রাজ আর শুভশ্রীর ছেলেকে নিয়ে চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি হচ্ছে

অপরাজিতা সেন

রাজ চক্রবর্তী ও শুভশ্রীর ছেলে হয়েছে। সুসংবাদ। নবজাতক সুস্থ থাকুক। শুভেচ্ছা রইল।

কিন্তু এই নবজাতককে নিয়ে চূড়ান্ত বাড়াবাড়ি চলছে।
1) মিডিয়ার একাংশ এনিয়ে যতরকম খবর আর ছবি করছে, তা এককথায় অসহ্য। শুভশ্রীর বেবি বাম্প, শুভশ্রী মা হলেন, বিকেলেই বাচ্চার নাম রাখা হল ইত্যাদি।

2) রাজ ও শুভশ্রীও খানিকটা দৃষ্টিকটূভাবে বাচ্চাটিকে ভাঙিয়ে যেন প্রচার নিচ্ছেন। কয়েকদিনের শিশু, তার সঙ্গে ছবি, কী যেন বোঝাচ্ছেন শিশুকে, শিশু আর তার মাকে আদর!! আর কী রইল!!

এতটা বাড়াবাড়ি কি দরকার আছে?
দর্শকের মধ্যে ভেসে থাকতে এই অতি সাধারণ বিষয়গুলিও এইভাবে মার্কেটিং?
তাঁদের বাল্যপ্রেমও নয়। সম্পর্কের নানা ঘটনাক্রম সকলেই জানেন। কার সঙ্গে কে কোথায় জন্মদিন কাটিয়েছেন গোপন নয়। কার বিয়েতে কে ভেঙে পড়েছিলেন, তাও জানা।

এখন এতটা আদিখ্যেতার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে হজম হয়?
নিশ্চয়ই দম্পতি সুখে থাকুন।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়াকে এই জঘন্যভাবে ব্যবহার?

অবশ্য দোষ কী!

মানুষ যদি করোনাকালের লকডাউনে পরিযায়ী শ্রমিক সেই স্টেশনে পড়ে থাকা মায়ের মৃতদেহের পাশে অবোধ শিশুর খেলা করার মর্মান্তিক দৃশ্য ভুলে রাজ চক্রবর্তীর সাত দিনের সন্তানের ফটোফিচার দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠে, তাহলে বাজারে সেটাই চলবে।

রাজ আর শুভশ্রী রোজ পোস্ট করে যাবেন।
লাইক দৌড়বে।
মিডিয়া ছাপবে, দেখাবে।

না হলে প্রথম সারির চ্যানেলগুলিতে ফুল স্ক্রিন ব্রেকিং নিউজ হতে পারে শুভশ্রী মা হলেন?????

মানুষ এই রুচি আর অগ্রাধিকার দেখাবেন।
আবার রাষ্ট্র বা সমাজের কাছ থেকে নীতি অনুযায়ী কাজ চাইবেন, এটা দ্বিচারিতা।

দর্শক যা নিয়ে মাতামাতি করবেন; বাস্তবে তাঁকেও সেইসব অন্তঃসারশূন্য বিষয় নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

রাজ সফল পরিচালক, অবশ্যই।
শুভশ্রী সফল নায়িকা, ঠিক।
কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁদের নবজাতকটিকে ঘিরে আদিখ্যেতাময় মার্কেটিংকে সমর্থন করতে হবে।

এই প্রতিকূল অবস্থায় বহু গরীব পরিবার বিপন্ন। শিশুদের নিয়ে অসহায় বাবা মা। দেশে অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যু চলছে। কাজ ঘারিয়ে, ঘর হারিয়ে কোটি কোটি পরিযায়ী শ্রমিক বিপর্যস্ত। তাদের ঘরের শিশুরা অনাহারে। অনেকের পড়াশোনা আটকে যাচ্ছে।

রাজ তো সংবেদনশীল।
এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত আনন্দের প্রকাশ সীমা অতিক্রম করে দৃষ্টিকটূ প্রচারাভিযানের পর্যায়ে নামিয়ে আনছেন কেন?

নিশ্চয় নবজাতকের ছবি আসবে।
নিশ্চয় তারকা বাবা মায়ের ছবি আসবে।
কিন্তু এই সংস্কৃতিটা যেভাবে পেজ 3 ঘরানার ইতিবাচক দিককেও সরিয়ে ফেলছে; ইন্ডাস্ট্রির মূল কাজ বা সমস্যা থেকে মুখ ঘুরিয়ে অযৌক্তিক হুজুগকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে, সেটা বরং থামুক।
করিনার তৈমুরকাহিনি যেমন সব সীমা ছাড়িয়ে বিরক্তিকর পর্যায়ে গিয়েছে, আশা করি সেই পথে হাঁটবেন না রাজ শুভশ্রী।

এইসব আদিখ্যেতা দর্শক দেখতে চায়। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।
তাহলে রাজ শুভশ্রীর একান্ত মিলনদৃশ্যও যদি মানুষ বেশি দেখতে চান, ভাইরালের আশায় তাও পোস্ট করতে হবে নাকি?

নবজাতককে স্বাভাবিকভাবে থাকতে দিন। বাড়তে দিন।
বাবা মাকে প্রচারে ভাসিয়ে রাখার যন্ত্র সে নয়।

তার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ রইল।
রাজ, আপনার হাত থেকে আরও ভালো বাংলা ছবি খুব শিগগির মুক্তি পাক।
শুভশ্রী, অভিনয়ে ফিরুন, আপনার জন্য অনেক পরিণত কাজ অপেক্ষা করছে, আপনি পারবেন।
আর শ্রীমান যুভান, তুমি বেড়ে ওঠো আপন আনন্দে আপন পরিচয়ে উজ্জ্বল থাকার আগামীর লক্ষ্যে।

আরও পড়ুন- জীবিতকালে এড়িয়ে গিয়েছেন, এবার ‘নায়ক’ চারু মজুমদার

 

Previous articleজীবিতকালে এড়িয়ে গিয়েছেন, এবার ‘নায়ক’ চারু মজুমদার
Next articleমোদির জন্মদিনেই বিরোধীদের জাতীয় বেকারত্ব দিবসের দাবি, ‘চাকরি দিন’