১০০০ ছক্কার মালিক গেইল এখন টি-টোয়েন্টিতে ইউনিভার্সাল বস

অবিশ্বাস্য! টি-২০ ক্রিকেটে ১০০০টি ছয় মারার রেকর্ড গড়লেন ক্রিস গেইল। বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি এই নজির গড়লেন। আইপিএলের ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ৮টি ছয় মেরে এই রেকর্ডের মালিক হলেন এই ক্যারিবিয়ান তারকা। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তাঁরই স্বদেশীয় কায়রন পোলার্ড। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৬৯০টি ছয়। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। তিনি মেরেছেন ৪৮৫টি ছয়। একমাত্র ভারতীয় হিসেবে এই তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন রোহিত শর্মা। তিনি এ পর্যন্ত ৩৭৬টি ছয় মেরেছেন।

আরও অদ্ভুত বিষয়, টি-টোয়েন্টিতে গেইলের এখনও পর্যন্ত মোট রানসংখ্যা ১৩,৫৭২। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক রানই তিনি করেছেন ছক্কা মেরে! বীরেন্দর সেহবাগ তাই টুইটারে কথাটা বলেই ফেলেন, “টি-টোয়েন্টির ব্র্যাডম্যান। কোনওরকম সন্দেহ ছাড়াই টি-টোয়েন্টিতে সর্বকালের সেরা ক্রিস গেইল। বিনোদনের বাপ।” আর কাল নিখুঁত ইয়র্কারে যিনি তাঁকে আবেগাপ্লুত করেন, সেই জফরা আর্চার টুইট, “এখনো তিনি বস—ইউনিভার্সাল বস।”

রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেতে আর ১ রান দরকার ছিল। আর্চারের ইয়র্কার তাঁর স্টাম্প ভেঙে দিতেই গেইল নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশায় ব্যাট ছুড়ে দেন মিড উইকেটের দিকে। ডাগআউট যাওয়ার আগে হাত মিলিয়েছেন আর্চারের সঙ্গে। ওপাশ থেকে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ব্যাট তুলে এনে তাঁর হাতে ধরিয়ে না দিলে গেইল হয়তো ব্যাট ছাড়াই ফিরতেন! আইপিএলের আচরণবিধি ভেঙেছেন ঠিকই কিন্তু মাঠে ওই ঘটনাটা দর্শক কিন্তু উপভোগ করেছেন, ক্রিকেট রীতি ও ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে গেইলকেই যেন এসব মানায়!

৮ ছক্কা ও ৬ চারে ৬৩ বলে ৯৯ রান। গেইলের সহজাত ইনিংস। তবে মজাটা অন্য জায়গায়। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরি সবার কাছে ভীষণ কাঙ্ক্ষিত হলেও গেইলের কাছে এলেবেলে হওয়াটা অসম্ভব কিছু না। ২২ সেঞ্চুরি সে কথাই বলে। সেঞ্চুরি সংখ্যায় তাঁর ধারে-কাছেও কেউ নেই। কিন্তু এই ৪১ বছর বয়সেও গেইলের এখনও কী তীব্র রানের খিদে, তার প্রমাণ কাল আউট হওয়ার পর গেইলের আবেগাপ্লুত হয়ে পড়া।

ছক্কা মারায় গেইলের ধারেকাছে আর কেউ নেই—এ কথাটা বুঝিয়ে দেবে একটি পরিসংখ্যান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কাইরান পোলার্ডের ছক্কাসংখ্যা ৬৯০। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৪৮৫)। পার্থক্যটা খালি চোখেই পরিষ্কার। গেইল নিজেও খুশি, “এক হাজার ছক্কা—আরেকটি রেকর্ড? শুধু ধন্যবাদ দিতে চাই। এই ৪১ বছর বয়সেও ভালো মারতে পারায় ধন্যবাদ জানাতে চাই। বছরের পর বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের ফল পাচ্ছি। এখনও খেলছি, একই কাজ করে যাচ্ছি একইভাবে, কৃতজ্ঞ।”

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ছক্কা হাঁকান গেইল। সাধারণত ছক্কার চেয়ে চারের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে ব্যাটসম্যানদের। গেইলের ক্ষেত্রে হিসেবটা আলাদা। তিনি চারের চেয়ে ছক্কা মারতে বেশি ভালোবাসেন, তাই মাত্র ৪০টি ছক্কা পিছিয়ে আছেন চারের সংখ্যার (১০৪১) চেয়ে। গেইলকে ‘টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা’ বলাটাও যথার্থ। বরং আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায় টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা মারার ফেরিওয়ালা—আইপিএলে সর্বোচ্চ ৩৪৯ ছক্কা মেরেছেন, যেটি বিশ্বের যে কোনও টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কোনও ব্যাটসম্যানের মারা সর্বোচ্চসংখ্যক ছক্কা। সিপিএল (১৬২), বিপিএল (১৩২) ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও (৬০) সর্বোচ্চ ছক্কা মারার রেকর্ড গেইলের।

আরও পড়ুন: ‘সোনোয়াল-মডেলে’ই কেন্দ্রে মন্ত্রী হতে চলেছেন দিলীপ ঘোষ, জোর জল্পনা

টি-টোয়েন্টি ম্যাচে গেইলকে একবার ছক্কা মারার নেশায় পেয়ে বসলে বোলারদের রক্ষা নেই। ম্যাচে ন্যূনতম ১০টি করে ছক্কা মেরেছেন ১৮বার। অন্য কোনও ব্যাটসম্যান এমন তিনবারের বেশি করে দেখাতে পারেননি। কোনও শুধু একটি দলের (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু) হয়ে সর্বোচ্চ ২৬৩ ছক্কা গেইলের। এমনকি এখন যে দলে খেলছেন—কিংস ইলেভেন পঞ্জাব—তাদেরই ভুগিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। নির্দিষ্ট একটি দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ ছক্কা মেরেছেন গেইল, সেটি তাঁর এখনকার দল পঞ্জাবের বিরুদ্ধেই।

Previous articleপড়ুয়াদের পাঠ্যপুস্তক প্রদান থেকে স্কুল ছুট বন্ধ করায় দেশের মধ্যে এগিয়ে বাংলা
Next articleবৈষ্ণোদেবী ভক্তদের জন্য সুখবর, বাড়ানো হলো দর্শনার্থীদের সংখ্যা