স্পষ্ট হচ্ছে, ক্রমশই একঘরে হচ্ছেন অজয় বিস্ত, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

‘আত্মনির্ভর’ উত্তরপ্রদেশের শাসক বিজেপি সরকারের কী করুন অবস্থা!

বিশ্বাসযোগ্যতা এতটাই মাটির তলায় সেঁধিয়েছে যে হাথরাস-কাণ্ড নিয়ে অজয় বিস্ত বা বিজেপির কোনও নেতা-নেত্রীর কথার কানাকড়িও মূল্য দিচ্ছেন না ওই রাজ্যের বাসিন্দারা৷ পরিস্থিতি করুণই শুধু নয়, নেতা- নেত্রীদের অবস্থা আজ হাস্যকরও হয়ে উঠেছে৷ এবং নিজের পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সেকথা স্বীকারও করে নিলেন কীর্তিমান অজয় বিস্ত৷

প্রচার এইরকম, যে বিজেপি না’কি শুধু ভারতেরই নয়, দুনিয়ার বৃহত্তম দল৷ তো, সেই দলে বিশ্বাসযোগ্য মুখের যে এত অভাব তা আগে জানা ছিলো না৷ একদম নীচের তলা থেকে শীর্ষতম স্তর পর্যন্ত এমন একটা গ্রহণযোগ্য মুখও নেই, যিনি কিছু বললে সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করবেন, ভরসা করবেন, আস্থা প্রদর্শন করবেন৷ অজয় বিস্ত হাড়ে হাড়ে আজ বুঝেছেন উত্তরপ্রদেশের জনমানসে তাঁর স্থান ঠিক কোথায়৷ শুধু নিজের অবস্থানই নয়, বুঝেছেন তাঁর দলের নেতারাই বা কে কোথায় দাঁড়িয়ে৷ আর সে কারনেই হাথরাসে যে গণধর্ষণ ঘটেনি, তা প্রচার করতে চরম হতাশ এবং অসহায় অজয় বিস্ত বেসরকারি এক জনসংযোগ সংস্থাকে বরাত দিয়েছেন৷

ভাবা যায়, একটি রাজনৈতিক দল, যে দলটি দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতার চূড়োয় বসে আছে, সেই দলটির রাজনৈতিকভাবে এই কথাটি প্রচার করার সাহস, যোগ্যতা বা দম, কোনওটাই আজ আর নেই৷ আসলে দূর থেকে দলটিকে পাহাড়ের মতো লাগলেও, আদতে যে দলটি নেহাতই উইঢিপি, তা কার্যত মেনেই নিয়েছেন অজয় বিস্ত৷ তাই হাথরাসে দলিত তরুণী ধর্ষিতা হননি, বিস্ত সরকারের এই বক্তব্য প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি জনসংযোগ সংস্থা ‘কনসেপ্ট পি আর’-কে৷

বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই বিস্ময় সৃষ্টি করছে৷ দেশের সব রাজ্যেই সরকারের কথা আমজনতার কাছে তুলে ধরার জন্য প্রশাসনিকস্তরে তথ্য ও জনসংযোগ দফতর আছে৷ এই দফতরের একজন মন্ত্রীও থাকে৷ যতদূর মনে পড়ছে উত্তরপ্রদেশের তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রীর নাম ডঃ নীলকান্ত তেওয়ারি৷ দেশের সব রাজ্যে এই দফতরই জনগণ এবং সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন করে৷

