Thursday, August 28, 2025

টিউশন থেকে রোজগারের সবটাই দুঃস্থদের সেবায়! ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নগরউখড়ার তরুণের…

Date:

টিউশন পড়িয়ে রোজগার। তার প্রায় পুরোটাই খরচ করেন এলাকার দুঃস্থদের জন্য । লকডাউনে এলাকার দুঃস্থদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। শিশুদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়েছেন। আবার পথ কুকুদের খেতে দিয়েছেন । শুধু তাই নয়, কারও প্রয়োজনে ছুটে গিয়েছেন হাসপাতালে, রক্ত দিতে। এই কাজে এগিয়ে ছিলেন একাই। নদীয়ার নগরউখড়ার বাসিন্দা বিমল দাস। বছর ২৩-এর এই তরুণ সমাজের উদাহরণ।

বাবার ব্যবসা রয়েছে। চার ভাই-বোন, বাবা, মা স্বচ্ছল পরিবার। চাইলেই পারতেন একটু বিলাসিতার জীবন-যাপন করতে। কিন্তু এডুকেশন নিয়ে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে শুরু করেন টিউশন। এরই মাঝে বিএড করেন। টিউশন করে যা আয় করেন তার সমস্তটাই সমাজ সেবার কাজে লাগান তিনি।

মহামারির পরিস্থিতি । তখন লকডাউন চলছে। প্রথমেই বিমল দুবেলা খাবার তৈরি করে নিয়ে যেতেন পথ কুকুরদের জন্য। এলাকার সমস্ত সারমেয়দের খাওয়াতেন । ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন তাঁর সেবামূলক কাজের পরিসর। এলাকার দুঃস্থ মানুষদের জন্য বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। প্রায় ৫০ দিন ধরে প্রতিদিন এলাকার ৩০-৪০ জন দুঃস্থ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন । টিউশন পড়িয়ে সামান্য রোজগারে কী ভাবে সম্ভব হল এই কাজ? বিমল বলেন, “প্রথমে আমি একাই সমস্ত কিছু করি। একটু সাহায্যের প্রয়োজন ছিল তখন আমার কাজ সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি। অনেকেই সাহায্য করেন। কিছু অনুদান আসে। এভাবেই কাজ চলতে থাকে।” এরপর তাঁর কাজ দেখে এগিয়ে আসেন এলাকার কিছু মানুষ । বিমল বলেন, “আমার পাশে এগিয়ে আসেন এলাকার মিঠুন পোদ্দার । দাদা ভীষণ সাহায্য করেন, আমার সঙ্গে তিনিও এলাকায় ঘুরে ঘুরে কাজ করছেন।”

এখানেই থেমে থাকেননি বিমল। মহামারি পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব মানুষের পাশে থাকার সংকল্প নিয়েছেন এই তরুণ। দিন কয়েক আগেই তাই হাসপাতালে রক্তের সংকট তাঁকে ভাবায়। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ফোন নম্বর দিয়ে পোস্ট করেন রক্তের প্রয়োজন হলে যেন তাঁকে জানানো হয়। ইতিমধ্যেই ১০জন মুমূর্ষ রোগীর রক্তের ব্যবস্থা করেন তিনি।

বর্তমানে দুঃস্থ শিশুদের জন্য কাজ করছেন বিমল। বহু পথ শিশুর হাতে তুলে দিয়েছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বই-খাতা, খাবার। আগামী ১৫ অগাস্ট এলাকার দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। এদিন প্রায় ৭০ শিশুর হাতে তুলে দেবেন বই,খাতা, পেন্সিল । শিশুদের খাওয়ানো হবে ওদের পছন্দের ফ্রাইড রাইস, আলুর দম। বিমলের এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন এলাকার বাসিন্দা শিক্ষিকা হেমা পাল। বিমল বলেন, “হেমা দি আমার কাজে ভীষণ উৎসাহ দেন । মিঠুন দা , হেমা দিকে দেখে এখন এলাকার অনেকেই এগিয়ে এসেছেন আমার পাশে। কনা দাস, শংকরী দাস, রাজা দেবনাথ, দীপক ঘোষ এনারা যতটা সম্ভব অনুদান দিয়ে সাহায্য করছেন।”

আগামী দিনে কী পরিকল্পনা? বি-এড করেছেন শিক্ষক হতে চান নিশ্চয়ই ? একটু থেমে স্বল্পভাষী বিমল বলেন,” হ্যাঁ সেতো চেষ্টা করব ।কিন্তু আমার মূল লক্ষ্য মানুষের পাশে থাকা। দুঃস্থ শিশুদের জন্য আরও অনেক কাজ করতে চাই। আর আমার মত তরুণদের বলতে চাই তোমরা এগিয়ে এসো। এখন সময় এসেছে একসঙ্গে সমাজের জন্য কিছু করার।”

Related articles

আমাকে স্টেনগান-পাইপগান নিয়ে তাড়া করেছিল: গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতা শোনালেন তৃণমূল সভানেত্রী

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবস। আর বৃহস্পতিবার সেই সমাবেশে বক্তব্য রাখতে উঠে স্মৃতি মেদুর তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো...

এখনও চুপ মোদি! শুল্ক লাগুর পরেও ভারত নিয়ে কুকথা ট্রাম্পের পারিষদদের

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময়ে বারবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ তিনি থামিয়েছিলেন। তখন চুপ করেছিলেন...

উৎসবের মরশুমে সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রুখতে কড়া নির্দেশ 

আলো ঝলমলে প্যান্ডেল, রোশনাই, ভিড়—শহর যখন মেতে ওঠে উৎসবের আবহে, ঠিক তখনই অন্য প্রান্তে দেখা যায় উদ্বেগের ছবি।...

সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে আশা আলো, ফিফার পর এএফসির চিঠি ফেডারেশনকে

বৃহস্পতিবার ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের সব নজর ছিল সুপ্রিম কোর্টের দিকে। ভারতীয় ফুটবল নিয়ে যে অচলাবস্তা চলছে তার জল গড়িয়েছে...
Exit mobile version