ভারতীয় সেনা যেকোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি, সাংসদদের জানালেন রাওয়াত

ভারতের সশস্ত্র বাহিনী যেকোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি আছে। শত্রুপক্ষের আক্রমণ রুখে দিতে তারা সক্ষম। সীমান্তের চলতি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় প্রতিরক্ষা কমিটির সামনে এই মন্তব্য করলেন দেশের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সামনে লাদাখ সীমান্ত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন রাওয়াত। উপস্থিত সাংসদদের কাছে চিনের লাগাতার উস্কানিমূলক আচরণ ও কথার খেলাপ করার রেকর্ড তুলে ধরেন সিডিএস রাওয়াত। সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বৈঠকের পাশাপাশি লাল ফৌজের মোকাবিলায় ভারতীয় সেনা কীভাবে নিরন্তর সতর্ক থেকে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, সে সম্পর্কে সাংসদদের অবহিত করেন তিনি। রাওয়াত বলেন, সীমান্তের স্থিতাবস্থা নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে চিন। চুক্তির নিয়ম লঙ্ঘন করে ওদেশের সেনা এলএসির স্থিতাবস্থা নষ্ট করতে পরিকল্পিত প্ররোচনা ছড়াচ্ছে। চিনের আগ্রাসী আচরণের জন্যই সংঘর্ষের পরিস্থিতি জারি রয়েছে। ভবিষ্যতে এই অবস্থা যদি আরও খারাপ হয় তাহলে ভারতের সশস্ত্র বাহিনী যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তৈরি। ঘটনাচক্রে, শুক্রবার সংসদীয় কমিটির এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ও সাংসদ রাহুল গান্ধী। চিন ও সীমান্ত ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হলেও এই বিষয়ে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাহুলের হাজির হওয়া এই প্রথম।

এদিকে, লাদাখের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও সীমান্তে সেনা মোতায়েন নিয়ে শুক্রবার দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থলসেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার তিন প্রধান, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। মস্কোয় ভারত- চিন বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর সীমান্তের রণকৌশল ঠিক করতেই এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রসঙ্গত, মস্কোয় চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই- র সঙ্গে বৈঠকে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, আন্তর্জাতিক প্রথা ও নিয়ম অগ্রাহ্য করে চিনের লাল ফৌজ অস্ত্রসজ্জিত হয়ে ব্যাপক সংখ্যায় জমায়েত হচ্ছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা এলএসিতে। যা ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালের চুক্তির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এই ঘটনা প্ররোচনার সামিল। চিনা সেনাদের এই আচরণে রাশ টানুক বেজিং। সীমান্তে এভাবে প্ররোচনা ছড়ানোর চেষ্টা মানা হবে না। বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতীয় সেনা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও প্রটোকল যথাযথভাবে মেনে চলছে।

লাদাখ সীমান্তে চলতি উত্তেজনা আর বাড়তে না দেওয়ার পক্ষেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সওয়াল করেছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর। বুঝিয়ে দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অগ্রাহ্য করে চিনা সেনাদের আগ্রাসী ও মরিয়া আচরণ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জটিল করছে। সীমান্তে শান্তি ও স্থিতাবস্থা চাইলে চিনা সেনাদের সংযত করুক বেজিং। মস্কোয় সাংহাই কোঅপারেশন সামিটের মধ্যে ভারত- চিন দ্বিপাক্ষিক স্তরের পার্শ্ব বৈঠকটি চলে প্রায় দু’ ঘণ্টা। সেখানে চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইকে স্পষ্টভাবে ভারতের এই মনোভাব বুঝিয়ে দিয়েছেন জয়শঙ্কর। বলেছেন, ভারত সর্বতোভাবে শান্তি ও স্থিতাবস্থা মেনে চলার পক্ষে। কিন্তু প্ররোচনা তৈরির চেষ্টা হলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবেই। দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সংঘর্ষের এলাকাগুলি থেকে সেনা সরানো ও সেনা সংখ্যা কমানো হোক। দুই বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি ফেরানোর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সহমত হয়েছেন চিনা বিদেশমন্ত্রীও। এই বৈঠকে দুই দেশ সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে একটি ফাইভ পয়েন্ট প্ল্যান নিয়েছে। যেখানে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা জারি রাখা এবং এলএসিতে সেনা সংখ্যা কমানো, সেনাদের নির্দিষ্ট দূরত্বে পিছিয়ে আসা ও আনুষঙ্গিক অস্ত্রসজ্জা কমানোর কথা বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন : এলএসিতে অস্ত্র নিয়ে চিনা সেনার জমায়েত প্ররোচনার সামিল: চিনের বিদেশমন্ত্রীকে জয়শঙ্কর

Previous articleদলে গুরুত্ব বাড়লো অধীর চৌধুরির
Next articleNCB জানতো না মাদক-কাণ্ডে বলিউডি যোগ ! প্রথম সারির ২৫ জনকে সমন পাঠাবে