শ্রীযুক্ত যোগী, আত্মসম্মান থাকলে এক মাস মুখে কুলুপ এঁটে থাকুন, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

শ্রীযুক্ত আদিত্যনাথ যোগী। আপনি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। হাথরাসের ঘটনার পর টুঁ শব্দটি করেননি। টানা ৬টা দিন আপনি যোগীসুলভ উদাসীনতায় ঘটনাটাকে পাত্তা দেননি। ভেবেছিলেন, ওটা সামলে নেবে পুলিশ-প্রশাসন। দরকারে একটু হুমকি আর চমকানি দিলেই হবে।

আপনি বা আপনার দল মাঝে মধ্যেই মিডিয়াকে আপনার ঘরের জলের পাত্র ভাবেন। যেমন বলব, তেমন আচরণ করবে। পাত্রকে কোন কাজে ব্যবহার করব, তা আমার সিদ্ধান্ত। মাঝে একটি মিডিয়া হাউসের উপর ব্যবস্থা নিতে গিয়ে মুশকিলে পড়েছিলেন। লেজ গুটিয়ে কোটরে ঢুকে পড়তে হয়েছিল আপনার দলের শীর্ষ নেতাকে। শিক্ষা নেননি আপনি।

আপনার অবশ্য নিজের উপর অগাধ আস্থা। এমন আচরণ আর ভাবভঙ্গি করেন, যেন আপনি হলেন সবজান্তা। ভেবেছিলেন এবারেও পার পেয়ে যাবেন। যেভাবে গোমাংস কাণ্ড কিংবা উত্তরপ্রদেশে আপনার দলের প্ররোচনায় দাঙ্গার সময় যেভাবে বেহিসাবি গ্রেফতার-হুমকিতে করেছিলেন। কিন্তু পারলেন না। আপনার থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। মাথা নিচু করে মিডিয়াকুলকে হাথরাসে ঢুকতে দিতে হয়েছে। তারপর নিহত নির্যাতিতার পরিবার যা যা বললেন, তাতে আপনার সম্মান বাড়ল না কমল সেটা আপনিই বলতে পারবেন।

আমার প্রশ্ন অন্য বিষয়ে।

এক. আপনার প্রশাসন বলেছে, ধর্ষণ হয়নি। আপনার ডিজি, আপনার ডিএম, আপনার আলিগড় হাসপাতালের চিকিৎসকরা পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বারবার বলেছেন তরুণী ধর্ষিত হয়নি। প্রশ্ন ঠিক এখানেই। যদি ধর্ষণের ঘটনা নাই ঘটে থাকে তবে কোন কারণে আপনি বললেন, ‘দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি’ দেওয়া হবে। রিপোর্টে তো লেখা রয়েছে, গলায় দোপাট্টা জড়িয়ে মারা গিয়েছেন তরুণী। তা যে ওই চারজনের কীর্তি আপনি জানলেন কী করে! এর একটাই অর্থ, আপনি জানতেন, ঘটনা আসলে কী! তাই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হতেই সাধু সাজার জন্য অবস্থান পরিষ্কার করলেন। ব্যাপারটা এইরকম, যেন এই প্রথম শুনলেন। শুনেই ক্ষুব্ধ হলেন। এবং প্রশাসন কত নিরপেক্ষ ও তৎপর তা প্রমাণে দোষীদের শাস্তি ঘোষণা করে দিলেন! প্রিয় যোগী, আগের ৫টা দিন কী আপনি বাসভবনে নিদ্রা গিয়েছিলেন? এতপরে কেন চেতনা এলো!

দুই. পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট যা বলছে, তাতে চিকিৎসা আইন অনুযায়ী ধর্ষণ। আপনার প্রশাসন থেকে ডাক্তারের দল কী করে বলছেন, এটা ধর্ষণ নয়? যেখানে মৃত্যুর আগে নির্যাতিতাও ধর্ষণের কথা বলে গিয়েছিল!

তিন. পৃথিবীর কোথাকার বিচার! সন্তান মারা যাওয়ার পর বাবা-মা তাকে শেষবার দেখতে পাবেন না! তার শেষকৃত্য করতে পারবেন না! কোন কারণে হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে বনে বাদাড়ে ডালপালাতে আগুন লাগিয়ে স্যানিটাইজার-কেরোসিন দিয়ে দাহ করা হলো তরুণীকে! পড়ে রইল দেহাবশেষ! কেন কেন কেন? কোন কারণে? করোনা আক্রান্ত তো ছিলেন না তরুণী? তাহলে? কোন ঘটনা পর্দা দিয়ে ঢাকতে এমন আচরণ যোগীজি? জবাব আপনাকে দিতেই হবে। এভাবে সব কিছু চাপা দেওয়া যায় না, বুঝলেন তো শ্রীযুক্ত সন্ন্যাসী?

চার. নিহত নির্যাতিতার পরিবারকে আটকে রাখলেন। মোবাইল কেড়ে নিলেন। খাবার পর্যন্ত আনতে দিলেন না। তার বাড়ির চারপাশে পুলিশি ব্যারিকেড। বাড়ির দাওয়া-ছাদে পুলিশ। বাথরুমেও পুলিশ। কারা করল? পুলিশ আর জেলা শাসক। প্রশ্ন হলো, এরা কি নিজের ইচ্ছায় এসব করেছে? মোটেই না। আপনার বা আপনাদের অঙ্গুলি হেলনেই হয়েছে। তাহলে এদের সাসপেন্ড করে আপনি কেন মহান সাজার চেষ্টা করছেন? লড়াই হলো রাজায় রাজায়, প্রাণ গেল উলু খাগড়ার?

পাঁচ. আপনি এক তরুণীর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন, আর অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে হাথরাসে যেতেই দেবেন না? এটা কোন ধরণের রাজনৈতিক সন্ত্রাস? জানতে ইচ্ছে করে, উত্তরপ্রদেশ কী কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের জায়গির নাকি!

ছয়. একটার পর একটা ধর্ষণের ঘটনা আপনার রাজ্যে। জাতি সঙ্ঘর্ষ বা দাঙ্গাও। কিন্তু আপনাদের চেতনা ফিরছে না। আপনারা নির্বিকার। আপনারা ব্যস্ত রাম মন্দিরে। শুধু তো সেখানেই শেষ নয়, কখনও লাভ জিহাদ তো কখনও গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ। কিছু না কিছু করছেন। আর বলছেন দেশ এগোচ্ছে!

যে ঘটনা আপনারা সারা দেশকে দেখিয়েছেন শ্রীযুক্ত আদিত্যনাথ যোগী অ্যান্ড কোম্পানি, এরপর বিজেপির একমাস মুখ বন্ধ করে প্রায়শ্চিত্ত করা উচিত। তারপর গঙ্গায় স্নান করে এসে অন্যের সমালোচনার কথা ভাববেন। আত্মসম্মান বা সেল্ফ রেসপেক্ট বলেও তো পৃথিবীর ডিক্সনারিতে একটা কথা আছে!

আরও পড়ুন-স্বামীজির অপমান! খুলে নেওয়া হোক যোগীর গেরুয়া পোশাক, অভিজিৎ ঘোষের কলম

Previous articleশিলিগুড়ি থেকে ১৭ কোটি টাকার সোনা উদ্ধার ডিআরআইয়ের
Next articleঅস্ত্রোপচার চলাকালীন মৃত্যু সন্তানের, ‌অপমানে আত্মঘাতী চিকিৎসক বাবা