Friday, November 7, 2025

করোনার জের, পরীক্ষা ছাড়াই পাসের দাবিতে সরব পড়ুয়ারা

Date:

Share post:

খায়রুল আলম: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স চতুর্থ বর্ষের (শেষ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা) দুই লাখের বেশি শিক্ষার্থী শিগগিরই ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারির আগে অনুষ্ঠিত পাঁচটি পরীক্ষার ভিত্তিতে ফল প্রকাশের দাবি জানান তারা।

অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীই বাকি পরীক্ষাগুলো ছাড়াই পাসের দাবি করেছেন। প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর অনেকে পরীক্ষা ছাড়া পাসের দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও সরব হয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়ার পর ফল প্রকাশের চিন্তা-ভাবনা করছে। তবে কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে, আর কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার সুনির্দিষ্ট কোনও নির্দেশনা দেয়নি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের সেশন শেষ হয়েছে জুলাইতে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সব বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে এতদিনে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতো। তাদের বক্তব্য, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ লাখ ছাত্রছাত্রী সবাই বর্তমানে অবহেলিত হয়ে সময় পার করছেন। কিন্তু তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকাচ্ছে না। বয়স তো আর থেমে থাকবে না। এ কারণে সব বর্ষের ছাত্রছাত্রীর পরীক্ষা ছাড়াই পাসের দাবি করছে তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ বর্ষে দুই লাখের বেশি ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ১৭ মার্চের আগে পাঁচটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। তাদের আরও চারটি লিখিত পরীক্ষা বাকি আছে। এই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—এখন আমাদের পরীক্ষাও নিচ্ছে না, আর পাঁচটি বিষয়ের রেজাল্টও দিচ্ছে না। উপাচার্য বলেছিলেন, এইচএসসি বিনা পরীক্ষায় পাস করালে আমাদেরও পাস করানো হবে। এখন উনি পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া রেজাল্ট দেওয়া যাবে না বলছেন। আর কলেজও নাকি শীতের মরশুমের আগে খুলবে না।

নাম প্রকাশ না করে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, এখন আমরা বিপদে পড়ে গেছি। টিউশনি বন্ধ, সার্টিফিকেটের জন্য চাকরি করতেও যেতে পারছি না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে মা-বাবা নিয়ে সংসার চালাতে হয় আমাদেরই। ওষুধ কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারি না এখন। আমাদের সঙ্গে যারা মাদ্রাসা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছিল, তারা সার্টিফিকেট পেয়ে গেছে। অন্যদিকে আমরা কোথাও আবেদন করতে পারছি না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাতেও অংশ নিতে পারছি না। এ অবস্থায় দ্রুত পরীক্ষা ছাড়া পাস করানো হোক পড়ুয়াদের।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে জানান , ‘অনার্স চতুর্থ বর্ষের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পাঁচটি পরীক্ষা হয়েছে। চারটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি আছে। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষার তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও বাকি রয়েছে। মূলত তাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে— যেসব পরীক্ষা হয়েছে তার ভিত্তিতে ফলাফল দিতে হবে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান হচ্ছে—অর্ধেক রাস্তায় এসে যদি বলেন, পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হোক।
তাহলে অসম্পূর্ণ ফল নিয়ে না পারবেন বিদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে, আর চাকরির জন্য আবেদন করলে চাকরিদাতারা জানবেন যে আপনারা সব বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে আসেননি। তাহলে শিক্ষার্থীদের জন্য হিতে বিপরীত হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য পার্মানেন্ট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। যে কারণে তাদের উদ্দেশে বলেছি ধৈর্য ধরতে। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বাকি পরীক্ষাগুলো নিয়ে ফলাফল ন্যূনতম সময়ের মধ্যে দেবো। ’

প্রসঙ্গত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আড়াই থেকে তিন বছরের জন্য সেশন জট অব্যাহত ছিল বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে। ধীরে ধীরে তা কমিয়ে আনা হয়। করোনা মহামারির আগে পর্যন্ত সেশনজট পুরোপুরি শেষ করে নির্ধারিত সময়ে সব পরীক্ষা ও ফলাফল নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণার পর নতুন করে প্রায় আট মাস সেশনজটে পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের অনার্স শেষ করতে ছয়-সাত বছর পর্যন্ত লাগতো। আমি ২০১৩ সালে আসার পর সেশনজটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছি, এটা থেকে কীভাবে উত্তরণ করা যায়। গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিই। এবার করোনা মহামারি না হলে ২০১৯ সালের পরীক্ষা ২০১৯ সালেই হতো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি অকল্পনীয় ছিল।’

আরও পড়ুন: ‘হিন্দুস্তানকো ঘুসকে মারা’, পুলওয়ামা হামলার দায় স্বীকার করে গর্ব পাক মন্ত্রীর!

উপাচার্য আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমরা কয়েক মাস পিছিয়ে গেছি। তবে আমাদের পরিবেশ যদি অনুকূল হয়, তাহলে কয়েক মাস পিছিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়। কারণ, নতুন করে কিছু করতে হবে না। নতুন করে প্রশ্ন করতে হবে না। আমরা ফলাফল ম্যান্ডেটরি করেছি। ফল তিন মাসের মধ্যে দিতে হবে।’

spot_img

Related articles

একটি কঙ্কালের অসম্পূর্ণ প্রেমকাহিনি

জয়িতা মৌলিক ১২৯৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) লেখা 'কঙ্কাল' ছোটগল্পটির মঞ্চনাট্যরূপ দেখলাম ১৪৩২ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে,...

KIFF: চলচ্চিত্র উৎসবের প্রথম দিনেই সত্যজিৎ স্মরণ, নন্দনে শ্রদ্ধার্ঘ্য ঋত্বিক ঘটককে

মহানগরীতে সিনে উৎসবের মেজাজ, শুরু হয়ে গেল ৩১-তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (31st Kolkata International Film Festival)। বৃহস্পতিবার...

রাজারহাটে যাত্রীবোঝাই বাস উল্টে দুর্ঘটনা, আহত বহু

শুক্রবার সাত সকালে রাজারহাটের হাড়োয়া খালি উল্টে গেল যাত্রীবোঝাই বাস (Bus Accident in Rajarhat)। বেড়াচাঁপার দিক থেকে করুণাময়ীর...

আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনের একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগের ফলপ্রকাশ

সুপ্রিম রায়ে চাকরি হারানো থেকে এসএসসির (School Service Commission) নতুন করে পরীক্ষার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এবার রেজাল্টের...