একুশের বিধানসভা নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েকমাস।

ঠিক তখনই বঙ্গ রাজনীতিতে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথা বিজেপির প্রাক্তন নেতা তথাগত রায়।
প্রবীণ এই বিজেপি নেতা
ফের একবার বাংলায় সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন৷ তিনি বলেছেন, “মেঘালয়ের রাজ্যপাল পদে তাঁর নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তিনি বাংলার রাজনীতিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে চান।”
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মুখে তথাগত রায়ের এমন সিদ্ধান্ত বেশ অর্থবহ বলেই মনে করে বঙ্গ রাজনৈতিক মহল। অনেকের ধারনা, তথাগতের এই ইচ্ছা শুধুই যে তাঁর একার সিদ্ধান্তে এমন হতে পারেনা৷ বিজেপির শীর্ষস্তরের সবুজ সংকেত ছাড়া এতখানি খোলাখুলিভাবে তিনি এই ইচ্ছাপ্রকাশ করতেই পারেন না৷ আচমকা তথাগত রায়ের এই ইচ্ছার পিছনে বঙ্গ-বিজেপির সাম্প্রতিক কোন্দলের সম্পর্ক আছে বলেও বঙ্গ-বিজেপির অন্দরের অনেকের ধারনা৷
৭৪ বছর বয়সী এই তথাগত রায় বরাবরই স্পষ্টভাষী৷ সেই তথাগতবাবুই সম্প্রতি জানিয়েছেন যে, বিজেপি নেতৃত্ব রাজি হলে পশ্চিমবঙ্গের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসতে চান তিনি। তথাগতবাবু বলেছেন,
“গভর্নর হিসাবে আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে, আমি সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাই এবং পশ্চিমবঙ্গবাসীর সেবা করতে চাই।আমি আমার রাজ্য-রাজনীতিতে ফিরে আসার ব্যাপারে দলের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তাবও দেব”৷
এই তথাগত রায় ২০০২-২০০৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদে ছিলেন এবং ২০০২-২০১৫ সাল পর্যন্ত বিজেপির জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যও ছিলেন। ২০১৫ সালের মে মাসে তাঁকে ত্রিপুরার রাজ্যপাল হিসাবে নিয়োগ করা হয় এবং পরে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে তিনি মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মেঘালয়ের রাজ্যপাল হিসাবে তথাগত রায়ের কার্যকালের মেয়াদ চলতি বছরের মে মাসেই শেষ হয়ে যায় কিন্তু মহামারি পরিস্থিতিতে এই মেয়াদ আরও কিছুদিন বাড়ানো হয়।

এক সাক্ষাতকারে বঙ্গ বিজেপির কিছু নেতার কিছু বিতর্কিত মন্তব্যের নিয়ে তথাগত রায়ের মতামত জানতে চাওয়া হয়৷ তথাগতবাবু কারও নাম না করেই এর উত্তরে বলেছেন, তিনি মনে করেন কিছু বিতর্কিত বক্তব্য “দলের ক্ষেত্রে ভালো করার থেকে ক্ষতিই করেছে বেশি”। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কখনই উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির মতো ‘গৌ হামারি মাতা হ্যায়’ বা ‘গরু আমাদের মা’, এইসব কথা দলের ক্ষতি করছে৷ ‘গরুর দুধের মধ্যেই সোনা আছে’ বা গরুর প্রস্রাব পানে কোভিড -১৯ রোগকে আটকানো যায় এইসব কথা মানুষের মন পেতে বঙ্গ বিজেপিকে মোটেই সাহায্য করবে না৷ এ সব বলে যুক্তিবাদী বাঙালির মন কখনও পাবে না বিজেপি।”


তথাগত রায়ের এইসব মন্তব্য যে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে লক্ষ্য করেই, দলীয় নেতৃত্বের একাংশ এমনটা মনে করলেও দিলীপ ঘোষ তথাগত রায়ের এই বক্তব্যের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ বলেন, “আমি তথাগত রায়ের এই কথাগুলো নিজের কানে শুনিনি তাই এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”

তবে তথাগত রায়ের এই মন্তব্য বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে কার্যত আলোড়ন তুলেছে৷ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে তথাগত রায়ের এমন সিদ্ধান্ত বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
