Friday, December 19, 2025

বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে অশ্লীল ইঙ্গিতের টুইট, ইনি রাজ্যপাল!

Date:

Share post:

জয়িতা মৌলিক : যে রাজ্য মহিলাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান দেশেকে পথ দেখায়, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা; সেই রাজ্যের রাজ্যপাল হয়ে কীভাবে নিজের অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারেন জগদীপ ধনকড়। একবার নয়, একাধিকবার বিভিন্ন কারণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন তিনি। শুধু তাঁর কাজ নিয়ে নয়, তাঁর প্রশাসন নিয়ে নয়, ব্যক্তি মমতাকে নারী হিসেবে অপমানজনক কথা বলতেও পিছিয়ে আসেনি ধনকড়।

বাংলার দায়িত্ব নিয়ে আসার পরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে সংঘাতের জড়িয়েছেন জগদীপ ধনকড়। রাজ্যপাল হিসেবে দেশের কাছে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা দূর, প্রতিনিয়ত সেটাতে কালিমালিপ্ত করা চেষ্টা করেছেন। তাঁর আচরণ অনেক সময় গেরুয়া শিবিরের প্রতিনিধির মতো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদি রাজভবনে থেকে একজন রাজনৈতিক নেতার মতো আচরণ করেন, রাজভবনকে যদি কোনো দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন সেটা একটা দিক। কিন্তু একজন শিক্ষিত ভারতীয় হিসেবে কীভাবে রাজ্যপাল একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অবমাননাকর, অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করতে পারেন? তাঁর নাম নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ করতে পারেন?

ভুলে যান তিনি মুখ্যমন্ত্রী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার মেয়ে, একজন দায়িত্বশীল পদে থাকা মহিলা, একজন সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব- কীভাবে তাঁকে এই ধরনের মন্তব্য করা যায়! এবং সেটা কে করছেন? যিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। হাথরাসের ঘটনায় যখন তৃণমূলের প্রতিনিধিদল উত্তরপ্রদেশ যায়, নির্যাতিতার বাড়ির দেড় কিলোমিটার আগে তাদের আটকে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কোনও মহিলা পুলিশ ছাড়াই প্রতিনিধিদলের দুই মহিলা প্রতিমা মণ্ডল এবং মমতাবালা ঠাকুর গায়ে হাত দেয়। রীতিমতো টেনে-হিঁচড়ে তাঁদের সরানোর চেষ্টা করে। এরপরে প্রতিমা মণ্ডল বলেছিলেন, “ভুলে যান আমি একজন সাংসদ। কিন্তু আমি একজন নারী। উত্তরপ্রদেশ দাঁড়িয়ে যদি আমার এই অবস্থা হয় তাহলে দলিত মহিলাদের কী পরিস্থিতি তা সহজেই অনুমেয়”। ঠিক তারপরের দিন রাতে কংগ্রেসনেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী হাথরাস যান এবং তখনও তা ঠিক ওইভাবে জামা ধরে টানে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাহলে কি বিজেপি শাসিত রাজ্যে মহিলাদের কোনো মর্যাদা নেই? যে কোনও ভাবেই তাঁদের হেনস্থা করা যায়! তার প্রতিফলনই কি রাজ্যপালের টুইটারে পড়ছে? এখন এই প্রশ্নই ঝড় তুলেছে রাজনৈতিক মহলে।

আগামী প্রজন্মকে আমরা কোন ভবিষ্যৎ উপহার দেব? একটা লিঙ্গ বৈষম্যহীন, মহিলাদের জন্য নিরাপদ একটা সমাজ কি আমরা দিতে পারব না? বাংলায় সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। খবরের কাগজ খুললেই যখন দেশ জুড়ে মহিলাদের প্রতি আক্রমণ, অপরাধ, লিঙ্গবৈষম্যের খবর উঠে আসে, তখন বাংলার মেয়েরা পায়ে ‘কন্যাশ্রী’। প্রশাসন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজে তারা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলে। অথচ সেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপাল অসম্মান সূচক কথা বলছেন। কেন একজন সফল রাজনীতিবিদ হয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ধরনের লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হতে হবে! শুধুমাত্র তিনি একজন মহিলা বলে? রাজ্যপাল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব, সাফল্য কোন কিছু না দেখে তাঁকে মহিলা হিসেবে দেখে তাঁর প্রতি অপমানজনক মন্তব্য করবেন! মহিলা মানে তিনি শুধু ভালোবাসা আর প্রেম বিতরণ করবেন! তিনি ক্ষমতায় থাকবেন না? তিনি দেশ পরিচালনা করবেন না? তিনি প্রশাসনের ওপরে উঠবেন না? এই মানসিকতা যদি একজন শিক্ষিত পুরুষের হয়ে থাকে, তাহলে তিনি যে রাজনৈতিক ভাবাদর্শ প্রভাবিত সেই দলের দৃষ্টিভঙ্গি কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

এই ধরনের টুইট শুধুমাত্র কুরুচির পরিচয় দেয় তাই নয়, এটাকে যৌন হেনস্থামূলক মন্তব্য বলা যায়। এতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মহিলাদের প্রতি লিঙ্গ বৈষম্যের ইঙ্গিত স্পষ্ট।

সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের সঙ্গে মতান্তর-মনান্তরে থাকতেই পারে। কিন্তু প্রশাসনিক প্রধান মহিলা না পুরুষ সেটা দেখে যদি সাংবাদিক প্রধানের মন্তব্যের গতি বদলায় তবে সেটাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

হয়তো বাংলায় মহিলাদের নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সবকিছুই দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকায় ভীত গেরুয়া শিবির। আর তার জন্যেই অন্য আঙ্গিকে মুখ্যমন্ত্রীকে মহিলা বলে কটাক্ষ করে দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার চেষ্টা চলছে।

আরও পড়ুন : বিজেপি দেশের সবচেয়ে বড় অতিমারি, দেশের লজ্জা: প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে তীব্র কটাক্ষ মমতার

spot_img

Related articles

হিজাব বিতর্কে নয়া মোড় ,সরকারি চাকরিতে যোগ দিচ্ছেন না মহিলা চিকিৎসক!

বিহারের সরকারি অনুষ্ঠানে মহিলা চিকিত্‍সকের মুখ থেকে হিজাব টেনে নামিয়ে দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ...

কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো-র সংবাদপত্রের দফতরে হামলা! 

বাংলা দৈনিক প্রথম আলো-র দফতরে হামলা! বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে একদল অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি সংবাদপত্রটির দফতরে ঢুকে একাধিক তলায় ব্যাপক...

জলপাইগুড়ির আকাশে ভিনগ্রহীদের যান! রহস্যময় আলো ঘিরে বাড়ছে জল্পনা

বৃহস্পতিবার রাতের আকাশে হঠাৎ রহস্যময় আলো ঘিরে চাঞ্চল্য জলপাইগুড়ি জেলায় (Jalpaiguri District)। কেউ বলছেন উল্কা কেউ বলছেন ইউএফও...

এসআইআর প্রক্রিয়ায় নজির! প্রথমবার ভোটারকে শো-কজ কমিশনের

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় এই প্রথম কোনও ভোটারকে শো-কজ নোটিশ পাঠাল নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ, এক...