পুজোয় যাদবপুরে বামেদের বুকস্টল চারদশকের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী

একটা সময় বামেদের দুর্গ ছিল যাদবপুর। এই কেন্দ্র থেকেই বছরের পর বছর জিতে আসতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই যাদবপুরে এখন সিপিএমের পায়ের তলায় মাটি আলগা হয়েছে। তবুও যাদবপুরকে বামপন্থীদের অন্যতম পীঠস্থান বলা হয়।

এর যাদবপুরে পুজোর সময় সিপিএম তথা বামেদের বুকস্টল খুব জনপ্রিয়। এবার করোনা আবহের মধ্যেও ৮বি বাসস্ট্যান্ডের পাশে বুকস্টল করেছে বামেরা। গত চারদশকের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী তাদের এই বুকস্টল।

সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে সেই ইতিহাস তুলে ধরেছেন যাদবপুর অঞ্চলের জনপ্রিয় সিপিএম নেতা সুদীপ সেনগুপ্ত।

সুদীপবাবুর ফেসবুক পোস্ট থেকে তুলে ধরা হলো প্রায় ৪০ বছরের পুরনো যাদবপুরে বামেদের বুকস্টলের ইতিহাস।

সুদীপ সেনগুপ্ত লিখছেন,

“অবিভক্ত ঢাকুরিয়া টালিগঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন কমরেড বিমল চ্যাটার্জি। সেই সময় যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে ফুটপাথের ওপর অনেকটা জায়গা জুড়ে শুরু হয় এই বুকস্টল।

একেবারে ২০১২ সাল পর্যন্ত…
একটানা…
জায়গা বদল না হলেও কলেবরে বৃদ্ধি পায়…
তখন পার্কসার্কাস আর বাগবাজার দুইটি বড় স্টল…
অন্যান্য স্টলের পাশাপাশি একসময় যাদবপুর বুকস্টল অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হিসাবে নিজের জায়গা করে নেয়…

এর মধ্যে ঢাকুরিয়া টালিগঞ্জ জোনাল কমিটি ভাগ হয়েছে…
যাদবপুর বুকস্টল পরিচালনা করে ঢাকুরিয়া জোনাল কমিটি…
সম্পাদক কমরেড বাদল গুহ….

২০০৮ সালে ছাত্র আন্দোলন শেষ করবার পর পার্টি আমাকেও ঢাকুরিয়া জোনাল কমিটির সাথে যুক্ত করে দেয়….
২০১১ এর ডিসেম্বরে সম্মেলনে কমরেড বাদল গুহ দায়িত্ব ছাড়েন…
আমি ঢাকুরিয়া জোনালের মতো কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জোনাল কমিটির সম্পাদকের দায়িত্বে…!

সরকার মাথার ওপর…
প্রতিদিন আক্রমণ….
সাহস ভরে প্রতিরোধ করেন কমরেডরা…

কিন্তু ২০১২ এর পর আমাদের বুকস্টলের জায়গা জোর করে দখল করে নেয় পুলিশ প্রসাশনের সাহায্যে ওরা…
চেয়েছিলো বুলস্টল বন্ধ করেই দিতে..

আবার লড়াই..
সুদীপ্ত গুপ্ত স্মরণে বুকস্টল ২০১৩ সালে হলো একেবারে রড় রাস্তার ওপর…
আর সেই প্রথম বার বুকস্টলের বই বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল লক্ষাধিক টাকার বেশি…

২০১৪ তে আবার বাঁধা..
আগের বছর নাকি পুলিশ বুঝতেই পারেননি আমাদের কৌশল…
কিন্তু এইবার আর বড় রাস্তায় বুকস্টল হবে না..

আবার লড়াই…
দরকষাকষি তে আমরা বই এর স্টলের জায়গা দ্বিগুন করে নিলাম…
ঢুকে আসলাম যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডে…
অনেক কমরেড একটু মুষড়ে পড়লেন…
তারপর ২০১৪ তে বুকস্টল হলো এক বিশালাকৃতির…
কমরেড লেনিনের স্ট্যাচুর সামনে…
বড় রাস্তা থেকে মাঝে কোনো বাঁধা না থাকায় দূর থেকে নজর কাড়লো আমাদের স্টল…
পুলিশ আবার বোকার মতো তাকিয়ে দেখলো এক বিরাট লালকেল্লা যাদবপুর দখল করে নিয়েছে যেন…

সেই ২০১৪ থেকে এই বছর এক জায়গায় এক ভাবে আমাদের ভালো-বাসা যাদবপুর বুকস্টল চলছে…
মাঝে কমরেড অংশুতোষ খান হয়েছেন ঢাকুরিয়া জোনালের সম্পাদক…
আর এখন যাদবপুর এরিয়া কমিটি পরিচালনা করে এই স্টল…
সম্পাদক কমরেড বিষ্ণু ঘটক….
অসংখ্য কমরেড প্রতিদিন পালা করে এই স্টলে এসে দায়িত্ব পালন করে যান…

প্রতি বছর ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে…
বাড়ছে বই বিক্রির পরিমাণ…
নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে এগোচ্ছে যাদবপুর….

এইবার তিনদিকে কোলাপ্সেবেল গেট দিয়ে ঘেরা হয়েছে…
বই র‍্যাকের সংখ্যা কমেছে স্বভাবতই..
তা সত্বেও হাসপাতালে শুয়ে দেখছি কি অসাধারণ ভাবে স্টলটা সাজিয়েছে কমরেডরা…

আপনারা আসুন সকলে…
একবার দেখে যান দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাসের সাক্ষী…
আজ নাস্তিকদের, বই প্রেমী মানুষের পূজার কলকাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গন্তব্য স্থল…
যাদবপুর বুকস্টল….

পুজোর প্রতিদিন রাত ১০ টা পর্যন্ত খোলা ছিল…
খোলা থাকবে আগামী ২ দিন…

২০১২ থেকে অনেক ছবি দিলাম…
দেখবেন…
ভালো লাগবে….”

আরও পড়ুন-সৌমিত্রই থাকছেন যুব মোর্চার সভাপতি, তবে ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত পাকা

Previous articleসৌমিত্রই থাকছেন যুব মোর্চার সভাপতি, তবে ডানা ছাঁটার সিদ্ধান্ত পাকা
Next articleঅবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায়ের, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের জয়: দশেরার শুভেচ্ছাবার্তা সোনিয়ার