Saturday, August 23, 2025

গুরুং–তামাং অনুগামীদের সংঘাতের আশঙ্কা এড়াতে হস্তক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রীর, নবান্নে তলব বিনয়-অনীতদের

Date:

Share post:

দেবীপক্ষে পঞ্চমীর দিন কলকাতায় বিমল গুরুংয়ের প্রেস কনফারেন্স করে তৃণমূল নেত্রীকে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার ঘোষণা দার্জিলিঙের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে. প্রভাব পড়েছে তরাই ও ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও। বিমল গুরুংপন্থীরা আসরে নেমেছে তাঁকে স্বাগত জানাতে। গুরুং ঢুকে পড়লে কোণঠাসা হওয়ার আশঙ্কায় রাস্তায় নেমেছেন বিনয় তামাং-অনীত থাপার অনুগামীরাও। দু-তরফের বিরোধের সুযোগ নিতে ছক কষছে বিজেপি সহ তৃণমূল বিরোধী দলগুলিও। তাই পাহাড় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বিনয় তামাং ও জিটিএ-এর কেয়ারটেকার চেয়ারম্যান অনীত থাপাকে ডেকে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী মঙ্গলবার নবান্নে বিনয়-অনীতের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

বস্তুত, বিধানসভা ভোটের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘সুপ্রিমো’ মেনে পাহাড়ে ফিরতে মরিয়া গুরুং৷ তামাং তা মানতে পারছেন না৷ আশঙ্কা করছেন ধাপে ধাপে এবার না প্রশাসনিক ক্ষমতাও হাতছাড়া হয়৷ ওদিকে স্টিয়ারিং নিজের হাতে নিয়ে পাহাড় থেকে বিজেপিকে উৎখাত করতে চাইছেন গুরুং৷ শাসক দলও জানে, পাহাড় রাজনীতিতে তামাংয়ের তুলনায় এখনও অনেক বেশি প্রভাবশালী বিমল গুরুং৷ ফলে, অশান্তির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বিমল গুরুং ও বিনয় তামাংয়ের দ্বৈরথ ঘিরে৷

কারণ, একসময়ে গুরুংয়ের অন্যতম সেনাপতি বিনয় তামাং আজ প্রশাসনিক সহায়তায় সেনাপতি থেকে রাজা হয়েছেন৷ কিন্তু, গুরুং আত্মপ্রকাশ করায় পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ যে পালটেছে, তা মানতে রাজি নন বিনয় তামাং৷ ফলে, বিমল-বিনয় অনুগামীদের সংঘাতের আশঙ্কা জোরদার হচ্ছে। অথচ, দু’ তরফেরই ‘সুপ্রিম’ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কোনও ধরনের সমঝোতায় এখনও রাজি হওয়ার ইঙ্গিত নেই তামাংয়ের তরফে৷ উল্টে পাহাড়জুড়ে ফিসফিস, পরিস্থিতি এমনই থাকলে, গুরুং পাহাড়ে ঘাঁটি গাড়লে বিনয় তামাং বিজেপির হাত ধরতে পারেন৷ তবে গুরুংপন্থীদের কয়েকজন জানান, যে সব মামলার জন্য গুরুংকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে তার অনেকগুলিতেই বিনয়ের নামও রয়েছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই অবস্থায়, মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে ডেকে পাঠালেন বিনয় তামাং আর অনীত থাপাকে।

এদিকে, গুরুংয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে মিছিল- মিটিংয়ে ধীরে ধীরে গরম হচ্ছে পাহাড়। ৩ বছর গা-ঢাকা দিয়ে থাকা বিমল গুরুং পঞ্চমীর দিন হঠাৎ পাহাড়ে ঢুকে পড়েন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করবেন, এই ঘোষণা করে তিনি রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে পড়েছেন৷ আর ঠিক তারপর থেকেই বিনয় তামাং–অনীত থাপা গোষ্ঠী বিমল গুরুংয়ের বিরোধিতায় নেমে পড়েছে৷ নানা বার্তা দিচ্ছে। আজ, শনিবারও গুরুং-বিরোধী মিছিল হয়েছে।

বিমল- বিনয় অনুগামীদের লড়াইয়ে পাহাড়ে যাতে ফের অগ্নিগর্ভ না হয়, সেই সুযোগ যাতে বিজেপি না নিতে পারে, সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগ। মমতা জানেন, বিনয় তামাং-অনীত থাপা’রা এখন বিমল গুরুংকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন৷ তাই পাহাড় জুড়ে বিমল বিরোধী হাওয়া তোলা শুরু হয়েছে। যদিও বিমলকে ইতিমধ্যেই বার্তা দেওয়া হয়েছে, পাহাড়ের প্রশাসনিক প্রধান অনীতই থাকবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বেশি গুরুত্ব পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখা, তাই তিনি বিবাদমান এই দুই গোষ্ঠীকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টাই করছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তার প্রথম ধাপ হিসেবেই সম্ভবত বিনয় তামাংকে নবান্নে ডেকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সে জন্য বুধবারই বিনয়-অনীতদের নবান্নে যাওয়ার দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হয়। যা কি না গত বৃহস্পতিবার এখন বিশ্ববাংলা সংবাদ প্রথম জানিয়েছিল।

আরও পড়ুন- না শোধরালে ‘মরণযাত্রা’ বের হবে, লাভ জেহাদ প্রসঙ্গে হুঁশিয়ারি যোগীর

spot_img

Related articles

সঠিক পরিকল্পনাই ডায়মন্ডহারবারের সাফল্যের চাবিকাঠি, মনে করছেন আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়

মাত্র তিন বছরের ক্লাব। কিন্তু কী অসাধারণ সাফল্য। কলকাতা লিগ, আইলিগ থ্রি থেকে আইলিগ টু জিতে এবার আইলিগের...

অসংগঠিত শ্রমিক-ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে বাংলা: সাহায্য পেলেন ৭২০ শ্রমিক

একের পর এক নতুন প্রকল্প, অসংগঠিত শ্রমিকদের দাবিদাওয়া নিয়ে লাগাতার আলোচনা, তাঁদের পরিবারের প্রতি নজর রাখার ব্যাপারে তৎপর...

প্রাপ্য চায় বাংলা, উপহার না: মোদিকে জবাব তৃণমূলের

বাংলার মানুষ উপহার চায় না, প্রাপ্য চায়। উপহার দিয়ে বাংলার মানুষকে অপমান করবেন না। বাংলায় বরাদ্দ নিয়ে শুক্রবার...

অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ শাহ, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মোদির: কটাক্ষ তৃণমূলের

অনুপ্রবেশ ইস্যুকে বার বার জাগিয়ে তুলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আদতে নিজেদের ভুল নিজেরাই চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।...