ত্বহার সঙ্গে কথা, ফুরফুরা শরীফের উন্নয়নে কয়েকশো কোটির মাস্টারপ্ল্যান

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ফুরফুরা শরীফের উন্নয়নে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করছে রাজ্য সরকার।এই প্রকল্পে কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তারা। ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করবে।কীভাবে এই মেগা প্রোজেক্ট এর কাজ হবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন মহকুমা শাসক ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শামীম আহমেদ।

উল্লেখ্য,ফুরফুরা দরবার শরীফের মুখ্য নির্দেশক পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর দাবি মতো ফুরফুরা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম একটা মেগা প্রোজেক্ট হাতে নিল রাজ্য সরকার।এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী তথা ফুরফুরা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম এর নির্দেশে ফুরফুরা শরীফ যান জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা।তাঁরা ফুরফুরা শরীফের উন্নয়ন কিভাবে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর সঙ্গে। মহকুমা শাসক সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ফুরফুরা শরীফের উন্নয়নে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। তবে তার আগে বেশ কিছু কাজ শুরু করা হবে। আগামী সালে ইসালে সওয়াবের আগে সেই সমস্ত কাজ শেষ করা হবে। যেমন ফুরফুরা শরীফ বড় দরবারে কংক্রিটের চাতাল তৈরি করা হবে। ফ্লোর টাইলস বসিয়ে এই পবিত্র জায়গার সৌন্দর্যায়ন করা হবে। হাইমাস লাইট বসানো, পুকুরপাড় বাঁধিয়ে তাকে সৌন্দর্যায়ন করে তোলা হবে ইত্যাদি। এর জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তারপর মাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজ করা হবে। যেমন ফুরফুরা শরীফের প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। এই প্রকল্পের ডিপিআর তৈরীর কাজ চলছে। এর জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এছাড়া ফুরফুরা শরীফের দুটি দরবারে ২৪ ঘন্টা পানীয় জল সরবরাহের জন্য দুটি রিজার্ভার তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তার ধারে যে সমস্ত হাইমাস লাইট, ট্রাইডেন্ট লাইট রয়েছে সেগুলি সংস্কার করা হবে। ফুরফুরা শরীফ জুড়ে ২৯ টি অজুখানা তৈরি হবে। যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে সাড়ে ৪ কোটি টাকা। আপাতত ১ কিমি নিকাশি নালার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া পূজা পর্যায় ক্রমে গোটা ফুরফুরা শরীফ জুড়ে আধুনিক মানের নিকাশি বন্দোবস্ত করা হবে। এছাড়াও কিছু নতুন রাস্তা তৈরি ও অজুখানার জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। ঢেলে সাজানো হচ্ছে ফুরফুরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে।তাকে আধুনিক মানের হাসপাতালে উন্নীত করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালেই থাকবে ৩০টি শয্যা। থাকবে ২৪ ঘন্টার জন্য চিকিৎসা পরিষেবার বন্দোবস্ত। ফুরফুরা উন্নয়ন পর্ষদ এলাকার যে সমস্ত রাস্তা ভেঙে গেছে সেগুলি সংস্কারের জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওয়াই এম এ ক্লাবের গ্যালারি তৈরির কাজ চলছে। এলাকায় খেলাধুলোর মান বাড়ানোই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য। ফুরফুরার প্রস্তাবিত বাসষ্ট্যান্ড তৈরীর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সঙ্গে ফুরফুরা শরীফের যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।

ফুরফুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শামীম আহমেদ জানান, জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তারা পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন কোথায়, কিভাবে উন্নয়ন কাজ হবে। ঈসালে সওয়াবের আগেই ফুরফুরা শরীফের উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ফুরফুরা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি মাস্টার প্ল্যান তৈরীর কাজ হাতে নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক লড়াই করে আমি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ফুরফুরা শরীফের উন্নয়নের জন্য ফুরফুরা শরীফ উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করেছিলাম। রাজ্য সরকার ফুরফুরা শরীফের উন্নয়ন করতে আন্তরিক। এ বিষয়ে আমার সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে একাধিকবার কথা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় রাজ্য সরকার ফুরফুরা শরীফকে যেভাবে সাজাতে চাইছে তাদের সেভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ঘুরিয়ে রাজ্য সরকারের বদনাম করছেন কয়েকজন। মানুষের কাছে খারাপ বার্তা দেওয়ার জন্য তারা এ কাজ করছেন। অথচ তারাই সরকারের দেওয়া হাইমাস লাইট, পানীয় জল নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করছেন। আর যখন সর্বসাধারণের জন্য তৈরীর পরিকল্পনা হচ্ছে তখন সেই সমস্ত ব্যক্তিই বিরোধিতা করছেন। আমি মনে করি চেঁচিয়ে নয়, আলোচনা করে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিতে হবে। সরকার যদি সত্যিকারের উন্নয়ন করে তাদের তো সমর্থন করতেই হবে। আর যদি উন্নয়ন না করে বিরোধিতা করুন।তা না করে, সরকার চাইছে উন্নয়ন করতে, তা করতে না দিয়ে বিরোধিতা করে সরকারের বদনাম করবো কেন! সংকীর্ণ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সামগ্রিক স্বার্থ বড় করে না দেখলে যেই সরকার থাকবেই সরকার থাকুক না কেন উন্নয়ন কোনদিন সম্ভব নয়। ফুরফুরার নতুন বাড়ির উন্নয়নে রাজ্য সরকারের বরাদ্দ কত জানতে চাইলে পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী বলেন, রাজ্য সরকার চেয়েছিল নতুন বাড়ির উন্নয়ন করতে। কিন্তু আমি তা চাই নি। আমি প্রশাসনের আধিকারিকদের পরামর্শ দিয়েছি বড় এবং ছোট দরবার সহ অন্য জায়গায় উন্নয়ন করতে। নতুন বাড়ির উন্নয়নে এখন পর্যন্ত রাজ্য সরকার কত অর্থ দিয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজ্য সরকারের কোনো অর্থ নতুন দরবারের উন্নয়নে নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন- ২ নভেম্বর থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু, বিজ্ঞপ্তি জারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের

Previous article২ নভেম্বর থেকে স্নাতকোত্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু, বিজ্ঞপ্তি জারি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের
Next articleবিহারে দুর্গা বিসর্জনে পুলিশের লাঠিচার্জে মৃত চার বাঙালি, মমতা নীতিশকে চিঠি বাংলাপক্ষের