নারায়নগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে মৃত্যু বেড়ে ২৬

খায়রুল আলম (ঢাকা) : রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লায় মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে২৬ জন।

ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যে ১১ জন ভর্তি রয়েছেন, তাদের অবস্থাও সঙ্কটাপন্ন বলে ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদ থেকে দগ্ধ অবস্থায় যে ৩৭ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছিল। শনিবার রাত পর্যন্ত তাদের মধ্যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।”

এরপর রবিবার সন্ধে পর্যন্ত মারা যান জুলহাস উদ্দিন (৩০), শামীম হাসান (৪৫) ও মোহাম্মদ আলী মাস্টার (৫৫) ও আবুল বাশার মোল্লা (৫১)। তাদের নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জন হয়। রবিবার রাতে মারা যান বরিশালের বাকেরগঞ্জের বারঘড়িয়া গ্রামের সোবাহান ফরাজীর ছেলে মনির ফরাজী (৩০)। এর ফলে মৃতের সংখ্যা ২৬ এ দাঁড়ায় বলে ডা. পার্থ শংকর পাল জানান।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, শামীম হোসেন ছিলেন ওই মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ। বাইতুস সালাত জামে মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনও এর আগে মারা গেছেন।

নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে শুক্রবার এশার নামাজের সময় বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। মসজিদের নীচের তলার ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয় এবং আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে ত্রিশ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

সে সময় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, “যারা ভর্তি রয়েছেন, তারা কেউ শঙ্কামুক্ত নন। তাদের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বলা যায়।”

নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন শনিবার সকালে বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। তিনি মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার এবং আহতদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান , ওই মসজিদের নীচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গিয়েছে, সেখানে লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে এমনটাই ধারণা তাদের।

এরপরেও ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দমকলের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “তারা পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। গ্যাস যে ফ্লোর থেকে লিক হচ্ছে তার বড় প্রমাণ আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের দেওয়া জলের মধ্যে ফ্লোরে গ্যাস বুদবুদ করছে।”
তার সঙ্গে একমত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, “ফায়ার ব্রিগেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং ঘটনাস্থল দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গ্যাসের কারণেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ফায়ার ব্রিগেডের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “এসিতে ব্যবহৃত ফ্রেয়ন গ্যাসের অস্তিত্ব আমরা মসজিদের ভেতরে বায়ুতে পেয়েছি। এর পিছনে অন্য কোনো ঘটনা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এ ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি কর্পোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের স্কুলে প্রাথমিকে ‘অটো’ পাশ !

Previous articleকোম্পানিতে নামই নেই ইস্টবেঙ্গলের! জরুরি বৈঠক ডাকলেন ক্রীড়ামন্ত্রী
Next articleজাল প্রেসক্রিপশনে ভুল ওষুধ দিয়েছে সুশান্তের দিদি প্রিয়াঙ্কা! বিস্ফোরক অভিযোগ দায়ের রিয়ার