হিন্দুত্ববাদের নতুন ‘পোস্টার-বয়’ নরেন্দ্র মোদি, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

একেবারে ছক কষে এগোচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি৷ মাপা পদক্ষেপ ৷ স্ক্রিপ্টেড বক্তব্য৷ কমা, সেমিকোলন,
ফুলস্টপও আলাদা বার্তা বহন করছে৷

অযোধ্যায় জাঁকিয়ে বসেছে সংক্রমণ৷ উত্তর প্রদেশের এক মন্ত্রী সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন৷ রাম মন্দির চত্বরেও ঢুকেছে ভাইরাস৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে ওই একই ভাইরাস৷ প্রধানমন্ত্রীর বয়স ভাইরাস মোকাবিলার সহায়ক নয়৷

ফলে অযোধ্যায় সরাসরি তাঁর না থাকাই স্বাভাবিক ছিলো৷ কিন্তু এত কিছুর পরেও নরেন্দ্র মোদি পা রাখছেন অযোধ্যায়৷ কারন, নরেন্দ্র মোদি ছক কষে এগোচ্ছেন৷ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জয়গান গেয়ে দু’টি নির্বাচন তিনি জিতেছেন৷ এই একই মন্ত্রে ২০২৪-এর বৈতরণী টপকানো যে মুশকিল, তা সব থেকে ভালো বুঝতে পারছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই৷ আর্থিক মন্দা, কর্মসংস্থান শূন্য৷ ‘ডোল’ দিয়ে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের ধরে রাখার কর্মসূচি ২০২৪ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব৷ একের পর এক ঘরের জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতে আজ পর্যন্ত কেউই পারেনি৷ সুস্থ-সবল সরকারি সংস্থা বিক্রি করে আজীবন দেশ চালানো অসম্ভব৷ মহামারি নিয়ন্ত্রণ যে থালা বাজিয়ে বা প্রদীপ জ্বালিয়ে সম্ভব নয়, সেটা এতটাই দেরিতে বুঝেছেন যে ততদিনে “অনুপ্রবেশকারী” মারণ ভাইরাস কার্যত ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে ফেলেছে৷
রাফাল, ৩৭০ বা তিন তালাক, পেটে ভাত দেয়না৷ ভাত না পাওয়া মুখের মিছিল দীর্ঘ হতে শুরু করলে, দিল্লি ছুঁয়ে ফেলা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়৷

প্রধানমন্ত্রী তুখোড় বক্তা৷ স্রেফ কথা বলেই তিনি করলার রসকে রাবড়ি বলে খাইয়ে দিতে পারেন৷ কিন্তু তিনি খুর খারাপ শ্রোতা৷ সাধারণ মানুষের কথা শোনেননা, সংবাদমাধ্যমের কথা শোনেন না৷ হয়তো তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের কথাও শোনেন না৷ এই কথা না শোনার জগতের বাসিন্দাদের একটা সুবিধা, তাঁরা নিজেরাই প্রশ্ন করেন, নিজেরাই মনপসন্দ উত্তরও দিয়ে দেন৷ ফলে একটা ফাঁক থেকেই যায়, ফাঁকা বাড়তেও থাকে৷

প্রধানমন্ত্রী যতখানি না হিন্দুত্ববাদী, তার থেকে একশোগুণ বেশি ‘বাস্তববাদী’৷ তিনি টের পাচ্ছেন ,২০২৪ খুব খারাপ বার্তা নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে৷ এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি কাটাতে একটা ঝটকা দরকার৷ যে ঝটকা ভুলিয়ে দেবে মানুষের কান্না, ঘাম,রক্ত,তৃষ্ণা, খিদে৷

সেই ‘ঝটকা’-র সলতে পাকাতেই আজ, বুধবার শত ঝুঁকি ও সমালোচনার মধ্যেই অযোধ্যায় পা রাখছেন নরেন্দ্র মোদি৷ কোটি কোটি ভারতবাসীর আবেগ উসকে দিয়ে রাম মন্দির নির্মাণের সূত্রপাতের নায়ক হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি। আজকের এই ছবিই হবে ২০২৪-এর নির্বাচনে মোদির প্রধানতম হাতিয়ার৷ কোনও সাধু-সন্ত নয় আজ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের ‘চিরস্থায়ী’ পোস্টার-বয় হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ এটাই মাপা পদক্ষেপ মোদির৷ এ জন্যই কোনও কথা কানে না এনে নিজেকে প্রস্তুত রাখছিলেন ৫ আগস্টের জন্য৷ আজ ঠিক সাড়ে ১২টায় হবে ভূমিপুজো।
শিলান্যাসস্থলের মঞ্চে মাত্র পাঁচজন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিবেন প্যাটেল এবং মহন্ত নিত্যগোপাল দাস।
২০২৪-এর নির্বাচনে এই ছবিই মোদিকে ক্ষমতায় ফেরাতে পারে৷ রামমন্দির হিন্দুত্ব রাজনীতির প্রতীক। এই ইস্যুই মাত্র দু’জন সাংসদের দল বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিলো৷
এই সার সত্য মোদির অজানা নয়৷ তাই আজ ওই রামমন্দিরের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে নিজের নাম যুক্ত করে নিলেন তিনি৷ এই সুযোগ কোনও উন্মাদও হাতছাড়া করতেন না৷

আজ, বুধবার, ভূমিপুজোর পর কাল বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হবে মন্দির নির্মাণের কাজ৷ নির্মাণকারী সংস্থা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের দোলযাত্রার দিন এই মন্দির সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে৷

পরবর্তী লোকসভা ভোট ওই ২০২৪-এর দোলযাত্রার পরেই৷ আজ এখনই বোঝা যাচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচনে কার্যত কোনও ভোটই হবে না৷ হিন্দু-আবেগ ৪০০+ আসন উপহার দিতে পারে হিন্দু সম্প্রদায়ের নব্য ‘পোস্টার-বয়’ নরেন্দ্র মোদির হাতে৷

এটাই তো প্রধানমন্ত্রীর মাপা পদক্ষেপ ৷ এমনই তো হওয়ার কথা স্ক্রিপ্টেড দৃশ্যসমূহ৷

কোনও ভাইরাসেরই ক্ষমতা ছিলো না তাঁকে আটকানোর৷

Previous articleমোদিই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি রামজন্মভূমি স্পর্শ করছেন
Next articleদিনভর বৃষ্টি: প্রবল বর্ষণে ভাসবে দক্ষিণবঙ্গ, পূর্বাভাস হাওয়া অফিসের