্রুঞ্জয় পাহাড়ের জৈন মন্দিরও নির্মাণ করেছেন এরা। আমেরিকার স্বামী নারায়ণ মন্দিরের নকশাও এই পরিবারেরই কাজ।

অযোধ্যার রাম মন্দিরের ২–৩ ধরনের নকশা করেন চন্দ্রকান্ত। তার মধ্যে একটি চূড়ান্ত করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ৷ চন্দ্রকান্ত সোমপুরার এখনও মনে আছে, তখন দেশে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও। বাবরি মসজিদ তখনও ভাঙা হয়নি। নিজের দপ্তরে চন্দ্রকান্তকে ডেকে পাঠান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, একটি বিকল্প নকশা করতে, যেখানে বাবরি মসজিদের পাশেই থাকবে রাম মন্দির। চন্দ্রকান্ত সেই মতো মসজিদের তিনটি গম্বুজ অক্ষত রেখে এঁকেছিলেন মন্দিরের নকশা। ভিএইচপি মানেনি। তার পরই শুরু হয় দীর্ঘ টানাপোড়েন। পাঁচ বছর আগে, শেষবার, অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের কাজ দেখতে গেছিলেন চন্দ্রকান্ত। আর ওদিকে যাননি৷ মন্দির হলে, দেখতে যাবেন৷ এখন মূলত দুই ছেলে নিখিল আর আশিস- ই কাজ দেখছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে নাতি আশুতোষও (‌২৮)‌ যোগ দিয়েছেন ব্যবসায়৷

spot_img

Related articles

এসআইআর আতঙ্কে তুফানগঞ্জে আতঙ্কে আত্মঘাতী গৃহবধূ! হাওড়ায় অসুস্থ বিএলও

এসআইআর সংক্রান্ত চাপে একই দিনে দুটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল রাজ্যে। কোচবিহারের তুফানগঞ্জে আতঙ্কে আত্মঘাতী হলেন এক গৃহবধূ, অন্যদিকে...

স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্পে তিন সপ্তাহে পরিষেবা পেলেন এক লক্ষের বেশি মানুষ, শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় আরও এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করল স্বাস্থ্যবন্ধু প্রকল্প। মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যেই এই প্রকল্পের শিবিরগুলিতে চিকিৎসা...

বাংলার পুলিশের ডিএসপি পদে যোগ রিচা ঘোষের: নাম লেখালেন দীপ্তির পাশে

নিয়োগ পত্র আগেই পেয়েছিলেন। বুধবার পুলিশের উর্দি পরে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন রিচা ঘোষ। না, এটা ক্রিকেটের জার্সিতে উইকেট...

আদালতের রায়ে বহাল ৩২ হাজার প্রাথমিক নিয়োগ, হাইকোর্ট চত্বরে অকাল হোলিতে মাতলেন শিক্ষকরা

দীর্ঘ দু’ বছর ধরে লড়াই, অনিশ্চয়তা আর সামাজিক উপহাস—সবকিছু কাটিয়ে অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা।...