মোদির ‘আত্মহননকারী ট্রাম্পপ্রীতি’, ভুগতে হবে গোটা দেশকে, অভিজিৎ ঘোষের কলম

অভিজিৎ ঘোষ

‘আব কি বার, ট্রাম্প সরকার।’

ঠিক এক বছর আগে হিউস্টনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদির স্লোগান। হাউডি মোদি!

এখন ২০২০-র নভেম্বর। কোন স্লোগান দেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী?

পৃথিবীর কাছে দেশের ছবিটাই পাল্টে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি… বিজেপির নেতা-নেত্রীদের মুখে লেগে থাকে ক্লিশে হওয়া এই ডায়লগ। প্রশ্ন, এখনও স্লোগানটা চলবে তো? নাকি হিউস্টনের ওই ভিডিও ডিলিট করার নির্দেশ দেওয়া হবে বিজেপির মিডিয়া সেলকে?

বিদেশ নীতি মানে ভারসাম্যের নীতি। অতিরিক্ত মার্কিন অনুগ্রহ পাওয়ার আশায় মোদি চালিয়ে খেলেছিলেন। আসলে ২০১৯-এ দেশে বিরাট জয়ের পর মোদির ধারণা হয়েছিল, তিনিই ভারতবর্ষ। ভেবেছিলেন, এসব করলে দু’দেশের বানিজ্যে ভারত বোধহয় অগ্রাধিকার পাবে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে তিনি নয়া ইতিহাস তৈরি করবেন। কিন্তু অভিবাসন নীতি থেকে এশীয় নীতি, কিংবা অ-মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুযোগ ছেঁটে ফেলার কাজ অবলীলায় করতে থাকেন ট্রাম্প, সঙ্গে হুমকির রাজনীতিও। সেটা কোভিডের মধ্যবর্তী সময়। হুমকি দিয়ে দাবি আদায়ে চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন ট্রাম্প। কয়েক কোটি ক্লোরোকুইন রাতারাতি ভারত থেকে আমেরিকায় পাঠাতে বাধ্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। মোদি তখন যেন বাধ্য ছাত্র।

কিন্তু ভারতের কী লাভ? বিগ জিরো।

জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ডেমোক্র্যাটরা যদি আজ বলে, মিস্টার মোদি, আপনাকে প্রায়োরিটি দেব কেন? আপনার বাজি ছিল তো ডোনাল্ড ট্রাম্প? কী বলবেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর? যদি হোয়াইট হাউস কাল থেকে ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান আর চিনকে সহানুভূতির চোখে দেখতে শুরু করে, তাহলে? তিব্বত, কাশ্মীর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা সব ঠিকঠাক রাখা সম্ভব হবে তো!

মোদি যদি ভেবে থাকেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ত্রাতা হিসাবে পাবেন, তাহলে ভুল ভেবেছেন।দেশ চালাবে ডেমোক্র্যাটরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই যে আত্মহননকারী ট্রাম্পপ্রীতি, তার জের তো বইতে হবে ভারতবাসীকে। অবাক করা বিষয়, আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে নাক গলাননি। মোদি সেই ‘মহান কাজ’টি করে অস্ত্র তুলে দিলেন বিডেন প্রশাসনের কাছে। ভাবনাটা ছিল এইরকম, দেখো ভারতবাসী, মোদির ভারত এতটাই এখন শক্তিশালী যে, আজ তারা মার্কিন দেশের ভোটেও মাথা গলানোর সাহস রাখে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দিতে আহ্বান ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের।

এবার কী করবেন? শুকনো মুখে শুভেচ্ছা তো পাঠিয়েছেন দামোদরভাই। কিন্তু তাতে ৭৭ বছরের পোড় খাওয়া ডেমোক্র্যাটের মন গলবে? যদি না গলে তাহলে এ দেশের কপালে রয়েছে অশেষ দুর্গতি।

Previous article‘ভারত থেকে এসে উনি হয়ত কল্পনাও করেননি’, মাকে স্মরণ উপরাষ্ট্রপতি কমলার
Next articleমধ্যপ্রদেশে ঘুরে বেড়াতো ডাইনোসর! মাটির নীচে মিলল জীবাশ্মে পরিণত হওয়া ৭টি ডিম