মণীশ খুনে অর্জুনের কেন এতো লম্ফঝম্ফ? দিলীপের নীরবতা অনেক কিছু বলে দিচ্ছে

মণীশ শুক্লা খুনে মঙ্গলবার একের পর এক বোমা ফাটানোর চেষ্টা করেছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। খুনের রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে গিয়ে নিজেকেই বিতর্কের প্যাঁচে জড়িয়েছেন অর্জুন। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, চক্রান্তের বীজ ছড়িয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবিরেই, বলা ভাল অর্জুন শিবিরেই।

কী বললেন অর্জুন?

ভবানীভবন থেকে আমার ও মণীশের গতিবিধি ট্র‍্যাক করা হচ্ছিল।

প্রশ্ন, এ তথ্য অর্জুনের কাছে থাকলে তিনি সাংবাদিকদের ডেকে কেন ফাঁস করে দেননি? মণীশ খুন হয়ে যাওয়ার পর কেন এই সব বলে বাজার গরম করার চেষ্টা? যত তথ্য এলো সব খুনের পরে? ভবানী ভবনের গোপন কথা জানতে পারলে খুনের সম্ভাবনার কথাও কি জানতেন?

অর্জুন অপরিপক্ক রাজনীতিকের মতো একের পর এক রাজনীতিকের নাম জড়িয়েছেন, ছবি দিয়ে। দীনেশ ত্রিবেদী, মদন মিত্র, ব্রাত্য বসু, নির্মল ঘোষ, দুই পুর প্রতিনিধি, কাউকেই বাদ দেননি।

প্রশ্ন, এই তথ্য অর্জুন পেলেন কোথা থেকে? অভিযুক্ত মহম্মদ খুররম এলাকায় তৃণমূল করতেন। তার সঙ্গে এলাকার নেতাদের ছবি থাকা স্বাভাবিক। রাজ্য প্রশাসন যে স্বচ্ছ্বভাবে ঘটনার তদন্ত করছে, এটা তো তার প্রমাণ। প্রশাসন তো চাইলেই এলাকার কয়েকজন বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে বিজেপির অন্তর্ঘাত তত্ত্ব সামনে আনতে পারত। মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। এই নেতারা যদি জনমানসে সম্মানহানির অভিযোগ নিয়ে কোর্টে যান, তখন সামাল দিতে পারবেন তো অর্জুন?

নিহত মণীশের বাবা অভিযোগ করেছেন রাজনৈতিক চক্রান্তের।
প্রশ্ন, অর্জুন বলছেন তৃণমূল দায়ী, আর নিহতের বাবা বলছেন রাজনৈতিক চক্রান্ত। তৃণমূল দায়ী একবারও বলেননি। কে বেশি বিশ্বাসযোগ্য, অর্জুন না মণীশের বাবা?

অর্জুন বারবার অভিযোগ করছেন। কে অর্জুন? যার বিরুদ্ধে তোলাবাজি, খুন, তছরূপ, বেআইনি সম্পত্তি করার ভুরি ভুরি অভিযোগ। আর মণীশের বিরুদ্ধেও ছিল প্রায় ডজনখানেক মামলা।
প্রশ্ন, কে অভিযোগ করছেন? কাকে নিয়ে অভিযোগ করছেন? নিহত ও অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে রাশি রাশি মামলা। কেন? নিশ্চয়ই এরা ‘সুবোধ বালক’ নন!

প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি মহলেই। এলাকায় কান পাতলেই বিজেপি কর্মীরা যে তথ্য দিচ্ছেন, সেগুলি মোটেই ফেলনা নয়। কী সেই অভিযোগ?
১. যেখানে ঘটনা, ঠিক সেখানেই নেমে অর্জুন কেন চলে গেলেন? তিনি কি তাহলে জানতেন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে?
২. বিজেপি মহলের বক্তব্য, এবার বিধানসভায় মণীশের প্রার্থী হওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল। আর অর্জুনের লক্ষ্য ছিল মনীশের প্রার্থী হওয়া আসনটির দিকে। ওখানেই মেয়েকে প্রার্থী করার পরিকল্পনা ছিল অর্জুনের। এই ঘটনায় কি রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেল অর্জুনের?
৩. মণীশের ঘনিষ্ঠ মহল বলছে, তৃণমূলে ফিরতে চাইছিলেন তিনি। বীতশ্রদ্ধ ছিলেন এলাকার বিজেপি নেতাদের উপর। এ কথা কি জানতে পেরেছিলেন অর্জুন?
৪. সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, মণীশের মৃত্যু নিয়ে বাজার গরম করার চেষ্টা করছেন অর্জুন, কৈলাশ বিজয়বর্গী, মুকুল রায়রা। লক্ষ্যণীয় হলো, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ একবারই শুধু ‘রুটিন ক্ষোভ’ প্রকাশ করেছেন। এরপর একবারও এই মৃত্যু নিয়ে একটি কথাও বলেননি। এমনকী এলাকায় বা মণীশের বাড়ি যাননি। দলের রাজ্য সভাপতিকেই সঙ্গে পাচ্ছেন না অর্জুন শিবির। এই ঘটনাই তো প্রমাণ করে দিচ্ছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। আর এই ‘কালা’ বিষয়টা লুকোতেই সম্ভবত অর্জুনের অতিরিক্ত লম্ফঝম্ফ।

মানুষ কিন্তু সব বুঝছেন।

Previous articleহাথরাস-কাণ্ডে নীরব থেকেই বাংলার ‘অসত্য’ ধর্ষণ-তথ্য পেশের অভিযোগ ধনকড়ের বিরুদ্ধে
Next articleSBI-এর নতুন চেয়ারম্যান দীনেশ কুমার খারা