Monday, May 5, 2025

অতিমারিতে জীবন ও জীবিকায় সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ : জাতিসংঘে হাসিনা

Date:

কোভিড-১৯ শুরুর প্রথম থেকেই বাংলাদেশ ‘জীবন ও জীবিকা’ দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার রাতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে (ভার্চুয়াল) এ কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের এই সভাকক্ষটি আমার জন্য অত্যন্ত আবেগের। ১৯৭৪ সালে এই কক্ষে দাঁড়িয়ে আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সদ্যস্বাধীন দেশের সরকারপ্রধান হিসেবে মাতৃভাষা বাংলায় প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিও এই কক্ষে এর আগে ১৬ বার সশরীরে উপস্থিত হয়ে বিশ্বশান্তি ও সৌহার্দ্যের ডাক দিয়েছি। সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে এটি আমার ১৭তম বক্তৃতা।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি স্বাস্থ্যকর্মীসহ সব পর্যায়ের জনসেবকদের, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে চলেছেন। সাধুবাদ জানাই জাতিসংঘ মহাসচিবকে এই দুর্যোগকালে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের জন্য। বাংলাদেশ শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতিসহ তার অন্যান্য উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে আসছে।”

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, “বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই “জীবন ও জীবিকা” দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।”

সামাজিক সুরক্ষায় নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি করোনা মহামারিতে নেওয়া বিশেষ উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “কোভিড-১৯ বিস্তারের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা তাৎক্ষণিকভাবে খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার ব্যবস্থা নিয়েছি। এতে ১০ মিলিয়নের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছেন। আমরা ৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছি। অতিমারি পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, শ্রমিক ও দিনমজুরসহ à§« মিলিয়ন মানুষকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছি। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রাম পর্যায়ের প্রায় à§§à§® হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়।”

ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি সহায়তার পাশাপাশি আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে তহবিল সংগ্রহ করে এতিম ও গরীব শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, স্কুল শিক্ষক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ যারা সাধারণভাবে সরকারি সহায়তার আওতাভুক্ত নন, তাদের মধ্যে ২.à§« বিলিয়নের বেশি টাকা বিতরণ করি। যার ফলে সাধারণ মানুষকে করোনাভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।”

করোনা সংক্রমণ রোধ ও মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সাথে সাথে আমরা ৩১দফা নির্দেশনা জারি করেছিলাম। করোনাভাইরাস যাতে ব্যাপকহারে সংক্রামিত হতে না পারে, তার জন্য আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেছি। যার সুফল হিসেবে আমরা লক্ষ্য করছি, ঋতু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশে যেসব রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, এবার সেসব রোগ তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। আর্থিক খাতের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আর্থিক খাতের আশু সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে আমরা ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করি।
রপ্তানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিট্যাল প্রদান, রফতানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ- ইত্যাদি খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা মোট à§§à§©.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি যা আমাদের মোট জিডিপি’র ৪ দশমিক শূণ্য à§© শতাংশ।”

খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা করোনাকালে খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। সেইসঙ্গে পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি ও শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতকরণের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। যার ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতি এখনও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।”

কোভিড-১৯-এর কারণে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনে স্থবিরতা সত্বেও বাংলাদেশে ৫.২৪ শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এবং আগামী অর্থবছরে জিডিপি’র প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আমরা মানব ইতিহাসের এক অভাবনীয় দুঃসময় অতিক্রম করছি। জাতিসংঘের ইতিহাসেও এই প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কের সদরদফতরে সদস্য দেশসমূহের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারি আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তারই দেখানো পথে হেঁটে আমরা আজ বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল আসনে নিয়ে আসতে পেরেছি। এই মহান পরিষদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের জনগণের আদর্শ এবং এই আদর্শের জন্য তারা চরম ত্যাগস্বীকার করেছেন। এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গকৃত, যে ব্যবস্থায় সকল মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে।’

আরও পড়ুন- ডোপ টেস্ট পজিটিভ, চাকরিচ্যুত হচ্ছেন ২৬ জন পুলিশকর্মী

Related articles

বিজেপিশাসিত রাজ্যে বাংলায় কথা বলে আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা! কড়া হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

ডবল ইঞ্জিনের রাজ্যে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিজেপি(BJP) শাসিত রাজ্যগুলির...

দেশ চালাচ্ছেন অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার! সাম্প্রদায়িক অশান্তি না করে সীমান্ত রক্ষায় মন দিন: মমতা

অ্যাক্টিং প্রাইম মিনিস্টার দেশ চালাচ্ছেন- মুর্শিদাবাদ পৌঁছে নাম না করে অমিত শাহকে তোপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee)।...

পাকিস্তানকে জলবন্ধের প্রথম হুঁশিয়ারি! সাময়িক বন্ধ চেনাবের জল

সিন্ধু জলচুক্তি ভারত একপাক্ষিকভাবে বাতিল করলে জল পাবে না পাকিস্তান। পহেলগাম হামলা পরবর্তীতে সেরকমই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল কেন্দ্রের মোদি...

ম্যাগমা-র রুফটপ রেস্তোরাঁ ভাঙায় পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত স্থগিতাদেশ হাই কোর্টের

শহরের যাবতীয় রুফটপ রেস্তোরাঁ (Rooftop Restaurant) বন্ধের নির্দেশের পরেই পার্কস্ট্রিটের ম্যাগমা-র (Magma) ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। শনিবার,...
Exit mobile version