এখনও ডাক আসেনি, ঢাক কাঁধে স্টেশনে অপেক্ষায় ঢাকির দল

বরাবরের মত সেই চেনা কলতান আর নেই। উৎসব চলছে ঠিকই তবুও চারপাশে ভিড় করে রয়েছে বিষন্নতার পাহাড়। এক ধাক্কায় সবকিছু বদলে দিয়েছে করোনা। নাক মুখ চেপে বসে রয়েছে দমবন্ধকারি বিরক্তিকর মাস্ক। আর থেকে থেকে স্যানিটাইজারের ঘষুনি। অদ্ভুত এক জীবনযাত্রার সঙ্গে হঠাৎ কেমন অভ্যস্থ হয়ে গেল গোটা পৃথিবী। কীভাবে আর কখন ভালোভাবে টের পেলেন না অনেকেই। আমুল এই পরিবর্তনের হিড়িকেই এবার বেহাল দশা উৎসবে দুটো পয়সার মুখ দেখা মানুষগুলির। পরিবর্তনের অংক ভালো করে না বুঝলেও সবকিছু যে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছেন তারা।

পেশায় চাষী হলেও পুজোর মরশুমে বাড়তি রোজগারের আশায় ঢাকি হয়ে যান বিমল পাত্র। প্রতিবার এসে ভিড় জমান শিলিগুড়ি স্টেশন চত্বরে। তবে এবার পরিস্থিতি বদলে গেছে। তিন দিন ধরে স্টেশনে অপেক্ষায় রয়েছেন কোনও বায়না আসেনি। অতঃপর কার্যত হতাশ হয়েই এবার গ্রামে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। একই হাল সুরেন মাইতিরও। তাঁর কথায়, ‘অপেক্ষাতে রয়েছি গত তিন দিন ধরে বায়না আসার। তবে কোনও বায়না আসেনি। লোকজনেরও ভিড় কম। কোনও আশা দেখছি না। যেসব মণ্ডপে চারজন করে ঢাকি নিত তারা এখন একজনের কাজ সারছে। অনেকে তো আবার ঢাকি ছাড়া ঢাকের ক্যাসেট বাজিয়েই পুজো সারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ তবে চিত্রটা শুধু শিলিগুড়ি নয়, শহর কলকাতাতেও।

আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে করোনা-অসুর বধে ‘ডাক্তার’ দেবী দুর্গা, ছবি শেয়ার করলেন শশী থারুরও

বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকির দল তৃতীয়া, চতুর্থীর দিনই হাজির হত শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে। সুরুচি, একডালিয়া বা চেতলা। বায়নার একটাই ঘাঁটি শিয়ালদহ। তবে চিরচেনা সেই স্টেশন চত্বর এখন বদলে গিয়েছে পুরোদমে। বন্ধ ট্রেন। ফলে বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া থেকে আসা সেই সমস্ত ঢাকির দলের পক্ষে শহরের পুজো মণ্ডপে আর বায়না নেওয়া সম্ভব হল না। এই পরিস্থিতির মাঝে যদি মন্ডপ না মেলে গাড়ি ভাড়া করে এসে সে ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়। এদিকে আদালতের রায়ের পর পুজোর আয়োজন এক ধাক্কায় কমিয়ে দিয়েছে মাঝারি থেকে ছোট পুজো উদ্যোক্তারা। অনেকে বায়না পেলেও গাড়ি ভাড়ার খরচ দেখে এবছর ঢাক বাজানোর পরিকল্পনা ছেড়ে দিয়েছেন পুরোপুরিভাবেই। যোগাযোগের অভাবে ঢাকির অমিল ও বাড়তি খরচ ছেঁটে ফেলে প্রযুক্তিতেই জোর দিয়েছেন শহরের বেশিরভাগ পুজো কমিটি। ক্যাসেটেই চলছে ঢাকের ধ্বনি। সব মিলিয়ে ম্লান মুখেই এবারের পুজোর শহর থেকে বহু দূরে বসে রইলেন ঢাকির দল। মায়ের বোধনের আগেই তাদের অভাবি গলায় সুর উঠেছে ‘আসছে বছর আবার হবে’।

Previous articleশিলিগুড়িতে করোনা-অসুর বধে ‘ডাক্তার’ দেবী দুর্গা, ছবি শেয়ার করলেন শশী থারুরও
Next articleছত্রধরের মতো গুরুংয়েরও সাত খুন মাফ হবে, বললেন ঈষৎ অসন্তুষ্ট দিলীপ