বঙ্গ-বিজেপি’র মদতেই বঙ্গভঙ্গের বৈঠক আজ, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

রাজ্যের প্রবল চাপে শুধুই শব্দবদল করেছে কেন্দ্র, বাংলাভাগের উসকানি- বৈঠক কিন্তু হচ্ছেই৷ এবং এই বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গ-বিজেপি আশ্চর্যজনকভাবে নীরব৷ সব ইস্যুতে টুইট করা যিনি অভ্যাসে পরিনত করেছেন, সেই ধনকড় সাহেবও মুখে কুলুপ এঁটে আছেন৷ তাঁর উচিত ছিলো রাজ্যপাল হিসেবে বঙ্গভঙ্গের এই কেন্দ্রীয় প্ররোচনার পক্ষে দাঁড়িয়ে একটা অন্তত টুইট করা৷ তাই ‘Nation wants to know’, কেন রাজ্যপাল এবং বঙ্গ-বিজেপি “রাজ্যের স্বার্থযুক্ত” এই ইস্যু এড়িয়ে যাচ্ছেন ?

বুধবার, ৭ অক্টোবর, দিল্লির নর্থ ব্লকে ‘গোর্খাল্যান্ড’ নিয়ে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় সরকার।ওই বৈঠকে পৌরহিত্য করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেডডি। রাজ্যের মুখ্যসচিব, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক, GTA-র প্রধান সচিব এবং গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতিকে কেন্দ্রীয় সরকার এই বৈঠকে ডেকেছে৷ তবে রাজ্য আদৌ এই ডাকে সাড়া দেবে কি’না তা নিয়ে প্রবল সন্দেহ৷ রাজ্য বৈঠকে না থাকলে এই বৈঠক করা বা না-করা সমান বলেই ধারনা করা হচ্ছে৷

প্রথম চিঠিতে এই বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ‘গোর্খাল্যান্ড রেগুলেশন’ শব্দটি লেখা হয়েছিলো৷ ফলে সঙ্গত কারনেই ফের বাংলা ভাগের ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ ওঠে রাজ্যের তরফে৷ ‘গোর্খাল্যান্ড’ শব্দ থাকার কড়া প্রতিবাদ করে বাংলার শাসক তৃণমূল৷ ছক ধরে ফেলায় এর পরই কেন্দ্র ঢোঁক গিলে ফের সংশোধিত চিঠি পাঠায়৷ সেখানে বদলে যায় ‘গোর্খাল্যান্ড রেগুলেশন’ শব্দটি। বদলে ঢোকানো হয় ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ বা GTA নিয়ে আলোচনা হবে৷

আর তথাকথিত এই ‘ত্রিপাক্ষিক’ বৈঠক ঘিরেই পুজোর মুখে অযাচিত এক অশনি সংকেত এ রাজ্যে৷ তবে বাংলাভাগের এই কেন্দ্রীয় প্ররোচনা বিজেপি আমলে এবারই প্রথম নয়৷ এর আগে, গত ৭ আগস্টও না’কি এ ধরনের একটি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। তবে সেদিন রাজ্যের তরফে কেউ না-থাকায় বৈঠক ভেস্তে যায়।

বাংলা ভাগ বা ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ ইস্যু একুশের ভোটের আগে চাগিয়ে তুলতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং নাড্ডার বিজেপি৷ পরিকল্পিত পদক্ষেপ ৷ কিছুদিন আগে বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষের সামনে দাঁড়িয়ে সংসদে ‘গোর্খাল্যাণ্ড’-এর দাবি জানিয়েছিলেন দার্জিলিং- এর সাংসদ মনিপুরের রাজু বিস্ত৷ দিলীপ ঘোষ টেবিল বাজিয়ে বিস্তের দাবি সেদিন সমর্থনও করেছিলেন৷ তার দিনকয়েক আগে, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা গোর্খাদের জন্য আলাদা ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ রাজ্যের দাবিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলেন৷ দু’টি ঘটনাই যে কেন্দ্রীয় সরকার তথা সর্বভারতীয় বিজেপি’র পরামর্শ বা নির্দেশে যে হয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই৷

