আদানিদের হাতেই রেল? ইচ্ছামতো ভাড়া নির্ধারণেরও অনুমতি কেন্দ্রের

আস্তে আস্তে মোদি সরকারের ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসছে বেড়াল৷

একের পর এক বিমানবন্দর আদানিদের হাতে তুলে দেওয়ার পর, নরেন্দ্র মোদির সরকার এবার ভারতীয় রেলের বড় একটি অংশও তুলে দিতে চলেছে ওই আদানিদের হাতেই৷

আর আদানিদের মতো প্রাইভেট অপারেটরদের প্রলুব্ধ করতে আরও একটি ‘মানুষ মারা’ সিদ্ধান্তও নিয়েছে বিজেপি সরকার৷ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, বেসরকারি রেলওয়েকে নিজেদের ইচ্ছা মতো যাত্রী ভাড়া নির্ধারণের অনুমতিও দেওয়া হবে৷

রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে যাদব নিজেই একথা জানিয়েছেন৷ যাদব স্বীকার করেছেন, আরও দু-একটি সংস্থার সঙ্গে আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডও রেল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেছেন, “বেসরকারি অপারেটরদের নিজেদের মতো করে ভাড়া নির্ধারণের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।বেসরকারি সংস্থাগুলি ট্রেন সার্ভিস চালু করার পর তারা চাইলে তাদের যাত্রী ভাড়াও নির্ধারণ করতে দেবে সরকার৷ এর উদ্দেশ্য বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করা।”
বেসরকারি হাতে রেল পরিষেবা তুলে দেওয়ার পর সেটি ঠিক কী ভাবে চলবে, কাদের হাতে রেল যাবে, তা এখনও স্পষ্ট না হলেও রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথায় স্পষ্ট হচ্ছে, আদানিরা ভারতীয় রেলের একটি অংশের মালিক হতে চলেছে এবং মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্তে যাত্রীভাড়া যে কয়েকগুণ বৃদ্ধিও পেতে চলেছে৷ এ বিষয়ে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই৷

রেলের তরফে আগেই বলা হয়েছে, বেসরকারি হাতে রেল তুলে দেওয়া হলে ভারত সরকার প্রায় ৭৫০ কোটি টাকার কাছাকাছি উপার্জন করতে পারবেন। ৫ বছরে সরকারের একটি স্থায়ী উপার্জন হবে বেসরকারি রেলের মাধ্যমে। এই কারনেই কেন্দ্র এখন মরিয়া বেসরকারি সংস্থাদের রাজি করাতে৷ তাই সরকারি সিদ্ধান্ত, যে সমস্ত সংস্থা বেসরকারি রেল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হবে, সেই সংস্থাগুলি তাদের ইচ্ছা মতো রেলের ভাড়াও ঠিক করতে পারবে। অর্থাৎ সরকার নির্ধারিত ভাড়া বেসরকারি রেলসংস্থাগুলি না মানতে চাইলে, সরকার আপত্তি করবে না৷ রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে যাদব জানিয়েছেন, ‘‌নিজেদের মতো করে ভাড়া ঠিক করার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে স্বাধীনতা দিয়েছে ভারতীয় রেল। কিন্তু সেই একই রুটে যদি বাস ও বিমান চলে, তাহলে ভাড়া ঠিক করার সময় সেই বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

ভারতের গণপরিবহণের বৃহৎ মাধ্যম রেল। ট্রেনে করেই দেশের সাধারণ থেকে দরিদ্র মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এটাই দেশের ‘লাইফ-লাইন’৷ অতীতে সে কারনেই দেখা গিয়েছে, রেল বাজেটে যাত্রীভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব পেশ করা হলেই গোটা দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়ছে৷ সামান্য হারে ন্যূনতম ভাড়া বৃদ্ধি হলেও তা দেশজুড়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।

রাজনৈতিক লোকজনের এসব কথা অজানা নয়৷ তবুও বিজেপি সরকার টাকা রোজগার করতে বেসরকারি হাতে রেলের একটি অংশ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ এবং এই সিদ্ধান্তের শিকার হতে চলেছেন দেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষ৷

কেন্দ্র ইতিমধ্যেই ১৫১ ট্রেনের মাধ্যমে ১০৯টি রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে
তাদের আগ্রহপত্র জমা দিতে বলেছে৷ এবার কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যাত্রী ভাড়াও নির্ধারণ করতে অনুমতি দেওয়া হবে৷ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করার লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ৷

রেল ভাড়ার বিষয়টি এ দেশে রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল৷ ভারতীয় রেল প্রতিদিন যত সংখ্যক যাত্রী বহন করে, তা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার সমান৷ মধ্য ও নিম্নবিত্তদের বড় একটি অংশ যাতায়াতের জন্য রেল- নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে। মোদি সরকার রেল চালানোর পাশাপাশি স্টেশনের আধুনিকীকরণ থেকে শুরু করে প্রায় সব সত্ত্বই বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায়৷ এ সবে অংশ নিতে আহ্বানও জানিয়েছে।

রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বোম্বার্ডিয়ার ইনকর্পোরেটেড, জিএমআর ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং আদানি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড রেল পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, টাকার এই অঙ্ক দেখেই সম্ভবত যে কোনও শর্তে বেসরকারি হাতে রেল তুলে দিতে মরিয়া নরেন্দ্র মোদি৷

আরও পড়ুন-NIC-র কম্পিউটারে হ্যাকার-হানা, মোদি- ডোভালের তথ্য লোপাট, সন্দেহ শেনহুয়া’কে

Previous articleকরোনা পজিটিভ গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কেশুভাই প্যাটেল
Next article‘পাত্র চাই’ বিজ্ঞাপনে প্রতারণা, ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