বাবরি রায় : আদবানি, যোশী, উমা’রা আজ কোর্টে যাচ্ছেন না, ওদিকে লিবেরহানের বোমা

লখনউয়ের CBI-এর বিশেষ আদালত আজ বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলার রায় ঘোষণা করবে। এই মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি’র দুই “মার্গদর্শক” লালকৃষ্ণ আদবানি এবং মুরলি মনোহর যোশী।

আরও পড়ুন-বাবরি ধ্বংস মামলার রায় শোনার আগে যা জানা দরকার

১৯৯২-র ৬ ডিসেম্বর, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার ২৭ বছর পর এই মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে৷ এই মামলায় লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশী, উমা ভারতীর মত বিশিষ্ট বিজেপি নেতারা মূল অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন। বিজেপি’র শীর্ষনেতা তথা প্রাক্তণ উপ-প্রধানমন্ত্রী আদবানি, প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যোশী এবং উমা ভারতী, উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-রা বাবরি মসজিদ ভাঙার ষড়যন্ত্রে জড়িত থেকে এই কাজে কতখানি উস্কানি দিয়েছিলেন অথবা কিছুই করেননি, একেবারেই নির্দোষ, বুধবার সে কথাই জানাবেন লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক সুরেন্দ্রকুমার যাদব।

এই মামলায় অভিযুক্তদের তালিকায় দেশের প্রাক্তন উপ-প্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুরলী মনোহর যোশী, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী ছাড়াও রয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং, বিনয় কাটিয়ার, সাধ্বী ঋতম্ভরার মতো নেতানেত্রীরা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর বিচারক যাদব ৩২ জন অভিযুক্তকেই বিশেষ আদালতে ৩০ সেপ্টেম্বর, হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে সূত্রের খবর, আদবানি, যোশী, উমা ভারতীদের কেউই আজ আদালতে যাচ্ছেন না৷ উমা ভারতী করোনা আক্রান্ত৷ হৃষীকেশের একটি হাসপাতালে ভর্তি। আদবানি এবং যোশী বয়স এবং সংক্রমণের কারনে আজ আদালতমুখো হচ্ছেন না৷
আদালত যদি বিশেষ ব্যবস্থা করে তাহলে আদবানিরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা দেবেন। বিষয়টি আদালতের কোর্টেই পাঠিয়েছেন বিজেপির এই দুই ‘মার্গদর্শক’৷ প্রসঙ্গত, এখন আদবানির বয়স ৯২ এবং যোশীর ৮৬ বছর৷

এদিকে রায় ঘোষণার আগেই বোমা ফাটিয়েছেন
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তদন্তে গঠিত লিবেরহান কমিশনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মনমোহন সিংহ লিবেরহান। তিনি বলেছেন, ২৮ বছর পর
অভিযুক্তরা যদি শাস্তিও পান, তাতে কার লাভ? কী ধরনের লাভ-ই বা হবে ? তিনি স্পষ্টভাষায় বলেছেন, “এই রায় অর্থহীন, কোনও উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না৷ বয়সের ভারে অভিযুক্তদের অনেকেই মৃত্যুর দিকে পা বাড়িয়ে আছেন। সেই সব অতিবৃদ্ধদের শাস্তি দিলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হবেনা৷ তাহলে এই রায় কোন উদ্দেশ্য পূরণ করবে?”
বাবরি ধ্বংস মামলায় মোট ৪৯ জন অভিযুক্ত ছিলেন৷ এর মধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিঙ্ঘল, শিবসেনার বাল ঠাকরে, অযোধ্যার পরমহংস রামচন্দ্র দাসের মতো ১৭ জন অনেকদিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন৷
অযোধ্যার জমি বিবাদের অন্যতম মামলাকারী ইকবাল আনসারি বলেছেন, “এই মামলা আজই গুটিয়ে ফেলা উচিত। অভিযুক্তদের শাস্তি আইনি ফাঁকেই গলে যাবে৷ রায় পুনর্বিবেচনার মামলা হবে৷ সেই মামলাও চলতে পারে আরও ২৮ বছর৷”

বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ১০ দিনের পর, অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি লিবেরহানকে এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৭ বছর পর ২০০৯ সালের ৩০ জুন
ওই কমিশন তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়৷ লিবেরহান কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘মসজিদ ভাঙ্গার ঘটনা হঠাৎ ঘটেনি, তা ছিলো পূর্ব পরিকল্পিত৷ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে বিশিষ্ট একদল নেতানেত্রী মসজিদ ভাঙ্গার দায়িত্বে ছিলেন।” বলা হয়, এই আদবানি, যোশিরাই সেদিন ঘটনাস্থলে হাজির থেকে “এক ধাক্কা অউর দো, বাবরি মসজিদ তোড় দো” স্লোগান দিয়ে করসেবকদের মসজিদ ভাঙ্গতে উস্কানি দিয়েছিলেন। যদিও সব ক’জন অভিযুক্তই আদালতে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, তৎকালীন কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে৷

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleবাবরি রায়ের মাঝেই শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি মামলার শুনানি আজ মথুরার কোর্টে