কিন্তু পুজো এবং ভোটের আগে শান্ত পাহাড়কে তপ্ত করতে কেন মরিয়া বিজেপি? পাহাড়ে হিংসা ছড়িয়ে, রাজ্য পুলিশের এক অফিসারকে খুন করে, ভাঙচুর-অবরোধ করে গা ঢাকা দিয়েছে GJM-এর শীর্ষ দুই নেতা বিমল গুরুং ও রোশন গিরি। তখন থেকেই অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির এই দুই মোর্চা নেতাকে শেল্টার দিচ্ছে, আইনি সহায়তা দিচ্ছে, অর্থ যোগান দিচ্ছে। আর এই সব করেই বাংলা ভাগ করার আন্দোলনকে মদত দিয়ে চলেছে বিজেপি।

মদত দেওয়ার কারন একাধিক৷

প্রথমত, এই বৈঠককে ঢাল বানিয়ে বিধানসভা ভোটের আগেই বিজেপি’র ‘পুরোনো’ বন্ধু বিমল গুরুংকে পাহাড়ে পাঠাতে চাইছে বিজেপি৷ এই বৈঠকের অন্যতম ছক এটি৷ রাজ্য সরকার বৈঠকে যোগ না-দিলেও এই বৈঠকে গৃহীত তথাকথিত ‘প্রস্তাব’-কে সামনে এনে ‘দেশের স্বার্থে’ সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আর্জি জানাতে পারেন গুরুং৷ জামিন পেলে বিমল গুরুংরা পাহাড়ে ঢুকে ফের ‘গোর্খাল্যাণ্ড’- এর দাবিতে ভোটকেন্দ্রিক আন্দোলনে নামতে পারেন৷

দ্বিতীয়ত, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে ফের ‘গোর্খাল্যাণ্ড’-এর দাবি তুলে পাহাড়ের গোর্খা-ভোটব্যাঙ্ককে নিজেদের পক্ষে আনতে চাইছে বিজেপি৷ এমনিতেই পাহাড়ে এখন যথেষ্ট আন-পপুলার হচ্ছে বিজেপি৷ আগেরবারের সাংসদ আলুওয়ালিয়া পাহাড়ে কাজের কাজ কিছুই করেননি৷ পরবর্তী সাংসদ বিস্ত-ও বিবৃতি দেওয়া ছাড়া এখনও কিছু করে উঠতে পারেননি৷ লোকসভা ভোটের সমীকরণ ছিলো আলাদা৷ ওই ভোটে মোদিকে সমর্থন করা ছাড়া বিকল্প কিছু ছিলোনা৷ পাহাড়ে বিজেপির আসন একটিই, উপনির্বাচনে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী৷ কিন্তু ‘রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে’ পাহাড়ের সব আসনে জিততে হবে বিজেপিকে৷ আর সেক্ষেত্রে ‘গোর্খাল্যাণ্ড’- এর জিগির তোলা ছাড়া হাতে আর কোনও অস্ত্রই বিজেপির হাতে নেই৷ দলের তরফে পাহাড়ে ‘গোর্খাল্যাণ্ড’- এর বার্তা আর খাওয়ানো যাচ্ছে না, তাই দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাসযোগ্য করতে একই দাবি সরকারি মোড়কে প্যাকেজিং করা হয়েছে৷
তবে আস্তিনের তলায় যে তাস-ই দিল্লির বিজেপি লুকিয়ে রাখুক, আশ্চর্যের বিষয় এটাই, বঙ্গ- বিজেপিও বাংলা ভাগের এই কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টাকে দু’হাত তুলে সমর্থনই করছে৷ এখনও পর্যন্ত গেরুয়া-শিবির নীরব৷

দিল্লির ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হোক বা না-হোক,
বঙ্গভঙ্গের সমর্থক বিজেপিকে শুধু এই কারনেই বড়সড় ধাক্কা খেতে হবে একুশের ভোটে৷ রাজ্যে ভোটপ্রচারের বড় হাতিয়ার পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল৷

আরও পড়ুন- দিল্লিতে বৈঠকে নাড্ডার নয়া কমিটি, নতুন মুখ এনে বিহারের ২৭ প্রার্থীর নাম ঘোষণা

Previous articleভালো আছেন করোনা আক্রান্ত সৌমিত্র
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