মাঝরাস্তার পাঠশালাই তীর্থক্ষেত্র, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

এ কী দেখলাম! এটাই তীর্থ। এটাই পুণ্য।

রাত আটটায় নিউজ 18 বাংলায় লাইভ।
5 অগাস্ট, লকডাউন।
বৃষ্টিভেজা সন্ধে।
ওদের দপ্তরে যাচ্ছি সল্ট লেক দিয়ে।

হঠাৎ গাড়ির অন্য দুই আরোহী, পিন্টু আর পীযূষ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল ডানদিকে।
দেখি মাঝরাস্তায় ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর নিচে ডিভাইডারের পাশে কটা বাচ্চা পড়ছে। যেন ক্লাস চলছে।

গাড়ি ঘুরিয়ে আবার এলাম। দাঁড়ালাম। দেখলাম। নামলাম।

আমি বিস্মিত।
শুনশান রাস্তা। বৃষ্টি চলছে।
তার মধ্যে ছোটদের পড়াচ্ছেন এক দম্পতি।
শ্রীমন্ত তাঁতি আর তাঁর স্ত্রী মমতা।
আলাপ হল।

শ্রীমন্ত মাছ বিক্রি করেন।
তাঁরা স্থানীয় বস্তিবাসী বাচ্চাদের সন্ধেবেলা পড়ান।
একটা ব্ল্যাকবোর্ডও জোগাড় করেছেন।
এরা সরকারি স্কুলে পড়ে। এখন সব বন্ধ। যাতে পিছিয়ে না পড়ে, তাই নিয়মিত ক্লাস।
মোট 17 পড়ুয়া। ক্লাস ওয়ান থেকে এইট।
রাস্তার পাশে কী গভীর আগ্রহে ছেলেমেয়েরা ডুবে পড়াশোনায়।
বৃষ্টির ছাট বেশি এলে পড়া বন্ধ।

এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এই লড়াই।
স্যালুট করি দম্পতিকে।
জিজ্ঞেস করে জানলাম ছোটদের একটু বইখাতার জোগানের সহযোগিতা করলে ভালো হয়।

নিশ্চয় করব। সাধ্যমত করব। আবার যাব ওই পাঠশালায়।
পরিচিত বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল, সনেট হোটেলের কাছে মাঝরাস্তার পাঠশালায় যদি মনে হয় কোনো সন্ধেবেলা একটু দাঁড়াবেন, অন্যরকম অনুভূতির স্বাদ পেতে পারেন।

ফুটপাতের পাঠশালা আমি অনেক দেখেছি।
কিন্তু লকডাউনের বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় এই নিবিড় মনোনিবেশেষের মাঝরাস্তার পাঠশালা- এ অনবদ্য।

পাশে একটু দাঁড়াতে পারলে আমার জীবনই ধন্য হবে। পুণ্য অর্জন করব।

ভালো থাকুক পাঠশালা।
শিগগিরই দেখা হবে।

 

ছবি: পীযূষ বর্মণ, পিন্টু পাল।

 

Previous articleলকডাউনের মধ্যেই শহরজুড়ে বিজেপির রাম আরাধনা
Next articleরাম মন্দিরের ভূমিপুজোর দিন সম্প্রীতির বার্তা দিলেন অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরাত