গরুপাচারচক্র: আটক বিএসএফ কর্মকর্তা

খায়রুল আলম (ঢাকা)

গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাচারকারী অভিযোগে বহু বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের সাম্প্রতিক এক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এতে দেখা গিয়েছে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং ভারতীয় শুল্ক বিভাগ গরু পাচারে সাহায্য করে। পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

কিছুদিন আগে বিএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী জড়িত। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপিয়েছিল।

সিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্তে বিএসএফ এবং শুল্ক বা কাস্টমস বিভাগের অনেক কর্মকর্তা সরাসরি গরু পাচারের সঙ্গে জড়িত। বুধবার বিএসএফের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। এর আগেও বিএসএফের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠে এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা বলছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী- বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতা-কলমে দেখাতে হয় মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কতসংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তারপরে। মালদহ, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতায় কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়।

খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরু নিয়ে এরপর বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরুর বাছুর হিসেবে নিলাম হয়। অর্থাৎ খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়। যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীর হাতেই পৌঁছায়।

প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দেয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেন। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদহ-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। অন্য রাজ্যের কয়েকটি স্থানেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এফআইআর করা হয়েছে বিএসএফের এক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত বিএসএফ কর্মকর্তার নাম সতীশ কুমার। তিনি বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্য রাজ্যে তার আরও বাড়ি আছে।
বর্তমান কর্মস্থল মালদায় হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলের দীর্ঘ সীমান্তে কাজ করেছেন সতীশ। সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। তার ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

সিবিআই সূত্রে খবর, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় অন্তত ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।

এর আগেও বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায়। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও কয়েক কর্মকর্তা সিবিআইয়ের নজরে আছে।

সম্প্রতি এনআইএ এবং সিবিআইয়ের সূত্রগুলো জানায়, গরু পাচারের সঙ্গে আরও ভয়াবহ লেনদেনের ঘটনাও ঘটে। গরু পাচারকারীরা অস্ত্র পাচারের সঙ্গেও যুক্ত। পাচারের বিভিন্ন পদ্ধতির বিষয়ে জানতে পেরেছে এনআইএ। পাচারকারীরা জেএমবির সঙ্গে জড়িত বলেও কোনও কোনও মহলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব বিষয়ে এখনও কিছু জানাতে রাজি হননি সিবিআই কর্মকর্তারা।
দীর্ঘদিন ধরেই গরু পাচার নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিতর্ক চলছে। কিছুদিন আগেও গরু পাচারকারী, এই অভিযোগে আসামে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিককে পিটিয়ে মারা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বিএসএফ যে যুক্ত এতদিন তা ওপেন সিক্রেট; সিবিআই সেই সত্যে শিলমোহর দিয়েছে।

আরও পড়ুন- অতিমারিতে জীবন ও জীবিকায় সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ : জাতিসংঘে হাসিনা

Previous articleঅতিমারিতে জীবন ও জীবিকায় সমান গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ : জাতিসংঘে হাসিনা
Next articleপুজোর আগেই কি চলবে রেল? রিষড়া স্টেশনে শুরু মার্কিংয়ের কাজ