সফল ১৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার, বাড়ি ফিরলেন মনিকা

৪ সপ্তাহ পর মুম্বাইয়ের গ্লোবাল হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন কুর্লার বাসিন্দা, ২৪ বছর বয়সী মনিকা মোরে। গত ২৮ অগাস্ট, ১৬ ঘন্টার সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর হাতে।

২০১৪ সালে মুম্বাইয়ের ঘাটকোপারের একটি ট্রেন দুর্ঘটনায় নিজের দুই হাত খুইয়েছিলেন মনিকা। এরপর থেকে কৃত্তিম হাতের সাহায্যেই দৈনন্দিন জীবনযাপন করতেন তিনি। কিন্তু আর কতদিন? কৃত্তিম হাত দিয়ে তো সব কাজ করা যায়না।

এদিকে, চেন্নাই থেকে ৩২ বছর বয়সী এক যুবকের ব্রেন ডেথ হওয়ার খবর পান চিকিৎসকরা। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেন, অন্যান্য অঙ্গের মত যুবকের হাত দুটিও প্রতিস্থাপনযোগ্য। আর দেরি করেননি চিকিৎসকরা। মধ্যরাতে চেন্নাই থেকে বিমানে হাতদুটি আনার পরে, ডঃ নীলেশ সাতভাইয়ের নেতৃত্বে ২০ জনের একটি দল শুরু করে অস্ত্রোপচার।

এই ব্যাপারটি দুবছর আগেও হতে পারত। কিন্তু শেষ মূহুর্তে বেঁকে বসেন অঙ্গদাতার পরিবার। চেন্নাইয়ের এই যুবকের পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন মনিকা ও তাঁর পরিবার।

মুম্বাইয়ের গ্লোবাল হাসপাতালের পরামর্শক প্লাস্টিক এবং পুনর্গঠনকারী মাইক্রোসার্জন, ডাঃ নীলেশ সাতভাই বলেন, “হাত প্রতিস্থাপন একটি খুব জটিল সার্জারি। হাতের অভাবে গত কয়েক বছর ধরে মনিকার দুটি হাত প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।” ডাঃ সাতভাই আরও বলেন, “ হাত এবং আঙ্গুলের চলাচল ৩-৪ মাস পরে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তার বাহুর পেশী টিস্যু এবং হাড়গুলি ততদিনে সুস্থ হয়ে উঠবে। হাত সম্পূর্ণ ঠিক হতে এখনও এক থেকে দেড় বছর লাগবে। তবে, একবার তার হাতের চলাচল এবং অনুশীলন এবং ফিজিওথেরাপির সাহায্যে তিনি শীঘ্রই আরও স্বাবলম্বী হয়ে উঠবেন।”

অস্ত্রোপচারের পরে, সংক্রমের আশঙ্কা থাকায়, মনিকাকে আলাদা ঘরে রাখা হয়েছে। আপাতত ৪ সপ্তাহ সেখানেই থাকবেন তিনি। পরিবারের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার অনুমতি না থাকলেও, তাদের সঙ্গে নিয়মিত ভিডিও কলে কথা হচ্ছে তাঁর। তবে যেহেতু তাঁর দুটি হাতেই ব্যান্ডেজ করা, তাই তার যত্ন নেওয়ার জন্য তার সঙ্গে একজন নার্স রয়েছেন সর্বক্ষণের জন্য।

মনিকা জানিয়েছেন, তাঁর হাত প্রতিস্থাপন হবে, এটা তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল। বাবা মারা গিয়েছেন দেড় বছর আগে। তবে বাবার স্বপ্ন যে সফল হয়েছে, তাতেই খুশি মনিকা। তাঁর কথায়, “এতদিন, হাত না থাকায়, আমি কারও বিয়েতে মেহেন্দি লাগাতে পারিনি। তবে এখন আবার মেহেন্দি লাগাতে পারব। এছাড়াও, আমি নিজের চুল বাঁধতে, স্নান করতে, রান্না করতে পারব। সব কাজ নিজে করতে পারব, এই ভেবেই আনন্দিত লাগছে।”
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মনিকার হাত প্রতিস্থাপনে খরচ হয়েছে মোট ৩৬ লক্ষ টাকা। মনিকাদের একার পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন বহু মানুষ। পাশে দাঁড়িয়েছে হাসপাতালও। প্রতি মাসে মনিকার চিকিৎসা বাবদ খরচ হবে ২০,০০০ টাকা করে। তাই এখনও সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি, তাঁরা আরও জানিয়েছেন, মনিকার অস্ত্রোপচারের খবর সামনে আসার পর থেকেই তাঁদের কাছে এই ধরণের আরও প্রতিস্থাপনের আবেদন আসছে।

আরও পড়ুন-স্মার্ট মিটার লাগালে তবেই মিলবে বিদ্যুতের কানেকশন, নয়া নিয়ম কেন্দ্রের

 

Previous articleখুঁটিপুজোতেই চমক বৃন্দাবন মাতৃমন্দিরের, দেখে নিন
Next articleশ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে অনিশ্চয়তায় বিসিবি, ক্রিকেটারদের তিনদিনের ছুটি