প্রধানমন্ত্রীর বাবার সেই ‘বিখ্যাত’ চায়ের দোকানের কোনও তথ্যই নেই পশ্চিম রেলের কাছে

না, গুজরাতের বডনগর স্টেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাবার সেই ‘বিখ্যাত’ চায়ের দোকানের খোঁজই পেল না পশ্চিম রেল৷

অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজেই গত বেশ কয়েক বছর ধরে এই চায়ের দোকানের কথা বলে এসেছেন৷ বলেছেন, তিনি না’কি ছোটবেলায় আমেদাবাদ ডিভিশনের বডনগর স্টেশনের বাইরে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করতেন৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বার বার তাঁর মুখে এই চায়ের দোকানের কথা উঠে এসেছে৷ মানুষজন শুনেছেন ওই চায়ের দোকানে ছোটবেলায় তাঁর কাজ করার অভিজ্ঞতার কথা।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বাবার ওই বহুচর্চিত চায়ের দোকান সংক্রান্ত কোনও তথ্যই নেই পশ্চিম রেলের কাছে। আর তথ্য না থাকার কারনে হরিয়ানার এক আইনজীবী তথা সমাজকর্মী পবন পারেখের RTI আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিল সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশন।

গুজরাতের বডনগর স্টেশনের বাইরে প্রধানমন্ত্রীর বাবা দামোদরদাস মোদির চায়ের দোকান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়ে ২০১৮ সালে পশ্চিম রেলের সেন্ট্রাল পাবলিক ইনফরমেশন অফিসারের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন হরিয়ানার আইনজীবী পবন পারেখ। তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ঠিক কোন সালে প্রধানমন্ত্রীর বাবা’র ওই চায়ের দোকানের লাইসেন্স মঞ্জুর হয়েছিলো৷ একইসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন ওই চায়ের দোকানের নামে ইস্যু করা লাইসেন্সের কোনও নথি পাওয়া যাবে কিনা৷

এই আবেদন হাতে পেয়েও
পশ্চিম রেল প্রায় ২ বছর নিরুত্তর থাকে৷ টানা দু’বছর অপেক্ষা করেও কোনও জবাব না আসায় পবন পারেখ সরাসরি সেন্ট্রাল ইনফরমেশন কমিশনে এই একই বিষয়ে আবেদন করেন৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও তারও কোনও জবাব না পাননি৷

এরপর দ্বিতীয় বার একই আবেদন করেন পবন পারেখ৷ এ বার আবেদনকারীকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, অনেক দিন আগের ঘটনা এটা। আমেদাবাদ ডিভিশনের কাছে এই সংক্রান্ত কোনও রেকর্ড নেই। ওদিকে, এ বছরের ১৭ জুনের আগে পবন পারেখের কোনও আবেদন তাঁর হাতে আসেনি জানিয়ে তাঁর দ্বিতীয় অ্যাপিলটি সরাসরি খারিজ করে দেন ইনফরমেশন কমিশনার অমিতা পাণ্ডবে। এই সংক্রান্ত কোনও রেকর্ড তাঁদের কাছে নেই জানিয়ে ইনফরমেশন কমিশনকে একটি হলফনামাও জমা করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

শৈশবে বাবার চায়ের দোকানে কাজ করার সঙ্গেই বডনগর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এবং ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করতেন বলেও দেশজুড়ে প্রচার হয়৷

এই তথ্য কতখানি সঠিক, তা জানতে এর আগে ২০১৫ সালে RTI আইনে একটি আবেদন জমা করেছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী তেহসিন পুনাওয়ালা। স্টেশন চত্বর ও ট্রেনে চা বিক্রির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হয়েছিল কি না, সেই সংক্রান্ত তথ্যও জানতে চান তিনি। কিন্তু ওই সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই বলে তখনও তেহসিন পুনাওয়ালাকে জানিয়ে দিয়েছিলো রেল কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন উঠেছে, লোকমুখে প্রচারিত বডনগর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে এবং ট্রেনে ট্রেনে প্রধানমন্ত্রীর চা বিক্রির কাহিনী নেহাতই গল্প ? না’কি বিনা লাইসেন্সেই প্রধানমন্ত্রীর বাবার চায়ের দোকানটি ছিলো বলেই, আজ কোন তথ্যই মিলছে না বা দেওয়া হচ্ছে না৷

এদিকে জানা গিয়েছে, এবারই যে প্রথম ওই আইনজীবী পবন পারেখকে খালি হাতে ফিরতে হলো এমন নয়৷
২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রত্যেক ভারতীয়ের অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ জমা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। এই বিষয়টি নিয়ে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দফতর বা PMO- তে তথ্য জানার আইনেই আবেদন জানিয়েছিলেন এই পবন পারেখ। সেই সময়ও তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়।

এরপর ২০১৭ সালে সোহরাবউদ্দিন এনকাউন্টার মামলায় অমিত শাহের অব্যাহতি পাওয়া নিয়েও আবেদন করেছিলেন পারেখ, সেখানেও খারিজ হয়েছিলো তাঁর আবেদন৷

Previous articleআকাশগঙ্গায় অতিবেগুনি রশ্মির খোঁজ ভারতীয় স্যাটেলাইটের
Next articleBig Breaking: জয়েন্ট, নিট স্থগিতের দাবিতে মোদিকে ফের চিঠি মমতার