সকালটা গোপন করে কেন সন্ধ্যায় নাটুকে ট্যুইট করলেন রাজ্যপাল?

সকালের ঘটনা বেমালুম ধামাচাপা দিয়ে সন্ধ্যায় নাটুকে ট্যুইট করে নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। সরকারকে আক্রমণ করাটা তাঁর এমনই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে স্বাধীনতা জয়ন্তীর দিনেও তা থেকে বিরত থাকার লোভ সামলাতে পারলেন না, সৌজন্যের ধারপাশ দিয়ে গেলেন না।

১৫ অগাস্টের সকালে বারাকপুরে গান্ধী ঘাটে গিয়ে প্রশাসনকে এক হাত নিয়েছিলেন। বলেছিলেন আপনারা রাজনীতি করবেন না। রাজভবনে সন্ধ্যার চা-চক্রে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় তাঁর ফাঁকা চেয়ার দেখিয়ে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে না এসে আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করলেন! অথচ বিকেলে আসতে পারবেন না জেনেই মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত প্রোটোকল ভেঙে রাজ্যপালের কাছে চলে গিয়েছিলেন সকালেই। দীর্ঘ ৩০ মিনিট তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে চা চক্রে গল্পও করেন। অথচ সন্ধ্যা হতেই ধনকড়ের ট্যুইটে বক্রোক্তি। এই ঘটনার পর বিদগ্ধজনেরা বলছেন, আসলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সারাদিনে একটি অন্তত ট্যুইট না করলে রাজ্যপালের রাতের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

শনিবার সকালে রেড রোডের অনুষ্ঠান থেকে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ কমিশনার, পুলিশের ডিজি, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবকে নিয়ে রাজভবনে যান। ১১.২০ থেকে ১১.৫০ পর্যন্ত রাজ্যপালের সঙ্গে গল্প করে মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে এসে জানান, নিখাদ গল্প হয়েছে। বিকেলে আসতে পারব না বলেই এখন এলাম। যেখানে স্কুলে পরীক্ষা হচ্ছে না, বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি অতিথি থাকছেন না, খেলা হচ্ছে বিনা দর্শকে, সেখানে রাজভবনে ৩৫ জন অতিথি, প্রায় ৩৫ জন মিডিয়ার প্রতিনিধি এবং রাজভবনের কর্মী নিয়ে প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি রাজ্যপালের চা-চক্রে রইলেন। রাজভবনে রাজ্যের এক নম্বর নাগরিক মানুষের কাছে কোন উদাহরণ তৈরি করছেন, বলছেন অনুষ্ঠানে থাকা অতিথিরাই! অথচ কোভিড পরিস্থিতিতে রাজভবনেরই তো পথ দেখানোর কথা! অনুষ্ঠানের পরেই ধনকড়ের চিমটি কাটা ট্যুইট… স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী না আসায় অন্য অনেকের মতো আমিও স্তম্ভিত। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাতেই এই অনুষ্ঠান ছিল। আমি বাক্যহারা।

একটি ট্যুইটেই ক্ষান্ত হননি ধনকড়। পরের ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য রাখা ফাঁকা চেয়ারের ছবি দিয়ে তিনি লিখছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ফাঁকা চেয়ার গোটা অনুষ্ঠানে একটা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যে পরিস্থিতি বাংলার ঐতিহ্যমণ্ডিত সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না। এই অনুপস্থিতির কোনও যুক্তি থাকতে পারে না।

এবং কী আশ্চর্য, মুখ্যমন্ত্রী যে বিকেলে আসতে পারবেন না এবং সেই কারণেই সকালে ঘুরে গিয়েছেন, সে কথা কিন্তু একবারও বললেন না। এরপর যদি বিরোধীরা রাজ্যপালকে ‘বিজেপির লোক’ বলে অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলেন, তাহলে কী কিছু বলার থাকবে? এক বিজেপি ঘনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী বলছেন, এই রাজভবনে এক সময় গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর মতো বিদ্বজ্জন ছিলেন, ভাবতেই অস্বস্তি হচ্ছে!

Previous articleরাজ্যে কত বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে? তথ্য দিয়ে সোজা বাংলায় জানালেন ডেরেক ও’ব্রায়েন
Next articleএবার করোনা আক্রান্ত সিপিএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়, ভর্তি হাসপাতালে