Monday, November 3, 2025

Breaking : প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়

Date:

Share post:

জন্ম – ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৫

মৃত্যু – ৩১ আগস্ট, ২০২০

 

প্রয়াত হলেন প্রকৃত অর্থেই ‘ভারতরত্ন’ প্রণব মুখোপাধ্যায় ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৮৪ বছর৷

দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতালে অত্যাধুনিক চিকিৎসার মধ্যে থাকলেও শেষরক্ষা হয়নি৷ সোমবার, ৩১ অগাস্ট বিকেল ৫টে নাগাদ সেনা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রয়াত হয়েছেন৷ প্রণববাবুর মহাপ্রয়াণের সংবাদে দেশজুড়ে শোকের আবহসৃষ্টি হয়েছে৷ বীরভূমের মিরাটিতে প্রণববাবুর পৈতৃকবাড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় বিষাদের ছবি৷ দেশের প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সর্বস্তরের মানুষ৷

গত ১০ আগস্ট রবিবার রাতে বাড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন প্রণববাবু। মাথা না-ফাটলেও বেশ চোট লাগে। কিছু স্নায়ুঘটিত সমস্যাও দেখা দেয়। হাসপাতালে ভর্তি করার পরে সিটি স্ক্যান‌ করে দেখা যায়, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। অস্ত্রোপচার করা ছাড়া উপায় নেই৷ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট সেনা হাসপাতালে৷ সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছে, যে ব্লাড ক্লট-কে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে ‘সাবডিউরাল হেমাটোমা’। ডাক্তাররা তখনই আর ঝুঁকি না-নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে প্রণববাবুর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হয়। সেই রিপোর্ট পজিটিভ আসে৷ অস্ত্রোপচারের পরেও তাঁর শারীরিক অবস্থা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সঙ্কটজনকই ছিলো৷ ভেন্টিলেশনে ছিলেন। শেষ কয়েকদিন ছিলেন গভীর কোমায়। আজ সোমবার তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হয়। শেষরক্ষা আর করা যায়নি।

২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ নিয়ম করে সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে মর্ণিং-ওয়াক করতেন। মন্ত্রী থাকার সময়ও স্বাস্থ্য সচেতন প্রণববাবুর এই অভ্যাস ছিলো৷ খুব দ্রুত হাঁটতেন। প্রণববাবু একবারই পশ্চিমবঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন৷ এই ঘটনা ছাড়া শরীর খারাপের কারণে তাঁকে কাজ বন্ধ করে বসে থাকতে হয়েছে, এ রকম নজির ছিলো না। প্রণববাবু যতদিন মন্ত্রী ছিলেন, ততদিন অমানুষিক পরিশ্রম করতেন৷ তাঁকে বলা হত জাতীয় রাজনীতির চাণক্য। কতগুলো যে মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান ছিলেন একসময় তা গুনেও বলা যেত না৷ সংসদ শেষ হলে সোজা চলে যেতেন মন্ত্রকে। সেখান থেকে তালকাটোরা রোডের বাড়ি। সেখানেও ফাইল দেখতেন। তারই ফাঁকে লোকের সঙ্গে, কংগ্রেস বা অন্য দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতেন৷ কংগ্রেসের ঝামেলাও তাঁকেই সামলাতে হত। যে রাজ্যেই কংগ্রেস বিপাকে পড়ত, সেখানে প্রণববাবুকেই হাল ধরতে বলতেন সোনিয়া গান্ধী। সরকারের সঙ্কটে তো প্রণববাবু ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কখনই ছিলোনা৷ গভীর রাতে শুয়ে পড়েও ঠিক সকালে উঠে পড়তেন। তারপর শুরু হয়ে যেত কাজ।

এটাই ছিলো তাঁর রুটিন৷ সাধারণ শরীর খারাপেও
কাবু হয়ে পড়তেন না৷
রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও ব্যস্ততার রুটিন ছিলো একই৷ প্রণববাবু পড়তে ও লিখতে ভালোবাসতেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি ছিল অসাধারণ৷ তিরিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনা অক্লেশে দিতে পারতেন একটুও না থেমে৷ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে তাঁর পড়া ও লেখার কাজটা অনেকটা বেড়ে যায়৷ লাইব্রেরিতে পড়াশুনো করতেন। অসুস্থতা তাঁকে কাজ থেকে কখনই থামাতে পারেনি।

ফলে সবার ধারনা হয়েছিলো, এই মানুষটি সেনা হাসপাতালের ভেন্টিলেটার থেকেও সুস্থ হয়ে বেরিয়ে আসবেন, বাড়ি ফিরবেন৷ কারন, এ ভাবে হাসপাতালে শুয়ে থাকা তাঁর পক্ষে বেমানান। সবার প্রার্থনা ছিলো, খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার তাঁর নিজের জগতে ফিরে আসবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমনটি আর হলো না৷

আরও পড়ুন : অত্যন্ত সঙ্কটজনক প্রণব মুখোপাধ্যায়

spot_img

Related articles

ঝুলনকে নিয়েই সাফল্যের উদযাপন স্মৃতিদের, বাঙালির গর্ব বিশ্বকাপজয়ী রিচা

পঙ্কজ রায় থেকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা ঝুলন গোস্বামী, ক্রিকেট বিশ্বের দরবারে বাংলার মুখ অনেকেই। কিন্তু সৌরভ-ঝুলনদের পাশে ছিল...

মায়ানগরীতেই স্বপ্নপূরণ, এক নজরে ব্যাটে বলে ধামাকাদার ম্যাচের স্কোর বোর্ড

মুম্বইকে বলা হয় মায়ানগরী। কত স্বপ্ন এখানে সফল হয়। এই মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০১১ সালে ২ এপ্রিল ওয়ানডে...

ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মেয়েরা: শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ও ক্রীড়ামন্ত্রীর

রবিবারের মধ্যরাতে রচিত হল নতুন ইতিহাস। প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতের মহিলা ক্রিকেট ব্রিগেড। ইতিহাস রচনা হওয়ার রাতে ভারতীয়...

দীপ্তি-শেফালিদের হাত ধরেই বিশ্ব জয়ের তৃপ্তি, ইতিহাস সৃষ্টি হরমনপ্রীতদের

বিশ্বসেরা ভারত(India)। মহিলাদের একদিনের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন টিম ইন্ডিয়া। মুম্বই ইতিহাস সৃষ্টি ভারতীয় মহিলা দলের। প্রোটিয়াদের ...