সমুদ্র ফুঁড়ে উঠে আসেন ‘নিষ্কলঙ্ক মহাদেব’ ! কোথায় জানেন?

সমুদ্র যখন জোয়ারে ফুলে-ফেঁপে ওঠে তখন দূর থেকে দেখা যায় শুধু একা পতাকা। সমুদ্রের হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে। দিনের বিশেষ বিশেষ সময়ে ওই পতাকার নীচ থেকেই বেরিয়ে আসে আসে মন্দির। প্রকটিত হন মহাদেব।
গুজরাতের ভাবনগরে আরব সাগরের বুকে শিবের মন্দির ‘নিষ্কলঙ্ক মহাদেব’ মন্দির নামে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মন্দির দেখা যায়। কখনও জঙ্গল, কথনও পাহাড়ের মাথায়। কিন্তু সমুদ্র থেক জেগে ওঠা শিবলিঙ্গ দর্শন করতে গেলে আপনাকে যেতে হবে গুজরাতের ভাবনগরে।

আরব সাগরের তীরে কোলিয়াক গ্রাম। সেখান থেকে আড়াই কিলোমিটার ভিতরে যেতে হবে নিষ্কলঙ্ক মহাদেব দর্শনে। যখন জোয়ার আসে মহাদেব চলে যান সমুদ্রের নীচে। ভাটার সময় পথ বের হয়। সেই পথেই লোকে যান মহাদেবের পুজো দিতে। দুধ, দই, বেলপাতায় জাগ্রত মহাদেবের পুজো হয়।

আরও পড়ুন : এবারের তর্পণ সামাজিক দূরত্ব মেনেই, গণ্ডি থাকছে ঘাটে, পড়তে হবে মাস্ক

এই মন্দির ও সয়ম্ভূ শিবলিঙ্গের পিছনে রয়েছে পৌরাণিক গল্প। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শেষে প্রিয়জনদের হত্যার পাপ লাগে পাণ্ডবদের ওপর। পাপস্খলনের জন্য পাণ্ডবদের একটি কালো পতাকা ও একটি কালো গরু দিয়ে বলা হয়, এদের রং বদলে সাদা হলে বুঝতে হবে পাঁচ ভাই পাপমুক্ত হয়েছেন। বলা হয় সেই গরুটিকে অনুসরণ করতে। শ্রীকৃষ্ণ পঞ্চপাণ্ডবকে বলেন, যেখানে গরু ও কালো পতাকা সাদা হবে সেখানে যেন পাঁচ ভাই মহাদেবের জন্য তপস্যা করেন। ছেড়ে দেওয়া হয় কালো গরু।

কথিত আছে, গরুটিকে অনুসরণ করে পাণ্ডবরা এখানে ওখানে ঘুরতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই কালো গরু আর সাদা হয় না। বদল হয় না কালো পতাকার রং। এভাবে এদিক-ওদিক খোঁজ করতে করতে একদিন পাণ্ডবরা আসেন গুজরাতের সমুদ্র উপকূলবর্তী বর্তমান কোলিয়াক গ্রামের কাছে। আশ্চর্যজনকভাবে বদলে যায় কালো পতাকা ও গরুর রং। তারা হয়ে যায় সাদা।

এখানে মহাদেবের জন্য তপস্যা শুরু করেন পঞ্চপাণ্ডব। আরাধনায় তুষ্ট হন শিব। প্রকটিত হন শিবলিঙ্গ হিসেবে। পাঁচ ভাইকে আলাদা আলাদাভাবে শিব দর্শন দিয়েছিলেন লিঙ্গ স্বরূপ। এখানে রয়েছে শিবের স্বয়ম্ভু লিঙ্গ। অর্থাত্ মহাদের এখানে লিঙ্গ হিসেবে প্রকটিত হয়েছিলেন।

যেহেতু এই স্থানে পঞ্চপাণ্ডব প্রিয়জনদের হত্যার পাপ থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, সেহেতু এই মন্দির পরিচিত হয় ‘নিষ্কলঙ্ক মহাদেব’ মন্দির হিসাবে।এখানে পুজো দিলে লোকে পাপমুক্ত হন বলে বিশ্বাস। ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিতে এখানে বড় করে মেলা বসে। ভাদ্র মেলা বলে একে। পূর্ণিমা ও অমাবস্যা তিথি নিষ্কলঙ্ক শিবের বিশেষ পুজো হয়। লোকের সারাদিন অপেক্ষা করে থাকেন কখন ভাটা আসবে, জল সরে যাবে। তারপর গিয়ে তাঁরা শিবের পুজো দেন। লোকের বিশ্বাস, প্রিয়জনদের অস্থি এখানে বিসর্জন দিলে তাঁরা পাপমুক্ত হন।

Previous articleএবার আকাশবাণীতে উত্তমকুমারের মহালয়ার অনুষ্ঠান!
Next articleদেখা নেই পদ্মার রুপোলি শস্যের, রান্নাপুজোর আগে বাজারে ইলিশের হাহাকার!