Wednesday, November 26, 2025

করোনা আবহে অ্যাডিলেডের দুর্গাপুজোই একটুকরো কলকাতা

Date:

Share post:

শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়, অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা

দুর্গাপুজো যেকোনো বাঙালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। কলকাতার বাইরে জীবিকার সন্ধানে থাকতে গেলে, প্রথম যে কথাটা মাথায় আসে তাহলে এখানে দুর্গাপুজো হয়তো? প্রায় ১৪ বছর ধরে আমি প্রবাসী। ভারতের বিভিন্ন শহরে থেকেছি। আপাতত দেশের বাইরে; অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। স্বামীর সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কন্যা সৃষ্টিকে নিয়ে রয়েছি গত তিন বছর ধরে। বছরের অন্য সময় না হোক, ফেলে আসা শৈশবের কথা মনে পড়ে দুর্গাপুজোর সময়। তবে যেখানে বাঙালিরা আছেন, সেখানে একটা দুর্গাপুজো হবেই। আর সেই পুজো ভুলিয়ে দেয় জন্মভূমি থেকে বহু দূরে থাকার কথা।

 

আমাকে অ্যাডিলেডে বিসিসিএএ একটি মিনি বেঙ্গল। ১৯৯৯ সালে মাত্র ১০ জনকে নিয়ে এই সংগঠন স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মিতু চৌধুরী। এদের আয়োজিত দুর্গাপুজো একটা নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা বাঙ্গালীদের কাছে।

করোনা আবহে বাইরে দেশের মতোই এখানেও নিয়মের কড়াকড়ি। সে কারণে অস্ট্রেলিয়ার অনেক শহরেই অনলাইনে পুজো উদযাপন করতে হয়েছে। অ্যাডিলেড ভাগ্যবান যে অন্যান্য বছরের মতোই এবারও পুজো করা গিয়েছে আমার মা এবং দাদা থাকেন মেলবোর্নে। কিন্তু পুজোর সময় আমি উমার মতো বাপের বাড়ি যেতে পারিনি এবার। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে মেলবোর্নের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেখানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ফলে সীমানা বন্ধ রয়েছে। তাই অ্যাডিলেডে পুজো কাটিয়েছি আমরা।

আরও পড়ুন- বাংলা আল-কায়দার বিচরণ ভূমি! রাজ্যপালের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ কংগ্রেসের

আমার কন্যা সৃষ্টি বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দুর্গাপুজোর গানে বন্ধুদের সঙ্গে পা মেলাচ্ছিল তখন আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম শৈশবে। যেখানে মাইকে গান বাজলেই বন্ধুরা মিলে পুজো মণ্ডপের সামনে চলত দেদার নাচ।

এখানে বসবাসকারী এক বাঙালি পুজোয় পৌরোহিত্য করেন। এখানে দুর্গা ষষ্ঠীর পুজোটা হয় স্থানীয় একটি গণেশ মন্দিরে। এবারও তাই হয়েছে। সেদিন মন্দিরে অন্য পুণ্যার্থীদের প্রবেশ নিষেধ। আমরা সেখানে গিয়ে ষষ্ঠীর পুজো করি।

সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজো হয়েছে একই দিনে। অঞ্জলি দিয়েছি আমরা। আর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উদ্যোক্তা রিমা এবং অন্যান্যদের ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা অনুষ্ঠান আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।

তবে সবার সঙ্গে বসে খাওয়া যায়নি এবার। কারণ নিয়মের কড়াকড়ি ছিল। তাই ফুড প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। দশমীর দিন সিঁদুর খেলা হয়েছে রীতি মেনেই; দূরত্ব বজায় ছিল। তবে তাইতে আবেগের কোন খামতি ছিল না। ভোগের তালিকাতেও যা ছিল সেটাও কলকাতার পুজোর কথাই মনে করায়। খিচুড়ি থেকে পায়েস বাদ যায়নি কিছুই। পুজো হবে, ঢাক বাজবে আর ডিজাইনার পোশাক হবে না- তা কি হয়? আমরা কর্তা-গিন্নি বেশ রং মিলিয়ে পোশাক পরেছিলাম। পুজোর ক’দিন শাড়ি, ধুতি-পাঞ্জাবিই প্রবাসী বাঙালিদের পছন্দের তালিকায় নম্বর ওয়ান। সৃষ্টি বা তার বন্ধুরাও এই সময়টা ভারতীয় পোশাক পরতেই ভালোবাসে। পুজোর ক’দিন মাস্ক পরে বেশ খোলা মনে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিলাম। কারণ, এখানে এখন সংক্রমণ নেই। এক দুরন্ত অভিজ্ঞতা হল। আশা করি মা দুর্গার কৃপায় পরের বছর কোভিড ফ্রি পুজো কাটাব আমরা। তবে করোনা পরিস্থিতি একটা জিনিস শিখিয়েছে আমাদের যা আছে তাই নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আনন্দে জীবন কাটানো উচিত।

 

spot_img

Related articles

ভেরিফিকেশন পর্ব শেষ: বৃহস্পতিবার শুরু এসএসি-র ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ডিসেম্বরের মধ্যে এসএসসি-তে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে সব পদক্ষেপই নিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর...

চুক্তিভঙ্গ, যাত্রাভঙ্গ: হেলিকপ্টার সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের

মুখ্যমন্ত্রীর মতুয়া গড়ে যাওয়া নির্দিষ্ট থাকলেও তাতে কী গুরুত্ব দেয়নি হেলিকপ্টার সংস্থা? শেষ মুহূর্তে তাদের বিমার সমস্যায় হেলিকপ্টারে...

কীভাবে SIR চক্রান্ত বাংলায়: বিজেপিকে তোপে বনগাঁ থেকে বোঝালেন মমতা

এসআইআরের নামে এনআরসি করার চক্রান্ত চলছে! এমনই তোপ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বনগাঁর জনসভা থেকে তিনি অভিযোগ করেন,...

মন্দিরবাজারের সভা থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ তৃণমূলের, শুভেন্দুকে কটাক্ষ সুদীপের

দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারে তৃণমূল কংগ্রেসের সভায় রবিবার জনস্রোত চোখে পড়ার মতো। সভার নেতৃত্বে ছিলেন তৃণমূলের মুখপাত্র সুদীপ...