Friday, December 19, 2025

সামান্য মাসোহারা বন্ধ, সময় থমকেছে চন্দননগরের ক্লক টাওয়ারে

Date:

Share post:

ফরাস ডাঙা চন্দননগর। আলোর শহর। জগদ্ধাত্রী পুজোর শহর। আর এ শহর ইতিহাসের।

সেই শহরের ঐতিহ্যবাহী চন্দননগর স্ট্র্যান্ড ঘাটের ক্লক টাওয়ারে এখন সময় গিয়েছে থমকে। ঘোরে না আর ঘড়ির কাঁটা। চিরপরিচিত অভ্যেসবশত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে কেউ হাতঘড়ির সময়টা মেলাতে গিয়ে হতাশ হন। আসলে করোনার জের পড়েছে ঘড়িতেও।

ঐতিহ্যবাহী এই ঘড়ি বছরের পর বছর যিনি পরম যত্নে দম দিয়ে আসছিলেন, সেই সুশান্ত দত্তের সামান্য মাসোহারাও বন্ধ হয়েছে কোভিড মহামারিতে। মাসে মাত্র ৫৫০ টাকার বিনিময়ে রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওই টাওয়ারের ওপর উঠে ঘড়িতে প্রতিদিন দম দিয়ে যেতেন তিনি। সন্তান স্নেহেই ঘড়ির কাঁটা ঘোরাতেন সেই মিস্ত্রি। খারাপ হলে ডাক পড়ত তাঁর।কারণ, ফরাসিদের এই ঘড়ির যন্ত্র বাজারে মেলে না। তা সারানোর কারিকুরিও সকলের জানা নেই। আর হেরিটেজ কমিশনের ৫৫০ টাকা মাসোহারায় সংসারে একটু হলেও আয় হত। ঘড়িটিকে নিয়েই ছিল মিস্ত্রি সুশান্ত দত্তর বেঁচে থাকা। এখন স্ট্র্যান্ড এসে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হতাশভাবে ফিরে যান তিনি। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। একবুক দুঃখ নিয়ে ঘাস কাটতে যান মিউজিয়ামে।সংসার চালাতে হবে তো।

আরও খবর : স্কুলের পাঠ্যবই ও কয়েনে ভারতের ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দেখাচ্ছে নেপাল!

লকডাউন শুরু হতেই ৫৫০ টাকার সামান্য অনুদান বন্ধ হয়েছে। হেরিটেজ কমিশন ব্যবস্থা করতে পারছে না মাসোহারার। তাদের পক্ষে আর এই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলা হয়েছে। তবে ঘড়ি সচল রাখতে কর্পোরেশন, পুলিশ, প্রশাসন সকলের কাছেই আবেদন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ঘড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দম দেওয়ার জন্য মাসিক ভাতার বন্দোবস্ত করে দেওয়ার। কিন্তু কোনও উচ্চবাচ্য করেনি সরকার থেকে প্রশাসন। উহ্য থেকে গিয়েছে মাসিক ভাতার প্রস্তাবও। আর সেই কারণেই ঘড়ি টিকটিক আওয়াজ আজ স্তব্ধ।

চন্দননগর মানেই ফরাসিদের স্থাপত্য। গঙ্গার তীরবর্তী স্ট্র্যান্ডঘাট। যার টানে ছুটে আসেন হাজার হাজার মানুষ। আজও গুগলে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড লিখে সার্চ করলে, ৫টির মধ্যে ২টি ছবি আসে ক্লক টাওয়ারের। ফরাসিদের নিজস্ব মেকানিজমে তৈরি ঘড়ি বসানো হয়েছিল ওই টাওয়ারে।সাক্ষী ছিল বহু ইতিহাসের।তাই চন্দননগরবাসীর কাছে এই ঘড়িটি শুধু সময় মাপার যন্ত্র নয়, গর্বের প্রতীক। আর সেটি বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ ফরাস ডাঙার লোকেরা। বাসিন্দাদের দাবি অবিলম্বে সচল হোক ঘড়ি।

হেরিটেজ কমিশনের সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তীও চান ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটা ফের ঘুরুক। আর সুশান্ত দত্ত যিনি বহুবার ঘড়ি সাড়িয়েছেন তাঁর মাসোহারা বন্ধ হওয়ায় যত না খারাপ লাগা, তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট হয় বন্ধ ঘড়ি দেখলে।

সময় সময়ের হিসেবে বয়ে যাবে। চন্দননগরের ঐতিহ্যবাহী ঘড়ির কাঁটা ফের কি ঘুরবে!বলবে সময়ই।

আরও পড়ুন- ‘হাসিনার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে চাই’, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইচ্ছেপূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী

spot_img

Related articles

জুবিন-মৃত্যুতে খুনের তত্ত্ব ওড়ালো সিঙ্গাপুর: পুলিশি তদন্তে প্রকাশ

শিল্পী জুবিন গর্গের মৃত্যুতে খুনের অভিযোগ তুলে এখনও পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেফতার করেছে অসমের বিজেপি শাসিত প্রশাসন। যার মধ্যে...

স্বচ্ছ ভারত মিশন প্রকল্পে রাজ্যে আরও ২৩০ কোটি টাকা খরচ, বেশ কিছু অর্থ দেবে রাজ্য

স্বচ্ছ ভারত মিশন (Swachh Bharat Mission) প্রকল্পে রাজ্যে (State) আরও ২৩০ কোটি টাকা খরচ হতে চলেছে। পঞ্চায়েত দফতর...

ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা, কমিশনকে নিশানা ব্রাত্যর

শিক্ষকদের বিএলওর কাজে যুক্ত করে পঠন-পাঠনে এমনিই ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই ওই...

দু-মলাটে প্রকাশ হল তৃণমূল সরকারের দেড় দশকের রিপোর্ট কার্ড ‘উন্নয়নের পাঁচালি’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) উদ্বোধন করেছিলেন আগেই। শুক্রবার বই আকারে প্রকাশিত হল তৃণমূল সরকারের (TMC Government) দেড়...