বিস্ত চেয়েছেন, হাথরাস ইস্যুতে পাবলিককে বোঝাতে হবে, “ধর্ষণের কোনও ঘটনাই ঘটেনি৷ সবটাই সাজানো”৷ যে ঘটনায় গোটা দুনিয়া ছিঃ ছিঃ করছে, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এবং ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর মতো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র যখন এই ঘটনা ফলাও করে খবর করেছে, যখন দেশের দু’জন মহিলা-সাংবাদিক অজয় বিস্ত সরকারকে নগ্ন করে ছেড়েছে, সেখানে পরিস্থিতি সামলানো যে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কম্মো নয়, তা ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন অজয় বিস্ত৷ তাই অসহায় হয়েই তিনি শরণাপন্ন হয়েছেন এক Public Relations Agency বা জনসংযোগ সংস্থার৷ এটা বোঝা গিয়েছে, নিজের সরকারের উপরই আস্থা নেই মুখ্যমন্ত্রীর৷ কিন্তু দল তো ছিলো ! দলকে এই কাজে নামাতে পারলেন না কেন মুখ্যমন্ত্রী ? না’কি উত্তরপ্রদেশের বিজেপিও আজ অজয় বিস্তের পাশে নেই? হতেই পারে৷ সবাই জানে, এই অজয় বিস্তকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ কিন্তু সঙ্ঘের চাপে বিস্তকে গিলতে বাধ্য হন মোদি৷ কেন তিনি আপত্তি জানিয়েছিলেন, তা এতদিনে গোটা দেশ বুঝেছে৷ বুঝেছেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারাও৷ তাই বিস্তের পাশে কেউই আজ দাঁড়াতে রাজি নন৷ আর সেই দুঃখেই অজয় বিস্ত PR সার্ভিস ভাড়া করেছে তাঁর নিজের কথা প্রচার করতে৷ কী চমৎকার প্রশাসন চলছে!

ওদিকে, ‘কনসেপ্ট পি আর’ সংস্থাও একাধিক দেশীয় সাংবাদিক এবং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে একটি “ক্ল্যারিফিকেশন নোট” পাঠিয়েছে। এতে স্পষ্ট ভাবে লেখা আছে, “ওই দলিত তরুণীর সঙ্গে কোনও ধর্ষণের ঘটনাই ঘটেনি, ফরেনসিক রিপোর্ট, প্রাথমিক মেডিক্যাল রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এই তথ্য নিশ্চিত করেছে”।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, অজয় বিস্ত, তাঁর নিজের সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ মন্ত্রী বা সচিবের উপর কেন ন্যূনতম আস্থাও রাখতে পারলেন না কেন ? কেন রাজ্য বিজেপি’র উপরই বা ভরসা করতে পারলেন না ? অজুহাত হতে পারে, পেশাদার সংস্থা, পেশাদারি ভঙ্গিতে এই প্রচার করবে৷ এতে লাভ হবে৷ অযৌক্তিক কথা৷ একটা সরকার ইচ্ছা হলে দুরন্ত পেশাদার এক জনসংযোগ- পরিকাঠামো গড়ে তুলতে পারে এক ঘন্টায়৷ অথচ, সে পথে হাঁটার সাহসই পেলেন না অজয় বিস্ত৷ বিস্ত নিশ্চিত, তাঁর সরকার এই কাজে সফল হবে না৷ আজ এই মুহুর্তে বিস্তদের কথা কেউ শুনবে না৷ রাজ্যে এবং দলের অন্দরে কার্যত ব্রাত্য৷

রাজনীতিকদের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি যখন প্রশ্নলাঞ্ছিত হয়, তখন তাঁদের গণভিত্তিও আলগা হয়ে যায়৷ অজয় বিস্তের ঠিক তাই-ই হচ্ছে৷ নিজের ব্যর্থতায় সৃষ্টি করেছেন একাধিক বিড়ম্বনা৷ তাই এই মুহুর্তে তিনি নিঃসঙ্গ, একঘরে।

অথচ এর পরেও অজয় বিস্ত গ্যাঁট হয়ে বসে আছেন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে৷ লজ্জাবোধের অভাব ক্রমশই প্রকট হচ্ছে৷

আরও পড়ুন-বিহার হাতছাড়া হলে দায় অজয় বিস্তের, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Previous articleআবার মহাকাশে পৌঁছল ‘কল্পনা চাওলা’
Next articleতফশিলি জাতি-উপজাতিদের এডুকেশন লোন, পড়ুয়াদের পাশে রাজ্য: মুখ্যমন্ত্রী