শীর্ষে ওঠার ক্ষমতা আছে নারীর, প্রয়োজন একটু সমর্থন

একবিংশ শতক। কিন্তু এখনও ক্ষমতার শীর্ষে নারীর অবাধ যাতায়াত নগণ্য। প্রশাসন থেকে সংবিধান- সব পদেই হয়তো মহিলাদের দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শতাংশের হারে সেটা খুবই কম। এমনকী, কোনও শিল্প সংস্থার উচ্চপদে, সরকারের উচ্চপদে বা শিল্পোদ্যোগী হিসেবে মহিলাদের সংখ্যা নেহাতই হাতেগোনা। অথচ স্কুলে তাদের উপস্থিতি যথেষ্ট চোখে পড়ার মতো। প্রতি বছর স্কুলবোর্ডের পরীক্ষায় মেয়েরা ছেলেদের প্রায় কাছাকাছি হারে পরীক্ষা দিচ্ছে। সাফল্য পাচ্ছে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সেই মেয়েদের উপস্থিতি আর নেই। CIIIWN আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে এই বিষয়টির উপরেই আলোকপাত করেন সংস্থার চেয়ারপার্সন সুচরিতা বসু। ‘ওমেন লিডারপ্রেনিয়রশিপ কনক্লেভ’ শিক্ষক ওয়েবিনার এই মন্তব্য করেন সুচরিতা বসু। ভার্চুয়াল এই সেমিনারে নিজেদের লড়াই এবং মহিলা হিসেবে কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা কথা শোনান।

 

প্রথম পর্বে রিয়া মজুমদার সিংঘল জানান, একেবারেই চাকুরীজীবী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, মা অধ্যাপিকা। সেই পরিবারে যখন তিনি নিজে ব্যবসা শুরুর কথা বলেন, তখন একটাই প্রতিক্রিয়া এসেছিল- এত ভালো চাকরি ছেড়ে ব্যবসা কেন! লেখাপড়ায় বরাবরই ভাল রিয়া তখন বিদেশে উচ্চপদে কর্মরত। কিন্তু সেখান থেকে এ দেশে ফিরে তিনি দেখলেন, প্লাস্টিক সামগ্রী হিসেবে এখানে যা বিক্রি হচ্ছে সেগুলি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আর সেই দেখেই ‘ইকো ওয়ার’ তৈরির চিন্তা তাঁর মাথায় আসে। তাঁর সামনে রাস্তা খুলে যায় 2010 কমনওয়েলথ গেমসে। সেখানে বরাত পেয়েই অর্গানিক প্রডাক্ট তৈরির বিষয়ে তাঁর সংস্থার নাম ছড়িয়ে পড়ে। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সুচরিতা বসুর প্রশ্ন ছিল, শিল্পোদ্যোগী বৌকে শ্বশুরবাড়ি কতটা সমর্থন করে? উত্তরে রিয়া জানান, তাঁর স্বামী ভালো চাকরি ছেড়ে এখন এই কোম্পানির সিইও। শাশুড়ি আছেন বৌমার পাশে। নিজের দুই ছেলে-মেয়েকে শিল্পোদ্যোগী হিসেবে দেখতে চান রিয়া।

অ্যাময়-এর পক্ষ থেকে সাগরিকা চক্রবর্তী জানান, মেয়েদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে তাঁর কোম্পানি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। এ বিষয়ে একটি কথা জানান সাগরিকা, অতিমারি পরিস্থিতিতে সবাই যখন ঘাটতিতে রয়েছে। তখন তাঁদের সংস্থার সুবিধে হয়েছে। কারণ তাঁরা অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পেরেছেন। ফলে যেমন কমেছে যাতায়াতের ঝামেলা, তেমন পরিবহন খরচ। আরও, বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পেরেছে। অ্যাময়-র এই রিজিওনাল ম্যানেজার সন্দীপ মুখোপাধ্যায় জানান, এই সংস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আলাদা করে পুঁজির প্রয়োজন হয় না। এই সংস্থার সামগ্রী বিক্রি করতে করতে নিজেরাই মালিক হয়ে উঠতে পারেন বিক্রেতারা। মহিলাদের ক্ষেত্রে এটাতে বিশেষ সুবিধা হয়।

 

পরের পর্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ডা কুণাল সরকার। প্রারম্ভিক ভাষণে তিনি বলেন, অতিমারি পরিস্থিতিতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে হাল ধরেছিলেন মহিলারা। দেশের প্রধানমন্ত্রী হোক সাহিত্য- সব জায়গায় মহিলাদের অবাধ বিচরণ।

ফেডারেল ব্যাংক সি ও ও শালিনী ওরিয়ার বলেন, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে মহিলাদের জনসংযোগের ওপর জোর দিতে হবে। অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং সহকর্মীদেরও মহিলাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

ইন্ডিয়ান অয়েলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইন্দ্রানী মাজির কথায়, মহিলারা হল চালিকাশক্তি। তারা এগনোর চেষ্টা করে। কিন্তু অনেক সময় পরিস্থিতি সহায়ক হয় না। এ বিষয়ে তিনি তাঁদের সংস্থার ‘বিদুষী’ প্রকল্পের কথা বলেন। জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেধাবী ছাত্রীদের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করা হয়।

টাটা ক্যাপিটাল-এর বিজনেস হেড কাশ্মীরা মেওয়াওয়ালা বলেন, অতিমারিতে মহিলারা পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছেন। তবে জীবনে এগোতে গেলে প্রথমেই তাঁদের জানতে হবে তাঁরা কী করতে চান। সেই লক্ষ্য স্থির রেখে এগোতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাড়ি এবং অফিস দুটোই একসঙ্গে সামলাতে পারে এ যুগের মেয়েরা। এতে প্রযুক্তি তাঁদের সাহায্য করে। রান্নাঘরে মাইক্রোওয়েভের ওপরে ল্যাপটপ রেখে কাজ করতে মহিলারা দক্ষ।

পিডব্লিউসি পদ্মজা আলগানন্দন বলেন, শ্রমের দিকে মেয়েরা নীচের সারিতে থাকলেও অর্থাৎ নীচুতলার কর্মী হিসেবে মেয়েরা থাকলেও, উচ্চপদে তাঁদের উপস্থিতির হার যথেষ্ট কম।

ইন্ডিয়া ক্যাপগেমি-র মুখ্য এইচআর পল্লবী ত্যাগী বলেন, মানব সভ্যতার নিয়মই হচ্ছে বিভিন্নতার মধ্যে ঐক্য। সেই অনুযায়ী সব দিক থেকে একটি সংস্থাকে চালাতে হয়। আর এই বিষয়ে মেয়েরা অত্যন্ত দক্ষ।

ওয়েবিনারের শেষে সুচরিতা বসু বলেন, CIIIWN মেয়েদের জন্য একটা প্লাটফর্ম দিয়েছে। এই বিষয় নিয়ে যত বেশি আলোচনা হয় ততই ভালো।

আরও পড়ুন- হাইকোর্টের রায়ে খুশি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো উদ্যোক্তারা

Previous articleহাইকোর্টের রায়ে খুশি সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো উদ্যোক্তারা
Next articleসাত দিনেই মামলার রায়, ধর্ষকের যাবজ্জীবন