নিরাপত্তা তোলার আর্জি জানিয়ে বিপ্লবের স্ত্রীর আবেগঘন পোস্ট ঘিরে জোর জল্পনা ত্রিপুরায়

ত্রিপুরায় মানিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি-আইপিএফটি জোট। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন রাজনীতিতে আনকোড়া-অপরিচিতি বিপ্লব দেব। ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন বিপ্লব। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হোক, দলীয় কোন্দল বা অন্যকিছু, নিজের রাজনৈতিক অপরিপক্কতার পরিচয় দিয়েছেন বিপ্লব। সম্প্রতি, ত্রিপুরার রাজনীতিতে বিপ্লবের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী তাঁরই দল বিজেপির কমপক্ষে ২০ জন বিধায়ক। দিল্লি গিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার কাছে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। এদের নেতৃত্বে আছেন প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ। তিনি গত নির্বাচনের আগে পরপর কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে বিজেপি যোগ দেন। যা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রবল চাপে বিপ্লব।

সূত্রের খবর বিক্ষুব্ধ বিধায়কদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী একনায়কতন্ত্র কায়েম করে সরকার চালাচ্ছেন। এতে সরকারের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে দলের ভিতর ও জনগণের মধ্যে। এরকম চললে ত্রিপুরায় বিজেপির অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। সরকারের পতন হবে। বেশ কয়েকজন বিধায়ক ইতিমধ্যে ফেসবুকে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ত্রিপুরায় বিপ্লব দেবের চেয়ার টলমল করছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী নীতি দেবের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জল্পনা আরও বেড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জায়া আবেগঘন ফেসবুক পোস্টে নিজের নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার আবেদন করেছেন সরকারের কাছে। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে ত্রিপুরার রাজনীতিতে। কেন হঠাৎ নিরাপত্তা তুলে নিতে বললেন বিপ্লবের স্ত্রী? তাহলে কি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে দল বিপ্লবকে অপসারিত করতে চলেছে? এমন সব ইঙ্গিত পেয়েই আগে থেকে নীতি দেব নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার আবেদন করেছেন? রাজনৈতিক মহলে প্ৰশ্নগুলি ঘুরপাক খাচ্ছে!

দিল্লিতে জেপি নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের স্ত্রী নীতি দেব তাঁর নিরাপত্তা তুলে নিতে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। এবং ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্ট করে লিখেছেন,

“ত্রিপুরাবাসীর প্রতি আমার বিনীত প্রার্থনা :-

বলা হয়ে থাকে যে ভাগ্যবান লোকেরাই ভালোবাসা পেয়ে থাকে এবং সবসময়ই দেখা যায় যে আপনজনদের কাছ থেকেই বেশী ভালোবাসা পেয়ে থাকেন, তবে আমি মনে করি আমার থেকে বড় ভাগ্যবান লোক খুব কমই আছে যে সমগ্র ত্রিপুরাবাসীর কাছ থেকে ভরপুর ভালোবাসা পেয়েছে, বড়দের আশীর্বাদ পেয়েছি, জীবনসাথীর সঙ্গ পেয়েছি, ছোটোদের কাছ থেকে স্নেহ পেয়েছি এর জন্য আমি সবার কাছেই কৃতজ্ঞ।

আমি মনে করি আমি যদি ত্রিপুরার যেকোনো ঘরে চলে যাই বা যেকোনো গ্রামে চলে যাই অথবা ঘুরতে ঘুরতে কোথাও দূরে চলে যাই না কেনো আমার কাউর কাছ থেকে ভয়ের কোনো কিছু নেই, আমার ভীতির কিছু নেই।

কারণ যেখানে আমাকে এত ভালোবাসা দেওয়া হচ্ছে এর অর্থ হলো সারা রাজ্যই আমার রক্ষা করছে.. প্রত্যেকটি ঘর, প্রতিটি ব্যক্তি জাতি-ধর্ম- বর্ণ এমনকি আমি বলবো যে যেকোনো রাজনৈতিক দলের যেকেউই হোক, তার রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা যেমনই হোক, কেউ কখনো আমাকে আঘাত করার প্রচেষ্টাও করবেনা

বরং আমি এটা ভেবেই শক্তি পাই যে যারা আমাকে ভালবাসে তারা প্রত্যেকেই আমার রক্ষা করবে আর আপনাদের এই অপার বিশ্বাস এবং এই অটুট ভালোবাসার জন্যই আমি আজ একটি সিদ্ধান্ত নিতে চলেছি যে
সরকার দ্বারা আমাকে প্রদত্ত যে সরকারী সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সরকারী প্রোটোকল রয়েছে তা আমি (সারেন্ডার) ছেড়ে দিচ্ছি। কারণ আমি মনে করি যেকোন কারণে আমার এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে কোনো ধরনের ব্যবধান যেনো না থাকে।

আমি ততটাই আপনাদের কাছের লোক যতটা আপনারা আমাকে বুঝতে চাইছেন, আমাকে পেতে চাইছেন, আর যতটা আপনারা আমাকে আপনাদের সাথে এসে দাঁড়াতে দেখতে চাইছেন।

COVID-19 এর এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমি চাইছি যে আমার সুরক্ষার্থে যে অর্থরাশি খরচ হচ্ছে তা যেন জনগনের কল্যাণে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর যতটা সম্ভব আমাদের যোগদান করতে হবে আমাদের এই সমাজের জন্য কারণ আগামী দিনে আর্থিক ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রত্যেক ব্যক্তির সহভাগিতা খুব জরুরী।

যখন আমরা আত্মনির্ভর ভারতের কথা বলি এর তাৎপর্য হল প্রত্যেক ব্যক্তির সহযোগিতা করতে হবে কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজের প্রত্যেকটি ব্যাক্তি তাতে যোগদান না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতিতে সাকারাত্মক পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এই কারণেই আমি প্রশাসনের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করছি যে আমাকে প্রদত্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আন্তরিকভাবে সবাইকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন।”

প্রসঙ্গত, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী নেতা মানিক সরকারের স্ত্রী পাঞ্চালি সরকার নিরাপত্তারক্ষী ছাড়াই অতি সাধারণ অবস্থায় আগরতলা-সহ গোটা রাজ্যে ঘোরেন। বাম জমানায় মানিকবাবু দু’দশকেরও বেশি সময় মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও পাঞ্চালিদেবী নিরাপত্তা বলয়ের ঘেরাটোপে থাকতেন না। এতদিন সেটাই দেখে এসেছেন ত্রিপুরাবাসী। কিন্তু রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসতেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের স্ত্রী নীতি দেবের নিরাপত্তা বহর ছিল চমকে দেওয়ার মতো। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা থাকতেন তিনি। এবার সেই নিরাপত্তা তুলে নেওয়ার আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী স্বয়ং!

Previous articleলকডাউনে ঘরে বসে পেয়ে যাবেন আধার কার্ড, কেমন করে জানেন?
Next articleবয়সকে তুড়ি মেরে সত্তরেও দারুণ ফিট মোদি, রহস্য লুকিয়ে রান্নাঘরে